মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
এআই ব্যবহার করে যেভাবে ফ্রিতে ছবি-ভিডিও এডিট করবেন ইনস্টাগ্রামে ভিডিও এডিটিংয়ে যেসব অ্যাপ ব্যবহার করবেন মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলা নিয়ে যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আ.লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজকে শোকজ ঝিনাইদহ-১ উপনির্বাচন : আ.লীগের মনোনয়ন কিনলেন ২৫ জন মসজিদ পরিষ্কার করছিলেন ইমাম, পুকুরে ডুবে ২ সন্তানের মৃত্যু ফরিদপুরে ২ সমবায় কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আগৈলঝাড়া রামশীল খাল থেকে নিখোঁজ হওয়া ১৮ মাসের বাঁচ্চার ভাসমান লাশ উদ্ধার নড়াইলে মাইজপাড়া ও কলোড়া ইউপি নির্বাচন-২০২৪ এর ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করলেন পুলিশ সুপার গরমে স্কুল বন্ধ রাখায় মত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের

টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের লাল মাটিতে কফি চাষ

সাজ্জাদ হোসেন, টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০২২
  • ১৮৯ Time View

টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের লাল মাটিতে আনারস ও কলার রাজধানীতে কফি চাষ শুরু হয়েছে। গড় এলাকার মাটি উঁচু ও লাল থাকায় দেখা দিয়েছে কফি চাষের উজ্জল সম্ভাবনা। এ অঞ্চলে রয়েছে ইতিহাস খ্যাত শালবন। শালবনের এ এলাকায় প্রচুর কৃষি ফসল জন্মে থাকে।

লাল মাটিতে আনারস, কলা, আঁদা, কচু, হলুদ, পেপে, লেবু, ড্রাগন, মাল্টা, পেয়ারাসহ নানা কৃষি ফসলের পাশাপাশি সম্প্রতি কৃষি বিভাগ স্থানীয় সংসদ সদস্য কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় কাজু বাদাম এবং কফি গবেষণা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকরা কফি চাষ শুরু করেছে। গড়াঞ্চলের মাটি, ভূ-প্রকৃতি, আবহাওয়া ও মাটির উর্বরতা শক্তি ভালো থাকার কারণে কফি চাষের উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষি বিভাগ ধারণা করছে।

মধুপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কাজু বাদাম এবং কফি গবেষণা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে কৃষকদের মাধ্যমে মধুপুরে ১১ হেক্টর জমিতে কফি চাষ শুরু করেছে। এ পর্যন্ত ৫৩ জন কৃষকের মাঝে সাড়ে ৭ হাজার কফির চারা বিতরণ করা হয়েছে। পৃথিবীতে ৬০ প্রজাতির কফি থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে দু রকমের কফি চাষ রয়েছে। এ এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য এরাবিকা ও রোবাস্টা জাতের কফি চাষ শুরু হয়েছে। চাষ উপযোগী আবহাওয়া ও জলবায়ু অনুকূল থাকায় ভালো উন্নত মানের এবং ঘ্রাণের কফি চাষ সম্প্রসারণের জন্য পাহাড়ী এলাকায় বিশেষ কার্যক্রম এ প্রকল্পের মাধ্যমে চলমান। রোবাস্টা জাতের কফি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় খুব উপযোগী। যে কারণে পার্বত্য অঞ্চল ও টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের আবহাওয়ায় এর সম্প্রসারণ সম্ভব। মাটি ও আবহাওয়া কফি চাষের জন্য যথেষ্ট উপযোগী বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ ।

