রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০২:২৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা:বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : শুক্রবার, ২ এপ্রিল, ২০২১
  • ১৫১ Time View
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে বঙ্গবন্ধু কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছেন, বিশ্বকবি, তুমি বলেছিলে, ‘সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী,/ রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ কর নি।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, তুমি দেখে যাও, তোমার আক্ষেপকে আমরা মোচন করেছি। তোমার কথা মিথ্যা প্রমাণিত করে আজ সাত কোটি বাঙালি যুদ্ধ করে রক্ত দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছে। হে বিশ্বকবি, তুমি আজ জীবিত থাকলে বাঙালির বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে নতুন কবিতা সৃষ্টি করতে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একজন নেতাই নন; একটি চেতনা, একটি অধ্যায় এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি আমাদের জাতির পিতা। ১৭ মার্চ ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এই বছরে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুর হৃদয় হোক রঙিন’। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত সময়কে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনায় সময় পেয়েছিলেন মাত্র সাড়ে ৩ বছর। যুদ্ধবিধ্বস্ত জাতিকে গড়ে তোলার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন তিনি। এ সময়ে ১২৬টি দেশ কর্তৃক বাংলাদেশের স্বীকৃতি প্রদান এবং জাতিসংঘ, ওআইসিসহ ২৭টি আন্তর্জাতিক বড় বড় সংস্থার সদস্যপদ অর্জন বঙ্গবন্ধু সরকারের বিশেষ সফলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন শক্তিশালী ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তাঁর দেওয়া পররাষ্ট্রনীতির মূল দর্শনই ছিল- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়; বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান এবং জোটনিরপেক্ষ সহাবস্থান। তাই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর চলমান কর্মসূচি ও অনুষ্ঠানমালায় স্বতঃস্টম্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে একজন বিশ্বনেতাকে স্মরণ করছেন বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ সফরের ঠিক আগের দিন ২৫ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু গত শতাব্দীর অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিলেন; যার জীবন এবং আদর্শ লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর সমাধিতে যাওয়ার অপেক্ষা করছি।’ এর আগে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে এক ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা জানান কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেন, ‘আমরা আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে পারছি; কারণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন। নেতা বা নাগরিক হিসেবে যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের এমনই হওয়া উচিত।’
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আজ বাংলাদেশ আলোচিত ও প্রশংসিত একটি নাম। বৈশ্বিক করোনা মহামারির মধ্যে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়লেও বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এগিয়ে যাওয়ার স্বীকৃতি মিলেছে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) থেকে। সংস্থাটি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশকে বের হয়ে যাওয়ার সুপারিশ করেছে।
প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও ভিয়েতনামের উন্নয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের মিল রয়েছে। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও মানবসম্পদ উন্নয়নের দীর্ঘ যাত্রায় ২০০৯ থেকে বর্তমান পর্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ-পরিক্রমা। আর এটি সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুতনয়া ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার এক অনবদ্য রসায়নে। ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে বাংলাদেশের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা সন্দেহাতীতভাবে জাতির পিতার লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়নেরই বহিঃপ্রকাশ। ‘সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দমাতে পারবে না’- বঙ্গবন্ধুর এই দৃপ্ত ঘোষণা আজ যেন সত্যিই প্রমাণিত ও কোটি বাঙালির হৃদয়ে অনুরণিত। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের সফলতার স্টম্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে যাবে- সে প্রত্যাশা করা যেতেই পারে।
সম্পাদকীয় ও মন্তব্যঃ
মিথিলা সিকদার, তৌফিক-ই-ইলাহী ও ফিরোজা আশরাবী
লেখকবৃন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category