রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গরমে স্কুল বন্ধ রাখায় মত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নড়াইলে নবনির্মিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবন উদ্বোধন করলেন: স্বাস্থ্যমন্ত্রী পবা সাব রেজিস্ট্রারের ঘুষ বানিজ্যের হাতিয়ার রনি-নাদিম সিন্ডিকেট এক পশলা বৃষ্টি চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন শতাধিক মুসল্লি জাতির পিতার সমাধিতে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন প্রতিবন্ধীদের মূল ধারায় আনার প্রচেষ্টা আছে সরকারের : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান আন্তজার্তিক পর্যায়ে বাংলাদেশ পুলিশ আর্চারি ক্লাবের স্বর্ণ জয় কিশোর গ্যাং এর প্রধান ডাকাতি মামলার আসামী গ্রেফতারের নিউজ করায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা মির্জাপুরে আল-হিদায়াহ সংগঠনের উদ্যোগে ভেঙ্গে যাওয়া ব্রীজ সংস্কার

আমার বাবা-আমার ভালোবাসা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : শনিবার, ৩ জুলাই, ২০২১
  • ২৪৪ Time View

(পর্ব-০৪)

১৯৮২ সাল, আমি বুয়েটে ভর্তি হয়েছি, ডিপার্টমেন্ট যন্ত্রকৌশল । ভর্তি শেষে গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসেছি। বাবা আট বছর সময় ধরে প্যারালাইজড অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছেন। বিবেক ,বুদ্ধি , স্নায়ু , অনুভূতি সবই ঠিক আছে । পারে না শুধু নিজের কাজগুলো নিজে করতে এবং অন্যের সাহায্য ছাড়া ঘুরে ফিরে শোয়ার জন্য শরীরের নিজের অঙ্গ বদল করে শুয়তে । আমার বাবার সে এক অসহনীয় কষ্টের জীবনের কথা । বাবার এই অসহনীয় কষ্টের জীবনে তার ছেলে হিসাবে আমি তেমন কিছুই করতে পারি নাই টোটকা ফোটকা সেবা ছাড়া । তবে যে সেবাটা আমার বাবার সন্তানের কাছে পাওয়ার কথা ছিলো আমি তার পুরোপুরিটা করতে পারিনি । মহান আল্লাহ পাক তাঁর নিজ গূনে এই অধম বান্দার অনিচ্ছাকৃত অপরাধ এবং ভুলক্রমে বাবার প্রতি কোনো অবহেলা হয়ে থাকেলে তা যেন ক্ষমা করে দেন ।

তখন মোবাইলের যুগ ছিলো না বিধায় আমার খুশির (বুয়েটে ভর্তির) খবরটি বাবাকেও জানানো যায়নি । তাই বাড়ীতে পৌঁছে সর্বপ্রথম বাবার পাশে গিয়ে আমি আমার মা আর মাতৃতল্য বড় ভাবিকে নিয়ে বসেছিলাম । আমার বাবা বিছানায় শায়িত অবস্থায় ছিলেন । আমার বুয়েটে চান্স পাওয়া এবং ভর্তির কথা শোনার পর আমার মাথাখানি টেনে তার বুকের উপর নিলেন । মুখে কিছুই বলতে পারছিলেন না । আবেগে বাবা এতটাই আপ্লুত হয়েছিলেন যে, তার কন্ঠ দিয়ে কোনো কথাই বের হলো না । শুধু দুই চোখ হতে অজস্র ধারায় ঝরা পানি তার গণ্ডদেশ বেয়ে বিছানা এবং বালিশ ভাসিয়ে একাকার করে ফেলেছিলেন । আর বাবার এই নীরব কান্নার সাথে আমার জোরে কান্না যোগ হয়ে বাবার পাকা চুলে ঢাকা মহব্বতের বক্ষ আমার চোখের লবনাক্ত গরম পানিতে ভরে গেল । সম্ভবত একেই বলে হর্ষ বিষাদের সেই সুখকর কান্না ।

