শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
জাতির পিতার সমাধিতে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন প্রতিবন্ধীদের মূল ধারায় আনার প্রচেষ্টা আছে সরকারের : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান আন্তজার্তিক পর্যায়ে বাংলাদেশ পুলিশ আর্চারি ক্লাবের স্বর্ণ জয় কিশোর গ্যাং এর প্রধান ডাকাতি মামলার আসামী গ্রেফতারের নিউজ করায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা মির্জাপুরে আল-হিদায়াহ সংগঠনের উদ্যোগে ভেঙ্গে যাওয়া ব্রীজ সংস্কার সিংড়া বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের আগুনে ১৩টি দোকান ভূস্মীভূত থাই পিএমও-তে প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ আন্তরিক অভ্যর্থনা গ্রাহকের অর্ডারের অ্যাপল পণ্য যেভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন স্ক্যামাররা নালিতাবাড়ীতে বন্যহাতির আক্রমণে কৃষকের মৃত্যু

আজ পাই দিবস ও বিজ্ঞানীদের জন্ম-মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আলেকিত জনপদ
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০২৪
  • ১০৮ Time View
স্টিফেন হকিং

আজ পাই দিবস। একই সঙ্গে সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের জন্মদিন এবং আমাদের কালের নায়ক স্টিফেন হকিংয়ের মৃত্যু দিবস। দুজনের মধ্যে সংযোগ কি শুধু এতটুকুই? নাকি মহাজাগতিক আরও কোনো সংযোগ, কিংবা কোনো রহস্য

স্টিফেন হকিং। পরপারে চলে গিয়েছেন ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ। বয়স যখন ৭৬। যদিও চিকিৎসক বলেছিলেন, মারা যাবেন মাত্র ২০ বছর বয়সে।

বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের জন্ম-মৃত্যুতে কেন যেন একটা ধারা খুঁজে পাওয়া যায়। এই যে হকিংয়ের মৃত্যু, দিনটি আবার আরেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের ১৩৯তম জন্মবার্ষিকী। শুধু কি তা–ই? হকিংয়ের জন্ম হয়েছিল আরেক নামকরা বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর ৩০০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে। আইনস্টাইনের জন্ম ১৪ মার্চ, ১৮৭৯। এই ১৪ মার্চ তারিখটা আবার আরেক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি যে পাই দিবস! কারণ তর্ক সাপেক্ষে গণিতের সবচেয়ে মজার ধ্রুবক পাইয়ের অঙ্কগুলো হলো ৩.১৪১৫৯২৬…। সংখ্যাটির অঙ্কগুলোর প্রথম ৩-কে তৃতীয় মাস আর ১৪–কে ১৪ তারিখ ধরে মার্চ মাসের ১৪ তারিখটি বিশ্বব্যাপী পাই দিবস হিসেবে পালিত হয়।

আইনস্টাইনের জন্মদিনে মারা গেলেন হকিং। দুজনের মধ্যে সম্পর্ক কি শুধু এটুকুই? আইনস্টাইন দিয়ে গিয়েছিলেন সাধারণ আপেক্ষিকতা। মহাবিশ্বকে বড় মাপকাঠিতে বুঝতে, এর অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ বুঝতে গেলে এই তত্ত্বের বাইরে যাওয়ার আপাতত কোনো উপায় নেই। এ কাজটিই করলেন হকিং। তত্ত্বটিকে টেনে নিয়ে গেলেন সেই ১ হাজার ৩৭০ কোটি বছর দূর অতীতে। মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে ক্রমাগত। যেন একটি ক্যাসেট প্লেয়ার চলছে অবিরাম। হকিং ভাবলেন, ক্যাসেটখানাকে একটিবার পেছনে চালিয়ে দেখি তো কেমন হয়!

আলবার্ট আইনস্টাইন
আলবার্ট আইনস্টাইন

এই ভাবনা থেকেই উপহার দিলেন মহাবিশ্বের শুরুবিষয়ক চমকপ্রদ কিছু আবিষ্কার। তাঁর থিসিসের বিষয়ই ছিল ‘প্রপার্টিজ অব দ্য এক্সপান্ডিং ইউনিভার্স’। বাংলায় বললে হয়, ‘সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের বৈশিষ্ট্য’। আর মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ আইনস্টাইনের তত্ত্বের অন্যতম প্রধান একটি দিক। সেটি নিয়ে কাজ করে হকিং আইনস্টাইনের অন্যতম যোগ্য উত্তরসূরির ভূমিকা পালন করেছেন।

