মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

৭২ বছরে তিন ছবিতেই সীমাবদ্ধ ‘ভাষা আন্দোলন’

অনলাইন রিপোর্ট
  • Update Time : বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ৫৪ Time View
ছবি : সংগৃহীত

মাতৃভাষা প্রত্যেকটি জাতির জাতিসত্তা বিকাশের অনবদ্য মাধ্যম। মাতৃভাষা ব্যতীত আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদা সমৃদ্ধ হয় না। তাই পৃথিবীর প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীই তার মাতৃভাষাকে মর্যাদা দিয়ে থাকে। মাতৃভাষার মর্যাদার ওপর ভিত্তি করেই একটা জাতিকে এগিয়ে যেতে হয়। তবে ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছেন এমন ঘটনা বিশ্বে আর নেই বললেই চলে। ভাষা আন্দোলনকে বলা হয় বাংলার মহান মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় বিজয় অর্জনের মূল সূত্র।

প্রথমে রাষ্ট্রভাষা বাংলা এবং পরে সার্বভৌমত্ব অর্জনের মধ্য দিয়ে আজকের মাথা উঁচু বাংলাদেশ। এর চেয়েও উল্লেখযোগ্য বিষয়, বছর ঘুরে একুশে ফেব্রুয়ারি সেই বার্তা নিয়ে হাজির হয় বিশ্ববাসীর নজরে। কারণ দিনটি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত।

 

৭২ বছরে তিন ছবিতেই সীমাবদ্ধ ‘ভাষা আন্দোলন’

 

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী ইতিহাস ও ঘটনানির্ভর চলচ্চিত্র নির্মাণ বেড়েছে। পাশের দেশ ভারতের নির্মাতারা তাদের জাতীয় জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সময় নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন এবং সেগুলো ব্যবসা সফল হচ্ছে। অথচ ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর পূর্তিতে আমাদের হাতে রয়েছে মাত্র তিনটি সিনেমা, যার কোনোটাকেই উল্লেখযোগ্য বলা যায় না।

দেশ স্বাধীনের আগে জহির রায়হান ‘হাজার বছর ধরে’ নির্মাণ করলেও সেটাকে পুরোপুরি ভাষা আন্দোলনের সিনেমা বলা যায় না। শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘বাঙলা’ সিনেমাটি ভাষা আন্দোলনের হলেও সিনেমা হিসেবে খুব বেশি নামডাক কামাতে পারেনি। এটি নির্মিত হয়েছে ভাষা আন্দোলনের ৫৪ বছর পর। ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সর্বশেষ ছবি বানিয়েছেন অভিনেতা-নির্মাতা তৌকীর আহমেদ ২০১৯ সালে। ‘ফাগুন হাওয়ায়’ সিনেমাটি খুব বেশি মানুষ দেখেছে বলা যায় না। তবে যারা দেখেছে প্রশংসা করেছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন উৎসবে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

 

দেশ স্বাধীনের আগে জহির রায়হান ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ নামে চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এফডিসিতে সেটা জমা দিয়েছিলেন। ‘সৃজনী’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এটি নির্মিত হওয়ার কথা ছিল। পরে তত্কালীন সরকারের অসহযোগিতার কারণে এটি আলোর মুখ দেখেনি। ১৯৭০ সালে গণআন্দোলনের পটভূমিতে ‘জীবন থেকে নেয়া’ নির্মাণ করলেন জহির রায়হান। সেখানে একুশে ফেব্রুয়ারির একটি অংশ রয়েছে। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটি ব্যবহূত হয়েছিল ছবিতে। ছবিতে প্রভাতফেরি, বিভিন্ন সংগঠনের পুষ্পস্তবক অর্পণের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

 

৭২ বছরে তিন ছবিতেই সীমাবদ্ধ ‘ভাষা আন্দোলন’

 