সম্ভবত: অক্টোবর মাস, ১৯৭১ সাল । এই মাস আমার বাবা-মা এবং পুরা পরিবারের স্মৃতির খাতায় লেখা সবচেয়ে ভয়াবহ, বেদনা বিদুর , শোকে গাঁথা, দু:খ – কষ্টে ভরা ভয়ঙ্কর এক মাস । এই মাসে একদিনের ব্যবধানে আমার সবচেয়ে বড় এবং সেজো ভাই মারা যান । পুত্র শোকে কাতর এবং গভীর শোকে মুহ্যমান আমার বাব- মা । স্নেহময়ী বাবা মায়ের ভালবাসার মন্দিরে কাগজে মোড়ানো শোকের আঁধারের শাসনে আর নিপীড়নে ক্লান্ত হয়ে আস্তে আস্তে বয়সের ভারে আমার বাবা দূর্বল হতে শুরু করলেন । ১৯৭৬ সালে এসে আমার বাবা ধীরে ধীরে বিছানার কোলে নিজেকে সমর্পণ করলেন । যে বাবা এতোদিন বিচার সালিসি সহ নানা কর্মতৎপরতার এলাকা কাঁপিয়ে বেড়িয়েছিলেন সেই বাবা এখন পরমুখি হয়ে পড়লেন। মেজো ভাই আমাদের বড় পরিবারের হাল ধরলেন তার বিস্তারিত আমি লিখবো , “আমার বিবেকের সুতায় বাঁধা পর্ব গুলোতে” । বড় পরিবার এবং ছোট চার ভাই বোনের লেখা পড়ার খরচ মেটাতে মেজো ভাই মোটামুটি হীমসীম খাচ্ছে । এমন পরিস্থিতিতে সংসারের খরচ মেটাতে বাবার জমি বিক্রি করতে হতো । আর ঐ বিক্রি জমি দলিল করে দিতে অসুস্থ বাবাকে নৌকায় করে একাধিকবার নিয়ে যেতে হয়েছে উপজেলা সদরে । অসুস্থ বাবা সংসারের দায়বদ্ধতা আর সংসার চালানোর ঘানি তখনও টেনে চলেছে ।

প্রাইমারি স্কুলে আমি সব সময় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করতাম । প্রাইমারি শেষ করে আমি প্রাণের বেজড়া ভাটরা হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম । আমাদের এলাকার চার পাঁচটি প্রাইমারি স্কুলের প্রথম স্থান অধিকারী ছাত্ররা এসে বেজড়া ভাটরা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হলো । কিন্তু সব পরীক্ষায় আমি প্রথম হতে লাগলাম এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকারীর ছাত্রের চেয়ে মার্কের অনেক পার্থক্য থাকতো । প্রাইমারি স্কুলের দ্বিতীয় স্থান অধিকারী আমি নামক ছাত্রের প্রথম স্থান দখলের অনুপ্রেরণার কারিগর ছিলেন আমার বাবা । ওই দুর্দিনে আমার ক্লাসের সব পড়ার বই কিনে দেওয়ার সামর্থ্য ছিলো না । কিন্তু অনেক সময় স্কুল পিরিয়ডে অন্যের বই থেকে পড়ে তা আমার মাথার কুঠিরে রক্ষিত মেধার কৌটায় আবদ্ধ করে ফেলতাম । রাতে বাবা বিছানায় শুয়ে আমার পড়াশোনার দিকে খেয়াল রাখতেন । আমি পড়া বন্ধ করলে সাথে সাথেই বলে ওঠতেন বাবা পড়া বন্ধ করলে কেন ! সেই বাবা আজ আমার সাফল্যে পূর্বের স্মৃতির রোমন্থনে শুধু তার চোখের আনন্দের অশ্রু ঝরিয়ে যাচ্ছেন । বাবার ঐ চোখের জলে আমার হৃদয়ের হারমোনিয়াম এর সুর লহরীতে ভরে গেলো আমার সারা হৃদয় আর দেহ মন –

” বাবা আমার ভালোবাসা,
আমার বিবেকের হালখাতা,
বিবেকের সূতোয় বেঁধেছি বাবাকে,
রেখেছি আমার হৃদয়ের মনিকোঠায় ।” ( চলবে )

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category