সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
আগৈলঝাড়া রামশীল খাল থেকে নিখোঁজ হওয়া ১৮ মাসের বাঁচ্চার ভাসমান লাশ উদ্ধার নড়াইলে মাইজপাড়া ও কলোড়া ইউপি নির্বাচন-২০২৪ এর ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করলেন পুলিশ সুপার গরমে স্কুল বন্ধ রাখায় মত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নড়াইলে নবনির্মিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবন উদ্বোধন করলেন: স্বাস্থ্যমন্ত্রী পবা সাব রেজিস্ট্রারের ঘুষ বানিজ্যের হাতিয়ার রনি-নাদিম সিন্ডিকেট এক পশলা বৃষ্টি চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন শতাধিক মুসল্লি জাতির পিতার সমাধিতে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন প্রতিবন্ধীদের মূল ধারায় আনার প্রচেষ্টা আছে সরকারের : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান আন্তজার্তিক পর্যায়ে বাংলাদেশ পুলিশ আর্চারি ক্লাবের স্বর্ণ জয়

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ঘোড়দৌড়ের বিস্ময় বালিকা সোনিয়া

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১৭ মার্চ, ২০২১
  • ১৬৯ Time View

 ফেরদৌস সিহানুক শান্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জঃ

এতো অল্প বয়সে এমন সাফল্যে দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সোনিয়া। অথচ নিজের ঘোড়া না থাকায় দেশের যেকোনো বড় প্রতিযোগিতায় তাকে অংশ নিতে হয় অন্যের ঘোড়া নিয়ে।

আর তাতে যেসব মূল্যবান পুরস্কার জেতে, তা তার ভাগ্যে জোটে না। দিনশেষে খেলায় জিতেও মলিন মুখ নিয়েই ফিরতে হয় সোনিয়াকে।

ঘোড়ার যত্ন নিচ্ছে বিস্ময় বালিকা সোনিয়া সোনিয়ার সুনাম বহু আগেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ পার হয়ে ছড়িয়ে গেছে সারাদেশে। নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, সিলেট, হবিগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বড় বড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে সোনিয়া।

সর্বশেষ গত শনিবার (১৩ মার্চ) হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় শাইলঘাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ১০০ প্রতিযোগীকে হারিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে সে।

সেদিন সোনিয়া টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর গ্রামের আবুল হাশেমের হয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে মোটরসাইকেল জিতে নেয়। তবে বরাবরের মতোই তার কপালে জোটে চুক্তি হওয়া ৪-৫ হাজার টাকা।

এ নিয়ে পাহাড়সম কষ্ট আর চাপা ক্ষোভ রয়েছে সোনিয়া ও তার পরিবারের সদস্যের মাঝে। সোনিয়ার ঘোড়ায় চড়ার গল্পটা শুরু হয় তার বাবা মতিউর রহমানের শখের হাত ধরে।

দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিলেও দিনমজুর মতিউরের দীর্ঘদিনের শখ ছিল ঘোড়ার। অর্থাভাবে দীর্ঘদিন থেকে ঘোড়া কিনতে পারেননি সোনিয়ার বাবা। অন্যদিকে গ্রামে একজনের একটি ঘোড়া ছিল।

প্রতিদিন বাজার থেকে বাসায় ফেরার পথে সেই ঘোড়ার জন্য খাবার কিনে নিয়ে যেতেন মতিউর। আর এতে মাঝেমধ্যে সেই ঘোড়ায় ওঠার সুযোগ মিলত তার। তবে অপেক্ষার অবসান হয় ৫ বছর আগে। কথায় আছে, শখের দাম সোয়া লাখ।

একটি এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ করে একটি ঘোড়া কিনেছিলেন মতিউর। দিনমজুরের কাজ করার পাশাপাশি শখের বসে শুরু করেন ঘোড়া চালানো।

তিনি বলেন, আমি যখন ঘোড়ায় চড়তাম, তখন ৬ বছর বয়সী মেয়ে সোনিয়া উঠতে বায়না করত। ভাবতাম মেয়ে মানুষ পড়ে গিয়ে হাত-পা ভেঙে ফেলবে। তবে অনেক বায়নার পর একদিন ঝুঁকি নিয়ে তাকে ঘোড়ায় উঠালাম।

কিছুক্ষণ পরে দেখি ঘোড়া দৌড়াচ্ছে, আর সোনিয়া গলা ধরে ঝুলে আছে। মতিউর রহমান আরও বলেন, ঘোড়ায় ওঠার পর ৭ দিনের মাথায় শিবগঞ্জ উপজেলা স্টেডিয়ামে একটি প্রতিযোগিতায় ডাক আসে।

সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে সোনিয়া। এরপর আর থামেনি। জেলার মধ্যে একে একে দরগাডাঙ্গা, বিসমি, পোলাডাঙ্গা, ঘুঘুডিমা ছাড়াও নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, সিলেট, হবিগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বড় বড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে।

ফলাফলও হয়েছে একই রকম। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০টি খেলায় সোনিয়া অংশ নিয়েছে। সোনিয়ার মা জান্নাতুন খাতুন জানান, খুব ছোট থেকেই ঘোড়ার প্রতি তার আগ্রহ খুব। সে খুব ভালো করছে এখন।

কিন্তু সোনিয়ার ঘোড়াটি ছোট হওয়ায় কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে অন্যের ভাড়াটে হয়ে খেলায় অংশ নেয় সে। এখন পর্যন্ত সোনিয়া প্রায় ১০টি ফ্রিজ ও এলইডি টিভি জিতেছে। যার একটিও পায়নি সে।

প্রায় সব প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতলেও তা তার ভাগ্যে জোটে না। সব সময় তার জন্য বরাদ্দ থাকে ৩-৪ হাজার টাকা যা যাতায়াতেই খরচ হয়ে যায়। তিনি বলেন, ঘোড়ায় চড়ার পাশাপাশি সোনিয়ার পড়াশোনা করারও অনেক স্বপ্ন রয়েছে। তবে পাঁচ মেয়ের সংসারে তা কতটা সম্ভব তা নিয়েও দুশ্চিন্তার শেষ নেই।

সোনিয়া ঘোড়াকে খুব ভালোবাসে। নিজের হাতে খেতে দেয়, আদর করে। তবে তার এই ছোট্ট মনেও নিজের সাফল্যের ফল না পাওয়াতেও অনেক কষ্ট আছে। সোনিয়ার চাচাতো ভাই ওয়ালিদ হাসান।

তিনিও একজন জকি। বিভিন্ন ঘোড়াদৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তিনি জানান, দুই ভাই-বোন বিভিন্ন জায়গায় একসঙ্গে খেলি। সোনিয়া প্রায় সব জায়গাতে জয় লাভ করে কিন্তু তার প্রাপ্যটা পায় না।

অন্যের ঘোড়ায় খেলে বলে এমনটি হয়। খেলা দেখে দর্শকরা সবাই আনন্দ নেয়, তবে খেলা শেষে সোনিয়ার নিঃশব্দে রক্তক্ষরণ কেউ দেখে না।

সরকার বা সমাজের বিত্তবানরা তাকে একটি ঘোড়া দিলে বা তার পাশে দাঁড়ালে সে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে।

ওয়ালিদ হাসান, সোনিয়ার চাচাতো ভাই। কথা হয় অবিশ্বাস্য সাফল্যের অধিকারী ১১ বছর বয়সী সোনিয়া খাতুনের সঙ্গে। সোনিয়া বলে, খেলতে খেলতে এমনটি হয়ে গেছি।

এখন ভালো খেলি তাই সবাই ডাকে। আমার ছোট্ট একটি ঘোড়া আছে কিন্তু এটা নিয়ে খেলতে পারি না। তাই পুরস্কারও পায় না। সে আরও জানায়, ঘোড়ায় চড়া যেমন আনন্দের, তেমনি পড়াশোনা করাটাও অনেক স্বপ্নের।

বয়স মাত্র ১১ বছর হলেও নিজের পরিবারের আর্থিক দুরাবস্থার কথা ভালোই জানে সোনিয়া। এ বিষয়ে সে বলে, দুটোই একসঙ্গে সমান তালে করতে চাই। তবে পারব কিনা জানি না।

কারণ আমরা খুব গরিব। আমাদের একটাই ঘর, এই ঘরেই পাঁচ বোন আর মা-বাবা বাস করি। কীভাবে বড় ঘোড়া কিনব। সোনিয়ার প্রতিবেশী আব্দুর রহমান, মুসলেমা খাতুন, মোশাররফ হোসেন বলেন, সোনিয়া আমাদের জেলার গর্ব।

সারাদেশে আজ তার সুনাম হচ্ছে। খুব কম বয়সে এতো নামডাক সচরাচর কেউ পায় না। তার মতো এমন সম্পদ অর্থাভাবে শেষ হয়ে যেতে পারে।

সোনিয়া ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান তারা। স্থানীয়দের অনেকেই সোনিয়াকে অপ্রাকৃতিক ক্ষমতাসম্পন্ন বা সৃষ্টিকর্তার বিশেষ আর্শীবাদপ্রাপ্ত মেয়ে মনে করেন।

ইতোমধ্যে সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে উঠেছেন সবার প্রিয় সোনিয়া। তবে সবার সহযোগিতা ও ভালোবাসা একদিন সোনিয়াকে কিংবদন্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে- এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category