‘জীবন থেকে নেয়া’ মুক্তি পায় ১৯৭০ সালের ১১ এপ্রিল, পূর্বঘোষিত তারিখের একদিন পর। কেননা তত্কালীন গোটা পাকিস্তানের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ‘জীবন থেকে নেয়া’ একমাত্র চলচ্চিত্র, যাতে সমকালীন গণআন্দোলন, ছাত্র আন্দোলন, রাজনীতি, পুলিশি নির্যাতন, একুশের বিভিন্ন কর্মসূচি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ, একনায়কতন্ত্র ও সামরিকতন্ত্রের স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ইত্যাদি প্রসঙ্গ ও ঘটনা, পারিবারিক কর্তৃত্বের মেয়েলি লড়াই রূপকের আড়ালে তুলে ধরা হয়েছিল। এ চলচ্চিত্রে রাজনৈতিক ঘটনা ও বক্তব্য থাকার কারণে পাকিস্তানের সামরিক সরকার প্রযোজক-পরিচালক জহির রায়হানকে নানাভাবে হয়রানি ও সেন্সর সার্টিফিকেট না দেয়ার পাঁয়তারা করেছিল। নির্দিষ্ট তারিখে ছবিটি মুক্তি না পাওয়ার কারণে সচেতন দর্শক ও জনসাধারণ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করে। তারা স্লোগানসহকারে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন সিনেমা হল আক্রমণ করে। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সামরিক সরকার সেন্সর সার্টিফিকেট দিতে বাধ্য হয়েছিল। ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রটি মুক্তির পরের বছর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। দেশ স্বাধীনের পরের মাসেই মারা যান জহির রায়হান। তারপর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক সিনেমা নির্মিত হলেও ভাষা আন্দোলন নিয়ে সেভাবে কেউ ভাবেননি।

স্বাধীনতার প্রায় ৩৫ বছর পর ভাষা আন্দোলন নিয়ে নির্মিত হয় দ্বিতীয় সিনেমা। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আহমদ ছফার লেখা উপন্যাস ‘ওংকার’ অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাটির নাম ‘বাঙলা’। সিনেমাটি নির্মাণ করেন গুণী নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকন। হুমায়ুন ফরীদি, মাহফুজ আহমেদ, শাবনূর অভিনয় করেন।

 

৭২ বছরে তিন ছবিতেই সীমাবদ্ধ ‘ভাষা আন্দোলন’

 

‘বাঙলা’র ১৩ বছর পর ২০১৯ সালে অভিনেতা-পরিচালক তৌকীর আহমেদ নির্মাণ করেন ‘ফাগুন হাওয়ায়’। টিটো রহমানের গল্প ‘বউ কথা কও’ অবলম্বনে নির্মিত এ সিনেমায় নুসরাত ইমরোজ তিশা, সিয়াম আহমেদ, আবুল হায়াত, ফজলুর রহমান বাবু অভিনয় করেন। ৪৪তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ তিনটি বিভাগে পুরস্কৃত হয় সিনেমাটি।

 

৭২ বছরে তিন ছবিতেই সীমাবদ্ধ ‘ভাষা আন্দোলন’

 

বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা নির্মাণ আগে থেকে কিছুটা বাড়লেও ভাষা আন্দোলন নিয়ে সিনেমার কথা শোনা যায়নি। তবে বেশকিছু প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে ভাষা আন্দোলনকে উপজীব্য করে। সরকারিভাবে ‘হূদয়ে একুশ’ ও ‘বায়ান্নর মিছিল’ নামে ডকুমেন্টারি বানানো হয়েছে।

 

এদিকে ৭২ বছর পার হলেও তেমন ভাবে কেনো ভাষা আন্দোলন নিয়ে সিনেমা তৈরী হচ্ছে না জানতে চাইলে নির্মাতা ও প্রযোজক ছটকু আহমেদ আরটিভিকে বলেন, আসলে বিষয়টি নিয়ে একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে সরকার। সরাকার চাইলে অনুদানের সিনেমা নেয়ার সময় যেমন বলে দেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তি একটি সিনেমাকে অনুদান দেয়া হবে ঠিক তেমনি লিখে দেয়া উচিত ভাষা আন্দোলন নিয়ে একটি সিনেমার জন্য অনুদান দেয়া হবে।

 

একই সুর নির্মাতা বদিউল আলম খোকনের মুখেও। তিনি বলেন, সরকার অনুদান দেয়ার সময় যদি বলে দেন এবার ভাষা আন্দোলন নিয়ে সিনেমা বানানোর জন্য ৫ সিনেমাকে অনুদান দেয়া হবে তখনই অনেকেই এগিয়ে আসবে সিনেমা বানাতে।

 

মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, সাধারণত যেই নির্মাতারা বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করে থাকেন তারা এই ধরণের চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহী না। পাশাপাশি এমন একটি ক্যানভাসের ছবি নির্মাণ করতে হলে অনেক কিছু প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন রাষ্ট্রের সহযোগিতা।

 

চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্তরা মনে করছেন, নতুন প্রজন্মের কাছে ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য তুলে ধরে বড় ভূমিকা রাখতে পারে চলচ্চিত্র।

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category