মজার ব্যাপার হলো, এই বিজ্ঞানীরা যে শুধু জন্ম-মৃত্যুর তারিখ বা বছর দিয়েই একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন, তা নয়। একজনের করে যাওয়া কাজের পথ ধরে আরেকজনের কাজ করার সুন্দর নমুনা তাঁরা। এর মধ্যে আছেন ম্যাক্সওয়েল, নিউটন ও গ্যালিলিওর মতো বিজ্ঞানীরা।

আইনস্টাইনের কথাই ধরুন। জন্ম ১৮৭৯ সালে। ওই সালেই মারা যান জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল। আর ম্যাক্সওয়েলের পথ ধরেই যেন আইনস্টাইন এগিয়ে গিয়েছেন। ১৮৬২ সালের কথা। লন্ডনের কিংস কলেজের একটি ক্লাসে লেকচার দিচ্ছিলেন ম্যাক্সওয়েল। একটি প্রয়োজনে বিদ্যুৎ–চুম্বকীয় তরঙ্গের বেগ বের করলেন। দেখা গেল, এই বেগ হয়ে যাচ্ছে আলোর বেগের সমান। এভাবেই জোড়া লেগেছিল আলোর সঙ্গে বিদ্যুৎ–চুম্বকের। অনেকের মতেই নিউটন ও আইনস্টাইনের পরে সেরা পদার্থবিদ হলেন ম্যাক্সওয়েল।

ম্যাক্সওয়েল আলোর বেগের একটি ধ্রুব মান পেয়েছিলেন। যেটি নির্ভর করছে না প্রসঙ্গকাঠামোর ওপর। এরপর মাইকেলসন-মর্লি প্রমাণ করলেন, আলোর বেগ আসলেই ধ্রুব। অনির্ভরশীল থাকে পর্যবেক্ষকের বেগের ওপর। কিন্তু সেটা মানতে চাইল না কেউ। মানলেন একজন। তিনি আইনস্টাইন। সেটা মেনেই জগৎ সম্পর্কে পাল্টে দিলেন আমাদের ধারণা।

ওদিকে একই রকম একটি মিল পাওয়া যায় নিউটন ও গ্যালিলিওর মধ্যে। নিউটনের জন্ম ১৬৪২ সালের জানুয়ারিতে। পুরাতন তারিখের হিসাবমতে, সেটি অবশ্য ১৬৪৩ সাল। সে যা–ই হোক, ওই ১৬৪২ সালেই মারা গিয়েছিলেন গ্যালিলিও। মাসও সেই জানুয়ারিই। পর্যবেক্ষণমূলক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক। আধুনিক পদার্থবিদ্যার জনক। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির জনক। আধুনিক বিজ্ঞানের জনক। বেগ, অভিকর্ষ, পড়ন্ত বস্তুর সূত্র—কত কিছু নিয়ে কাজ করলেন। বৃহস্পতির উপগ্রহ আবিষ্কার করে প্রমাণ দিলেন, মহাবিশ্বের সবকিছু পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘোরে এমন ভাবা মারাত্মক ভুল।

আর নিউটন? গ্যালিলিওর বেগ আর মহাকর্ষ সূত্রের পরিসর নিয়ে গেলেন সুদূর মহাকাশে। বললেন, যে কারণে আপেল মাটিতে পড়ে, সেই একই মহাকর্ষ দিয়ে চাঁদ ঘোরে। পৃথিবী ঘোরে। সূত্র কাজে লাগিয়ে বলে দেন গ্রহদের অবস্থান। বলে দেন ধূমকেতুদের আসার খবরও। লিবনিজের পাশাপাশি গড়ে তোলেন গণিতের অন্যতম বহুল ব্যবহৃত শাখা ক্যালকুলাস। যেটি ছাড়া এক পা এগোবার জো নেই আধুনিক বিজ্ঞানের।

একটু ঘাঁটলেই হয়তো এমন আরও নানান মিলে যাওয়া ঘটনার দিন, সাল, তারিখ পাওয়া যাবে। তবে কাছাকাছি বিষয়ে অবদান রাখা ও অন্যতম সেরা বিজ্ঞানীদের এই মিল সত্যিই বিস্ময়কর, যা খুঁজে পাওয়া সত্যিই দুষ্কর।

আদি মহাবিশ্বে গ্যালাক্সি ও গ্যালাক্সিপুঞ্জ কীভাবে গড়ে উঠেছিল, এ বিষয়েও হকিংয়ের আছে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কৃষ্ণগহ্বর নিয়েও আছে আরও নানা কাজ। কৃষ্ণগহ্বরে হারিয়ে যাওয়া বস্তুর তথ্য চিরতরে হারিয়ে যায় কি না, তা বিরাট এক প্রশ্ন। এ বিষয়েও আছে তাঁর কাজ

