মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
এআই ব্যবহার করে যেভাবে ফ্রিতে ছবি-ভিডিও এডিট করবেন ইনস্টাগ্রামে ভিডিও এডিটিংয়ে যেসব অ্যাপ ব্যবহার করবেন মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলা নিয়ে যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আ.লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজকে শোকজ ঝিনাইদহ-১ উপনির্বাচন : আ.লীগের মনোনয়ন কিনলেন ২৫ জন মসজিদ পরিষ্কার করছিলেন ইমাম, পুকুরে ডুবে ২ সন্তানের মৃত্যু ফরিদপুরে ২ সমবায় কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আগৈলঝাড়া রামশীল খাল থেকে নিখোঁজ হওয়া ১৮ মাসের বাঁচ্চার ভাসমান লাশ উদ্ধার নড়াইলে মাইজপাড়া ও কলোড়া ইউপি নির্বাচন-২০২৪ এর ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করলেন পুলিশ সুপার গরমে স্কুল বন্ধ রাখায় মত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের

প্রথম সন্তান হওয়ার পর স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বেড়ে যায়?

লাইফস্টাইল ডেস্ক, আলোকিত জনপদ
  • Update Time : বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৮২ Time View

কোনো সম্পর্কই স্থায়ী এবং শতভাগ মধুর হয় না। স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া–বিবাদ হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। সন্তান জন্মের পর অনেক দম্পতির মধ্যেই ঝগড়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। পরিবারে নতুন সদস্য আসাকে ঘিরে যেখানে পারিবারিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হওয়ার প্রত্যাশা ছিল, সেখানে ঝগড়া আরও বেড়ে যাওয়াকে অনেকে মেনে নিতে পারেন না। অনেকে এতে হতাশ হয়ে পড়েন। ভেবে নেন, সঙ্গী তাঁকে বুঝতেই চাইছে না।

কেন সন্তান হওয়ার পর স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বেড়ে যায়?

সন্তান জন্ম দেওয়ার পর লোচিয়া (প্রসবোত্তর স্রাব), প্রসবোত্তর ব্যথা এবং ঘনঘন মেজাজ পরিবর্তন তো আছেই, সেই সঙ্গে নতুন বাবা–মায়েদের মধ্যে আরও একটি সমস্যা দেখা দেয়, তা হলো— দাম্পত্য কলহ।

সন্তান জন্মের পর সব বাবা–মা উভয়ের ঘুম উবে যায়! ঘুমের সমস্যার কারণেই অনেক সময় উভয়ের মধ্যে ক্লান্তি ভর করে। এ ক্লান্তি থেকেই সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। তবে সব বাবা–মার মধ্যে এ সমস্যা একই রূপে দেখা দেয় না, এর স্থায়িত্ব একই হয় না এবং এর তীব্রতাও একই হয় না। কারও কারও ক্ষেত্রে স্বামী–স্ত্রীর মধ্যেকার এ দ্বন্দ্ব বিচ্ছেদ অবধি গড়াতে পারে।

সন্তান জন্মের পর ৩ বছর পর্যন্ত প্রসবোত্তর প্রতিক্রিয়াগুলো স্থায়ী হতে পারে। এ সময়টাতে মায়ের হরমোন ঘনঘন পরিবর্তিত হয় এবং এ সময়টাতেই বাবা–মা সবচেয়ে বেশি আবেগীয় টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যান। গর্ভাবস্থা ও প্রসবের জটিলতা কাটিয়ে ওঠার আগেই দম্পতিকে বাবা–মার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয় এবং সন্তানের সঙ্গে তাঁদের নতুন জীবন মানিয়ে নিতে হয়।

এ মানিয়ে নেওয়ার মধ্যে রয়েছে রাতের পর রাত জাগা, স্বচ্ছতার অভাব আর দুশ্চিন্তা! সন্তানের আগমনের সঙ্গে বাবা–মায়ের রাতের ঘুম এবং একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলোই যে শুধু বিঘ্নিত হয় তাই নয়, এর সঙ্গে বেশ কয়েকটি মানসিক পরিবর্তন আসতে পারে যা দম্পতির মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করতে পারে বা বিরোধ বাড়িয়ে দিতে পারে।

মানসিক চাপের মধ্যে দায়িত্বের চেয়ে বেশি কাজ এবং গৃহস্থালির কাজ বাবা–মার জন্য বিরক্তিকর হতে পারে। এতে তাঁদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে, বাবার তখন নিজেকে যথেষ্ট মনে না হতে পারে, মা–সন্তানের নতুন সম্পর্কের মধ্যে বাবার নিজেকে বহিরাগত মনে হতে পারে বা শিশুর সঙ্গে বাবার দূরবর্তী সম্পর্ক তৈরি হতে পারে।

