শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ০৫:৫৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

উপহারের ঘর ও সমাজসেবায় চাকুরি দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা নিয়ে প্রতারণা

সেলিম খান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
  • Update Time : শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ১৩১ Time View

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেয়া হবে। সমাজসেবা অধিদপ্তরে কম্পিউটার অপারেটরসহ নানা পদে চাকুরি হবে। কোন সার্কুলার দেখার প্রয়োজন নেই।

অফিসের সাথে আমার সরাসরি সম্পর্ক। পদ ভেদে এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা অগ্রিম লাগবে। চাকুরির নিয়োগপত্র পাওয়ার আগেই নেয়া টাকার বিনিময়ে আমি দিব একটি ফাঁকা চেক। এছাড়াও দেয়া হবে প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, সমাজসেবায় বিভিন্ন সরকারি প্রশিক্ষণ। এমন আশ্বাসে ফেঁসেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কয়েকশ নারী।

সমাজসেবায় চাকুরি করে নেয়ার আশ্বাসে অগ্রিম দিয়েছেন ১ থেকে ৫ লাখ টাকা। চাকুরি না পেয়ে প্রতারণার শিকার সদর উপজেলার বারোঘরিয়া গ্রামের কয়েকজন নারী।

সমাজসেবা অধিদপ্তরে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকুরি ছাড়াও স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেয়ার নামে অন্তত ৪০ জনের কাছ থেকে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন বারোঘরিয়া বাগানপাড়া গ্রামের মো. বাবুর স্ত্রী ফুলেরা বেগম।

জানা যায়, কয়েকজন নারী-পুরুষকে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ভাতার কার্ডও করে দিয়েছেন তিনি। এমনকি ১৫-২০ জনকে কার্ড করে দিতে না পেরে টাকা ফেরত দিয়েছেন। তবে এখনও অনেকেই এবাবদ টাকা পাবে তার কাছে। টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ফুলেরা বেগম।

এনিয়ে শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে ফুলেরা বেগমের বাড়ি ঘেরাও করে কয়েকজন নারী ভুক্তভোগী। এসময় বাড়ির দরজা লাগিয়ে দিলে ভুক্তভোগীরা উত্তেজিত হয়। উল্টো ভুক্তভোগীদেরকে নানারকম ভয়ভীতি ও হুমকি দেয় ফুলেরা বেগম।

এমনকি সংবাদ সংগ্রহে গেলে দৈনিক আমাদের মাতৃভূমি পত্রিকায় জেলা প্রতিনিধি জাহিদ হাসানের উপর হামলা করে ফুলেরা বেগমের ছেলে-মেয়ে। এসময় গুরুতর আহত হন জাহিদ হাসান। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় দুটি দেশীয় অস্ত্র হাতুড়ি ও সাবল উদ্বার করা হয়।

সমাজসেবা অধিদপ্তরে চাকুরি করে দেয়ার নামে ফুলেরা বেগমকে ৫ লাখ টাকা দেয়ার দাবি করেছেন একই গ্রামের মাসুদ আলীর স্ত্রী মোসা. সায়েমা বেগম, ২ লাখ টাকা দিয়েছেন আব্দুল করিমের স্ত্রী খাতিজা খাতুন, ৩ লাখ টাকা দিয়েছেন বারোঘরিয়ার নুরুন্নাহার, ১ লাখ টাকা দিয়েছেন শফিকুল ইসলামের স্ত্রী শিরিন খাতুন।

গ্রামের বিভিন্ন নারীদেরকে সমাজসেবা অধিদপ্তরে চাকুরি দেয়ার কথা বলে অগ্রিম টাকা নেয়ার পর দীর্ঘ দুই বছর পেরিয়ে গেলে টাকা ফেরত নেয়ার দাবি জানায় চাকুরি প্রার্থীরা। চাকুরি প্রত্যাশী, স্থানীয় বাসিন্দা, ইউপি চেয়ারম্যান সূত্রে জানা যায়, টাকা আদান-প্রদানের বিষয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে ইউনিয়ন পরিষদে সালিশে বসলেও সেখানে অনুপস্থিত থাকে ফুলেরা বেগম। পরে থানায় অভিযোগ করলেও কোন সমাধান পাননি ভুক্তভোগীরা।