এখন হকিংকে কি নিউটন, আইনস্টাইনদের কাতারে রাখা যায়? বিচারের ভার আপনার। তবে তার আগে হকিংয়ের কিছু অবদানের কথা না জানলেই নয়। আইনস্টাইনের করা কাজকে আরও অনেক দূর টেনে নিয়ে গেছেন হকিং।

হকিংয়ের অন্যতম অবদান হকিং-পেনরোজ উপপাদ্য। আইনস্টাইনের সার্বিক আপেক্ষিকতার একটি বিশেষ দিক হলো এটি নিজেই নিজের দুর্বলতা স্বীকার করে। দুটি ক্ষেত্রে তত্ত্বটি অসহায়। প্রথমটি হলো মহাকর্ষের চাপে ভারী নক্ষত্রের গুটিয়ে যাওয়া। আরেকটি হলো অতীতের মহাবিশ্ব। যখন মহাবিশ্বের ঘনত্ব ও তাপমাত্রা ছিল অসীম। দুটি ক্ষেত্রেই স্থান একটি বিন্দুতে গিয়ে পর্যবসিত হয়। অসহায় হয়ে পড়ে আপেক্ষিকতা তত্ত্ব। কোন পরিস্থিতিতে তত্ত্ব কাজ করবে না, সেটার প্রথম গাণিতিক রূপ উঠে আসে হকিং-পেনরোজ উপপাদ্যের মাধ্যমেই।

আরও পড়ুন

ছবিতে বর্ণাঢ্য হকিং

ছবিতে বর্ণাঢ্য হকিং

সাধারণ আপেক্ষিকতার অন্যতম বড় আবিষ্কার ব্ল্যাকহোল বা কৃষগহ্বর। হকিং আবিষ্কার করলেন কৃষ্ণগহ্বর পুরোপুরি কালো না–ও হতে পারে। বিকিরণ পাওয়া যেতে পারে কৃষ্ণগহ্বর থেকেও। বিখ্যাত এই ধারণা তাঁর নামেই পরিচিত। হকিং বিকিরণ।

আদি মহাবিশ্বে গ্যালাক্সি ও গ্যালাক্সিপুঞ্জ কীভাবে গড়ে উঠেছিল, এ বিষয়েও হকিংয়ের আছে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কৃষ্ণগহ্বর নিয়েও আছে আরও নানা কাজ। কৃষ্ণগহ্বরে হারিয়ে যাওয়া বস্তুর তথ্য চিরতরে হারিয়ে যায় কি না, তা বিরাট এক প্রশ্ন। এ বিষয়েও আছে তাঁর কাজ।

মহাবিশ্বের গঠন, কাঠামো, অতীত-ভবিষ্যৎ নির্ভর করে আপেক্ষিকতা তত্ত্বের ওপর। এই তত্ত্বের বিস্তারিত রূপ নিয়ে ঢাউস আকারের এক বই লিখেছেন হকিং। নাম দ্য লার্জ স্কেল স্ট্রাকচার অব স্পেস-টাইম। সহ-লেখক বন্ধু-সহকর্মী জর্জ ইলিস। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণ আপেক্ষিকতা কোর্সের অবিচ্ছেদ্য অংশ বইটি।

ওদিকে জনপ্রিয় ধারার বই লেখার ক্ষেত্রে তিনি অন্যদের চেয়ে ঢের বেশি মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এ ছাড়া লিখেছেন অসংখ্য বই। দিয়েছেন বক্তৃতা। তাঁকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে একাধিক মুভি, ডকুমেন্টারি। এর মধ্যে অন্যতম হলো ফিল্ম দ্য থিওরি অব এভরিথিং

প্রায় সারা জীবন চেয়ারে আবদ্ধ ও মারাত্মক রোগে আক্রান্ত একজন মানুষ এত কিছু করেছেন, ভাবতেই বিস্ময়ে তন্ময় হয়ে যেতে হয়। মজার ব্যাপার হলো, হকিংয়ের লেখা বই আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম বইয়ের শেষে তিনজন বিজ্ঞানীর জীবনী পাওয়া যায়। তাঁরা আর কেউ নন, আইনস্টাইন, নিউটন ও গ্যালিলিও। তিনি কি কিছু ইঙ্গিত দিতে চেয়েছিলেন?

সূত্র: ব্রিটানিকা, ইউএসএ টুডে, ম্যাথপেইজেস ডট কম

*লেখাটি ২০১৯ সালে বিজ্ঞানচিন্তার মার্চ সংখ্যায় প্রকাশিত

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category