মধুপুর শহর থেকে ১০ কি.মি. দূরে মহিষমারা গ্রামে ছানোয়ার নামে এক কৃষক প্রথমে ব্যক্তি উদ্যোগে কফি চাষ শুরু করেন। কৃষক ছানোয়ারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাকরি ছেড়ে পাচঁ বছর আগে শখের বশে কফি চাষ শুরু করেন। রাঙ্গামটি জেলার রায়খালী থেকে ২০০ চারা সংগ্রহ করেন তিনি। টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার মহিষমারা গ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে গড়ে তোলেন স্বপ্নের কফি বাগান। তার দাবি, মধুপুরে তিনিই প্রথম কফি চাষ শুরু করেন। প্রায় ২ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন কফির বাগান। রয়েছে ৫-৬’শ গাছ। প্রতিটি গাছে কফি ঝুলছে। চোখ জুড়ানো কফির ছড়াগুলো। যেন এক খণ্ড কফির রাজ্য। ছানোয়ার হোসেন মধুপুরের মহিষমারা গ্রামের মো. জামাল হোসেনের ছেলে। সিলেটে শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে তিনি গ্রামে এসে কৃষি কাজে ঝুঁকে পড়েন।

সরেজমিনে তার বাগানঘুরে দেখা যায়, বাগানের কফির চারাগুলো দেখতে কিছুটা দেবদারুর চারার মতো। প্রতিটি গাছে লতিয়ে রয়েছে গুচ্ছ গুচ্ছ কফির ফল। সবুজের মাঝে কফির গুঁটিগুলো দারুণ দেখাচ্ছে। দেশের কৃষিতে এ ফসল যেন এক নতুন অতিথি। কফির পাকা গুঁটিগুলো দেখতে টকটকে লাল ও কোনো কোনোটা কাঁচা হলুদের মতো। কাঁচাগুলো সবুজ। বাগানের মধ্যে কফি গাছ ছাড়াও অন্যান্য কিছু গাছও রয়েছে।

মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে প্রতিটি পরিপক্ক গাছে ফুল ধরা শুরু হয়। মে থেকে জুন মাসের মধ্যে ফুল থেকে গুঁটিতে পরিণত হয়। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে গুঁটিগুলো পরিপক্কতা লাভ করে। পরে এই গুঁটিগুলো রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। বাজারজাত ও কফি পান করার জন্য উপযোগী করতে মেশিনের মাধ্যমে গুঁড়া পাউডারের মতো করে নিতে হয়। আবার কফির বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা যায় বলেও জানা যায়।

ফলন ভালো ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে হেক্টর প্রতি ৭৫০ থেকে ১০০০ কেজি এবং গাছ প্রতি বছরে ১ কেজি কফি পাওয়া সম্ভব বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। স্থানীয়ভাবে কফির দাম নির্ধারিত না থাকলেও স্থানীয় চাষী ছানোয়ার হোসেন গ্রিন কফি ১৫’শ ও প্রসেসিং করা কফি ২৫’শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। মধুপুর অঞ্চলে কফি চাষ নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। প্রত্যাশা প্রাপ্তির হিসাব মিলবে প্রকল্পের মাধ্যমে চাষীরা কেমন সফলতা পায়। কাঙ্ক্ষিত ফলন ও বাণিজ্যিক পথ সুগম হলে ভাগ্যের দুয়ার খুলে যাবে এ অঞ্চলের কৃষকদের। কৃষিতে নতুন ফসল হিসেবে নতুন দিগন্ত পাবে কফি চাষ। এমনটাই ধারণা স্থানীয়দের।

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান, মধুপুরের মাটিতে অম্লত্ব ও উর্বরতা শক্তি কফি চাষের জন্য উপযোগী।

বৃষ্টিপাত মাটির গঠন বিন্যাস মিলে গড় এলাকার লাল মাটিতে কফি চাষের উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ এলাকায় সহজে বন্যার পানি ওঠে না। তেমন খরাও হয় না। এ এলাকায় কাজু বাদাম কফি গবেষণা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৫৩ জন কৃষকের ১১ হেক্টর জমিতে কফি চাষ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ এলাকায় এ চাষ সম্প্রসারণ ও সফলতার জন্য তারা কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান।

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category