এনিয়ে বারোঘরিয়া গ্রামের মাসুদ আলীর স্ত্রী মোসা. সায়েমা বেগম বাদি হয়ে আদালতে একটি চেক জালিয়াতির মামলা দায়ের করেন। চাকুরি প্রত্যাশী সায়েমা বেগম বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকুরি দেয়ার কথা বলে গতবছরের নভেম্বর মাসে ৫ লাখ টাকা নেয় ফুলেরা বেগম। দুইবারে ২ ও ৩ লাখ মিলে মোট ৫ লাখ টাকা নেয়। বিনিময়ে অগ্রণী ব্যাংকের একটি ফাঁকা চেক দিয়েছে।

টাকা নেয়ার সময় ফুলেরা বেগম জানায়, এর আগে কয়েকজনকে চাকুরি করে দিয়েছি, আপনারটাও করে দিব। সায়েমা আরও বলেন, সে (ফুলেরা বেগম) সমাজসেবা অধিদপ্তরে পিয়ন পদে চাকুরি করে বলে পরিচয় দেয়। টাকা নেয়ার পর দিব, দিচ্ছি করে করে দুই বছর পেরিয়ে গেলে সবাই মিলে তাকে টাকা ফেরত নেয়ার জন্য ধরি।

কিন্তু কাকে টাকা দিয়েছে, আর কখন ফেরত দিবে কিছুই বলছে না। আমি ঋণ করে টাকা দিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ ও থানায় অভিযোগ দিয়েও কোন সুরাহা না পেয়ে আদালতে চেকের মামলা দায়ের করেছি। ২ লাখ টাকা দেয়া আব্দুল করিমের স্ত্রী খাতিজা খাতুন জানান, পাড়ার মানুষ বলে বিশ্বাস করে টাকা দিয়েছি। টাকা নেয়ার পর রাজশাহী ও গোদাগাড়ীতে প্রশিক্ষণ করাব বলে দীর্ঘদিন ঘুরিয়েছে।

কিন্তু শুধু আমাকেই না, অনেককেই এভাবে মিথ্যা বলেছে। চাকুরি প্রত্যাশীরা সবাই মিলে চাপ দিলে পরে স্বীকার করে ও টাকা ফেরত দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। সবার কাছে টাকা ফেরত দেয়ার জন্য সময় নিয়েছে, কিন্তু তাও দিচ্ছে না। একই এলাকার শিরিন খাতুন বলেন, টাকা লেনদেনের বিষয়ে তার স্বামী-শশুরকে অভিযোগ দিতে গেলে তারা বলে, টাকা দেয়ার সময় আমাদেরকে বলে দেননি।

অতএব, এসব বিষয়ে আমাদেরকে বলে লাভ নাই। তার স্বামী জানায়, মেরে টাকা নেন। আমি জানি না এসব। তিনি আরও বলেন, আমার নিজের চাকুরির টাকা ছাড়াও এলাকার আরও কয়েকজনের কাছ থেকে বয়স্ক, বিধবা ভাতার কার্ড বাবদ ১২ হাজার টাকা ফুলেরাকে দিয়েছি। কার্ড না হওয়ায় এসব টাকাও আমাকে শোধ করতে হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মালেক জানান, এলাকার অনেকের কাছ থেকেই বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে দিব বলে ফুলেরা টাকা নিয়েছে।

কয়েকজনের ফেরত দিয়েছে, এখনও আরও অনেকেই টাকা পাবে। প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু মানুষজন তার বাসার সামনে এসে বসে থাকে টাকা ফেরত নেয়ার জন্য। অভিযুক্ত ফুলেরা বেগম সমাজসেবা অধিদপ্তরে চাকুরি দেয়ার নামে টাকা আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, এর আগেও এলাকার অনেকের বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে দিয়েছি। আরও করে দেয়ার জন্য কাগজপত্র ও টাকা নিয়েছিলাম। কিন্তু যাদের হয়নি, তাদের টাকা ফেরত দিয়েছি।

চাকুরির বিষয়ে তিনি বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের এক ম্যাডামের মাধ্যমে এসব টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু চাকুরি হয়নি, টাকাগুলো ফেরত দিব। তবে একটু সময় লাগবে। ম্যাডামের পরিচয় জানতে চাইলে এবিষয়ে কথা বলবেন না বলে জানান তিনি।

বারোঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল খায়ের জানান, তার (ফুলেরা) বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সালিশ আহ্বান করা হলেও সে উপস্থিত হয়নি। পরে এনিয়ে আদালতে একটি মামলা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহবুব জানান, উত্তেজনাকর পরিস্থিতির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আন

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category