লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীরহাট ফেরীঘাটে অটকা পড়ে আছে পণ্যবাহী যানবাহনলক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌ-রুটে নাব্যতা সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে এ রুটে নৌ-যান চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে।
জোয়ারের পানিতে ফেরী এবং লঞ্চ চালাচল করলেও ভাটায় নদীপথে নৌ-যানগুলো আটকা পড়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এতে ফেরী দিয়ে যানবাহন পারাপার যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি লঞ্চঘাটে লঞ্চ ভিড়তে না পেরে রহমতখালী চ্যানেলের মাঝপথে নোঙ্গর করতে হয়।
ফলে দুর্ভোগে পড়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১টি জেলায় চলাচলকারী পণ্য এবং যাত্রীবাহী যানবাহন ও ভোলা-বরিশালমুখী লঞ্চযাত্রীদের।
বর্তমানে ঘাটে আটকা পড়েছে শতাধিক পণ্যবাহী যানবাহন। যদিও নাব্যতা সঙ্কট দূর করতে রহমতখালী চ্যানেলে ড্রেজিং প্রকল্প চলমান রয়েছে, কিন্তু নাব্যতা না বাড়ায় কোন কাজেই আসছেনা প্রকল্পটি। স্থানীয়দের মতে, বিআইডব্লিউটিএ এর ড্রেজিং প্রকল্পটি শুধুমাত্র লোক দেখানো।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌ-রুটে কলমীলতা, কৃষাণী ও কুসুমকলী নামে তিনটি ফেরী চলাচল করছে।
দিনে প্রতিটি ফেরী দুইবার চলাচল করে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ টি যানবাহন পারাপার করতে পারে। নদীতে নাব্যতা থাকলে আরও বেশি যানবাহন পারাপার করা যেত।
বিআইডব্লিউটিসি’র লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীরহাট ফেরী ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. কাউসার আহম্মেদ জানান, মজুচৌধুরীর হাট থেকে রহমতখালী চ্যানেলের দুই থেকে তিন কিলো মিটার এলাকায় নাব্যতা সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করে ফেরী পরিচালনা করতে হয়।
তিনি বলেন, নদীতে জোয়ার না থাকলে রতমতখালী চ্যানেলে ফেরী আটকা পড়ে। ভাটা শেষে পুনরায় জোয়ার আসলে ঘাটে ফেরী ভিড়তে পারে। এতে বেশ কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়।
ওই সময়ে ফেরী চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে ঘাটে যানবাহনের জট লেগেই থাকে। এদিকে রহমতখালী চ্যানেলে ড্রেজিং প্রকল্পে নিয়োজিত বিআইডব্লিউটিএ এর কারো সাথে এ বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
রবিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে মজুচৌধুরীর ফেরীঘাটে গিয়ে দেখা যায় পণ্যবাহী যানবাহনের দীর্ঘ জট লেগে আছে। গত কয়েকদিন থেকে প্রায় শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান এবং পিকআপ ফেরী পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। চট্রগ্রাম থেকে মুরগীর ফিডবাহী একটি কাভার্ডভ্যানের চালক জানান, গত ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে তিনি মজুচৌধুরীরহাট এসেছেন।
গন্তব্য বরিশালের দিকে। কিন্তু ফেরী সঙ্কটের কারণে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত এখানেই আটকা পড়ে আছেন। তার মতো অনেক পণ্যবাহী যানবাহন ৩-৪ দিন ধরে ফেরীঘাটে পড়ে আছে।
এতে তাদের চরম ভোগান্তি এবং লোকসানে পড়তে হচ্ছে। মোতাহার নামে আরেক ট্রাক চালক বলেন, রবিবার ভোরে তাদের বাহনকৃত একটি ফেরী ভোলা থেকে ছেড়ে আসে।
সকাল ৯টার দিকে ভাটা পড়ে গেলে মজুচৌধুরীরহাটের অদূরে রহমতখালী চ্যানেলে ফেরীটি আটকা পড়ে। পরে নৌকায় করে তিনি ঘাটে চলে আসেন।
বিকেলে জোয়ারের সময় আটকা পড়া ফেরীটি ঘাটে ভিড়ে। ড্রেজিং প্রকল্প নিয়ে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, গত কয়েক বছর থেকে নৌ-রুটকে স্বচল রাখতে রহমতখালী চ্যানেলে ড্রেজিং প্রকল্প চলমান থাকলেও বেশিরভাগ সময় ড্রেজার মেশিন বন্ধ থাকে। তদারকির অভাবে সঠিকভাবে ড্রেজিং না হওয়ায় নাব্যতা বাড়ছে না। এতে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে নৌ-যান চলাচল চরম ব্যাহত হচ্ছে।
Leave a Reply