
ময়মনসিংহের ত্রিশালে সরকারি নজরুল একাডেমি মাঠে মুনতাসির ফাহিম নামের এক তরুণকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছেন তারই বন্ধু অহিদুল ইসলাম। আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিতে অহিদুল দাবি করেন, ফাহিম নাকি তার ওপর ‘কালো জাদু’ করেছে—এই বিশ্বাস থেকেই তিনি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
নিহত মুনতাসির ফাহিম ত্রিশাল ইউনিয়নের চিকনা মনোহর গ্রামের বাদল মিয়ার ছেলে। মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন তিনি। চার মাস আগে দেশে ফেরেন। ২৯ নভেম্বর তার মালয়েশিয়া ফিরে যাওয়ার কথা ছিল; ২৫ ডিসেম্বর ক্লাস শুরু হওয়ার কথা।
অভিযুক্ত অহিদুল ইসলাম ত্রিশাল পৌরসভার দরিরামপুর এলাকার জহিরুল ইসলামের ছেলে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ছোটবেলা থেকেই ফাহিম ও অহিদুল (অনিক নামে পরিচিত) একসঙ্গে লেখাপড়া করতেন এবং পাশাপাশি বিভিন্ন কাজকর্ম করতেন। মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরার পর আবারও তারা একসঙ্গে চলাফেরা শুরু করেন। সম্প্রতি অহিদুলের শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় তিনি সন্দেহ করতে শুরু করেন যে কেউ তাকে ক্ষতি করেছে। কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে তিনি ভাবেন, ফাহিম মালয়েশিয়া থেকে কালো জাদু শিখে এসে তার ওপর প্রয়োগ করেছে। এই ভুল ধারণা থেকেই তিনি প্রতিশোধ নিতে হত্যাকাণ্ড ঘটান।
ফাহিমের স্কুলবন্ধু সোহান বলেন, “ফাহিম ছিল আমাদের সবার ভরসা। সবসময় হাসিখুশি থাকত। কীভাবে এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটল বুঝতে পারছি না। আমাদের সমাজে এমন ঘটনা আগে ঘটেনি—এটা যেন দুঃস্বপ্ন।”
নিহত ফাহিমের মা ফাতেমা খাতুন বলেন, “আমার ছেলে কোনো কালো জাদু জানত না, সে এসব বিশ্বাসও করত না। অনিক মিথ্যা বলছে। কিছুদিন আগে সে ও ইব্রাহিম আমাদের বাসায় এসে বলেছিল—ফাহিম মালয়েশিয়ায় ঠিকমতো খেতে পারে না, তাকে ভালোভাবে খাইয়ে দেবেন। তখনই বুঝিনি—ওর মনে কী চলছে। আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই।”
ত্রিশাল থানার ওসি মনসুর আহমেদ জানান, দুই তরুণ খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। হত্যার পর অহিদুল থানায় এসে দাবি করেন, ফাহিম নাকি কালো জাদু করে তার জীবন নষ্ট করেছে, তাই তিনি তাকে হত্যা করেছেন।
আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও অহিদুল একই দাবি করেন।
ত্রিশাল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার এসএম হাসান ইসরাফিল বলেন, আসামি মনে করতেন ভিকটিম নাকি তার ওপর কালো জাদু করায় তিনি কোনো কাজ করতে পারতেন না এবং তার জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। এই ক্ষোভ থেকেই হত্যাকাণ্ড ঘটে। তিনি আরও জানান, ঘটনাটিতে নারীসংক্রান্ত বিষয় থাকতে পারে বলেও তাদের ধারণা; পাশাপাশি ‘কালো জাদু’ সংক্রান্ত অভিযোগটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে অহিদুল ইসলাম একটি ‘চাইনিজ কুড়াল’ হাতে নিয়ে থানায় উপস্থিত হয়ে জানান, “ফাহিম কালো জাদু করে আমার জীবন নষ্ট করেছে, তাই তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছি।” এরপর পুলিশ তাকে আটক করে।
তার দেখানো জায়গা অনুযায়ী পুলিশ নজরুল একাডেমি স্কুল মাঠের পূর্ব পাশে পানির ট্যাংকের কাছে ফাহিমের মরদেহ উদ্ধার করে।
মন্তব্য করুন