এ ক্ষেত্রে রোম্যান্টিক দম্পতি আর অভিভাবক হয়ে ওঠা দম্পতির মধ্যে তফাৎ করতে জানতে হবে। প্রথম ক্ষেত্রে, সম্পর্ক রোম্যান্টিক অনুভূতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে একে অপরের দিকে মনযোগ না দিয়ে সব মনযোগ সন্তানের দিকে দেওয়া হয়। দৈনন্দিন জীবনে অনিদ্রা, সন্তানের প্রতি দায়িত্ব, রোম্যান্টিক মুহূর্তের অভাব স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

হতাশা সব সময়ই দৈনন্দিন ঝামেলা থেকে তৈরি হয় না, অত্যধিক প্রত্যাশা থেকেও এ ধরনের হতাশা আসতে পারে। বাবা বা মা হিসেবে সঙ্গীর কাছ থেকে যেমন ভূমিকা এতদিন কল্পনায় ছিল তা বাস্তবে না পেলে হতাশা তৈরি হতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে করণীয়

সন্তান জন্মের পর স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রতিরোধ করা যায় আলোচনার মাধ্যমে। সন্তান জন্মের আগেই কে কোন ভূমিকা পালন করবেন তা আলোচনা করে নেওয়া উচিত। যেমন, রাতে সন্তানের দেখভাল কে করবেন, বাবার দায়িত্ব কী কী হবে—ইত্যাদি আগেই আলোচনা করে নেওয়া উচিত। তবে মাথায় রাখতে হবে, এটি শুধু আলোচনা পর্ব। বাস্তবতা এই আলোচনার সঙ্গে নাও মিলতে পারে।

স্বামী–স্ত্রীর সম্পর্কের ভিত্তিতে এই বিবাদের পর্ব পরিবর্তিত হতে থাকে। এ ধরনের দ্বন্দ্ব কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

এই লড়াই থেকে পরিত্রাণ পেতে দুটি কাজ করা যেতে পারে—আলোচনা ও বাস্তবায়ন।

পরিস্থিতি যখন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, তখন অনেকের ক্ষেত্রে কথা বলাবলি বন্ধ হয়ে যেতে পারে, পারস্পরিক যোগাযোগ অসম্ভব মনে হতে পারে। অনেকের কাছে মনে হতে পারে, এখন আর কথা বলে লাভ নেই। এসব ক্ষেত্রে কথা বলার জায়গা আবার তৈরি করতে তৃতীয় ব্যক্তির সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। সময় নিয়ে একে অপরের সঙ্গে কথা বলে, সঠিক শব্দ ব্যবহার করে নিজেদের অনুভূতি বোঝানোর মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

সন্তান জন্মের পর নিজেদের দৈনন্দিন জীবনকে স্বাভাবিক রাখতে আরও যা যা করা যেতে পারে—

১. সন্তান যদি রাতভর না ঘুমায় এবং সঙ্গী যদি চাহিদা মতো আপনাকে সহায়তা না করে, তবে প্রতি সপ্তাহে এক বা দুই রাতের জন্য কোনো আত্মীয়ের কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারেন। বা দিনের কয়েক ঘণ্টার জন্য আত্মীয় বা বন্ধুবান্ধবের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে এবং ওই সময়টা ঘুমিয়ে নেওয়া যেতে পারে। নিজের এবং সঙ্গীর সঙ্গে কাটানো কিছু মুহূর্ত আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে এবং সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে তুলবে। মনে রাখতে হবে, সন্তুষ্ট দম্পতিই ভবিষ্যতে হাসিখুশি বাবা–মা হতে পারেন। আর হাসিখুশি বাবা–মা থেকেই হাসিখুশি সন্তান তৈরি হয়।

২. দৈনন্দিন জীবনকে আরও সুখকর করে তোলার একটি উপায় হলো, মানসিক চাপ কমিয়ে ফেলা। মানসিক বোঝা ও বিরক্তি ঝেড়ে ফেলতে একসঙ্গে বসুন এবং নিজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর তালিকা করুন। একসঙ্গে বসে আলোচনা করার মাধ্যমে অসম্পূর্ণ কাজের জন্য একে অপরকে দোষারোপ করার প্রবণতা কমে যায়।

৩. যতটা সম্ভব সঙ্গীর প্রতি প্রত্যাশা রাখুন। ছোট ছোট কিছু কাজ জীবন সহজ করে তুলতে পারে। যেমন: খাবার তৈরি করে ফ্রিজে রেখে দিলে তাড়াহুড়োয় খাওয়ার জন্য সব সময়ই খাবার পাবেন। বিশ্রামের প্রয়োজন হলে ঘরের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা বা কাপড় ধোয়ার কাজে সঙ্গীকে সহায়তা করতে বলুন।

দুঃখজনকভাবে ৬০ শতাংশ দম্পতিই সন্তান গ্রহণের পর কলহে জড়িয়ে পড়েন এবং ২০ শতাংশ ক্ষেত্রেই এ কলহ বিচ্ছেদে গড়ায়। ছোট সন্তান নিয়েই বিচ্ছেদের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে। তাই এ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি জরুরি।

তথ্যসূত্র: মাস্টেলা ম্যাগাজিন

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category