সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
আগৈলঝাড়া রামশীল খাল থেকে নিখোঁজ হওয়া ১৮ মাসের বাঁচ্চার ভাসমান লাশ উদ্ধার নড়াইলে মাইজপাড়া ও কলোড়া ইউপি নির্বাচন-২০২৪ এর ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করলেন পুলিশ সুপার গরমে স্কুল বন্ধ রাখায় মত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নড়াইলে নবনির্মিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবন উদ্বোধন করলেন: স্বাস্থ্যমন্ত্রী পবা সাব রেজিস্ট্রারের ঘুষ বানিজ্যের হাতিয়ার রনি-নাদিম সিন্ডিকেট এক পশলা বৃষ্টি চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন শতাধিক মুসল্লি জাতির পিতার সমাধিতে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন প্রতিবন্ধীদের মূল ধারায় আনার প্রচেষ্টা আছে সরকারের : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান আন্তজার্তিক পর্যায়ে বাংলাদেশ পুলিশ আর্চারি ক্লাবের স্বর্ণ জয়

ইলিয়াস কাঞ্চনের নায়িকা থাকেন এখন আশ্রয়ণ প্রকল্পে

মাদারীপুর প্রতিনিধি
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ২০৫ Time View

চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়।
আজিকে যে রাজাধিরাজ কাল সে ভিক্ষা চায়।।
অবতার শ্রীরামচন্দ্র যে জানকীর পতি
তারও হলো বনবাস রাবণ-করে দুর্গতি।

-কাজী নজরুলের এই গানটা যেন একদম মিলে যায় বনশ্রীর জীবনের সঙ্গে। নব্বইয়ের দশকে ইলিয়াস কাঞ্চনের বিপরীতে ঢাকাই সিনেমাতে অভিষেক ঘটে বনশ্রীর। এরপর একই বছরে অর্থাৎ ১৯৯৬ সালে মুক্তি পায় তার দ্বিতীয় সিনেমা ‘মহা ভূমিকম্প’। সুভাষ ঘোষ পরিচালিত এই সিনেমায় দুই নায়ক মান্না ও আমিন খানের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। এরপর সে সময় আরও অনেক নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন। বিস্ময়কর হলেও এটাই সত্যি, এক সময়ের পর্দা কাঁপানো নায়িকা এখন বেদে পল্লীতে, বাস করেন সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।

গত ৬ নভেম্বর সরেজমিন যাওয়া হয় শিবচরের মাদবরের চর ইউনিয়নের সেই আশ্রয়ণ প্রকল্পে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২৯ নম্বর ঘরে থাকেন বনশ্রী। সেখানেই কথা হয় তার সঙ্গে।

বনশ্রী জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি সংস্কৃতিচর্চার প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। ফলে একসময় উদীচী গণসাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি ভালো গান করতেন। এরপর অভিনয় শেখার জন্য যোগ দেন সুবচন নাট্য সংসদে। বিটিভির স্পন্দন অনুষ্ঠানে নিয়মিত আবৃত্তি করেছেন। পরে যুক্ত হন সিনেমায়। প্রায় দশটি সিনেমায় কাজ করেছেন। যদিও তার মধ্যে তিনটি ছবি আলোর মুখ দেখে। একটি ঝামেলায় পড়ে বাদ দিতে হয়েছে সিনেমা জগৎ। সিনেমা ছেড়ে দেওয়ার পর আর্থিক অনটনের কারণে কিছুদিন ঢাকার শাহবাগের ফুল মার্কেটে ফুলের ব্যবসা করেছেন। বিভিন্ন বাসে হকারি করেছেন, বিক্রি করেছেন নামাজ শিক্ষার বই।

অভাব-অনটনের মধ্যে জীবনের ঘানি টানতে না পেরে মহামারী করোনার পরে চলে আসেন নিজ উপজেলা শিবচরে। বর্তমানে বসবাস করছেন শিবচর উপজেলার মাদবরের চর ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে, যেটি কিনা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন।

তার সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে তিনি আরও জানান, তার দুই ছেলেমেয়ে। বড় মেয়েটি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ে তখন কিডন্যাপ হয়েছিল। এরপর মেয়ের কোনো খোঁজ না পেয়ে একেবারে বৃদ্ধের মতো হয়ে পড়েন।

https://fb.watch/pc7GJUghrQ/

বনশ্রী জানান, তার মেয়েকে কিডন্যাপ করে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সঙ্গীতার মালিক সেলিম খান তাকে মডেল বানিয়েছেন। এরপর তাকে আর ফেরত দেয়নি। মেয়েকে ফেরত পাওয়ার জন্য থানাপুলিশের আশ্রয় নিয়েও ফেরত পাননি।

মেয়েটির বিষয়ে আমি প্রশাসনের কোনো সাহায্য পাইনি। আমার মেয়েটা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে কিছুই জানি না।

বনশ্রী আরও বলেন, এখন কষ্ট করেই দিন যাচ্ছে। মাঝে মাঝে রাজনৈতিক মিটিংয়ে যাই। ছেলেটা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, ওকে সময় দেই। আমি ঘরে বসে সেলাইয়ের কাজ করি। তবে করোনাভাইরাস আসার পর আর সেলাইয়ের কাজ পাই না। তবে নিজের জামাকাপড় নিজেই সেলাই করি।

বনশ্রীর দুর্দিনে পাশে এসে দাঁড়ান শেখ হাসিনার সরকার। বছর কয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী তার হাতে তুলে দেন ২০ লাখ টাকা। এতেও অভাব ঘুচেনি বনশ্রীর। স্থায়ী ঘর না থাকায় স্বস্তিতে ছিলেন না। সবশেষে ঠাঁই হয় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজিবুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশের একজন মানুষও ভ‚মিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প ২-এর আওতায় শিবচর উপজেলার প্রত্যেকটি ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে পুনর্বাসিত করেছি। সেই প্রকল্পের আওতায় থাকা বনশ্রী একসময় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন, যেটা আমরা জানতে পেরেছি। তিনি ভূমিহীন ক্যাটাগরিতে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি ঘর পেয়েছেন।

এই নায়িকার ভাষ্য, প্রধানমন্ত্রী আমাকে ২০ লাখ টাকা দিয়েছেন। সেই টাকা আমি ব্যাংকে রেখেছি। সেই টাকার লাভের অংশ দিয়ে আমি চলতাম। আগে সেই টাকায় ২১ হাজার ৪শ টাকা লাভ পেতাম। এই টাকা দিয়ে ঢাকায় একটি ফ্ল্যাটে সাবলেট থাকতাম। পরে আনুমানিক ৪ বছর হবে সেই লাভের টাকা থেকে ৪ হাজার ২০ টাকা ব্যাংক কেটে নিয়ে যায়।

বর্তমানে প্রতি মাসে ১৭ হাজার ২শ টাকার মতো ওখান থেকে লাভ পাই। কিন্তু সেই টাকায় নিজের ওষুধ কিনে সংসারের কেনাকাটা করে ছেলের পড়ালেখার খরচ চালানো যাচ্ছে না। পরে আমি চলে আসি গ্রামে। এখানে এসে একটি টিনের ঘর ভাড়া নেই। অনেকে আমাকে ঘর ভাড়া দিতে চায়নি। পরে টেলিভিশনে দেখি প্রধানমন্ত্রী মানুষকে ঘর দিচ্ছেন। গুচ্ছগ্রামে ঘর দিচ্ছেন।

তখন আমি চিন্তা করলাম আমি ওখানে চলে যাব। এরপর এখানে চলে আসি। এখানে যেই ঘরে থাকি সেটা ঠিক ছোটখাটো একটি ফ্ল্যাটের মতো। এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। কারণ এর থেকেও অনেক খারাপ ঘরে থেকেছি আমি। আমার মনে হয় কি জানেন? বিপদে পড়ার পরে আমি ভালো একটি জায়গায় অবস্থান করছি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে আছি। এটি আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমি আর এখন নায়িকা নেই। আমার মেয়েটি হারিয়ে গেছে। কোথায় আছে সে, জানি না আমি। শেখ হাসিনার দয়ায় একমাত্র ছেলেকে নিয়ে এই বেদে পল্লীতে বেঁচে আছি।

ইচ্ছা থাকলেও এখন আর সিনেমায় কাজ সম্ভব নয় বলে আশা ত্যাগ করেন নব্বই দশকের এই নায়িকা। গান চর্চা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতেই জবাব দেন, সামনে গান করার ইচ্ছা আছে। গান তিনি ভালো গাইতে পারেন।

সবাই তাকে বনশ্রী নামে চিনলেও তার পুরো নাম সাহিনা সিকদার। মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার মাদবরেরচর ইউনিয়নের শিকদারকান্দি গ্রামে তার বাড়ি। বাবা মজনু শিকদার ওরফে মজিবুর রহমান শিকদার ও মাতা সবুরজানের (রিনা) দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে বনশ্রীই বড়।

বাবা ঠিকাদারি করার কারণে সাত বছর বয়সেই শিবচর থেকে পাড়ি জমান রাজধানীতে। ইট-পাথরের নগরীতে এসে নাম লেখান সিনেমায়, জনপ্রিয়তাও পান। তবে সুখের সময়টা খুব বেশিদিনের ছিল না। গর্ভে সন্তান আসায় বাধ্য হয়ে একটা সময় সিনেমা থেকে সরে যান। এরপর দারিদ্র্যের কবলে পড়ে বাস করেন এক বস্তিতে। কাজবিহীন অসহায় ও মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকেন। একটা সময় নিজের পেট চালানোর জন্য রাস্তায় রাস্তায় ফুল, বই বিক্রি করতেন।

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category