শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
জাতির পিতার সমাধিতে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন প্রতিবন্ধীদের মূল ধারায় আনার প্রচেষ্টা আছে সরকারের : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান আন্তজার্তিক পর্যায়ে বাংলাদেশ পুলিশ আর্চারি ক্লাবের স্বর্ণ জয় কিশোর গ্যাং এর প্রধান ডাকাতি মামলার আসামী গ্রেফতারের নিউজ করায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা মির্জাপুরে আল-হিদায়াহ সংগঠনের উদ্যোগে ভেঙ্গে যাওয়া ব্রীজ সংস্কার সিংড়া বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের আগুনে ১৩টি দোকান ভূস্মীভূত থাই পিএমও-তে প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ আন্তরিক অভ্যর্থনা গ্রাহকের অর্ডারের অ্যাপল পণ্য যেভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন স্ক্যামাররা নালিতাবাড়ীতে বন্যহাতির আক্রমণে কৃষকের মৃত্যু

আগুনের অন্তর

রিপনচন্দ্র মল্লিক
  • Update Time : সোমবার, ১০ জানুয়ারী, ২০২২
  • ১৮২ Time View
চিত্রকর্ম: নিকোলাই দিমিত্রিয়েভ অরেনবুর্গস্কি

তখন প্রায় গাঢ় অন্ধকার। এক হাত দূরে পড়ে থাকা কোন কিছুও তেমনভাবে চোখে দেখা যায় না। চারদিকে সুনশান নীরবতা। তবে প্রকৃতির নিজস্ব শব্দগুলো বেশ জোরেশোরেই কানে ভেসে আসছিল। মাটিতে পড়ে থাকা শুকনো পাতা কিংবা গাছগাছালির ভাঙাচোরা টুকরো ডালপালা অথবা অন্য কোন তুচ্ছ শুকনো লতাগুল্ম কুয়াশার হিমে চুপসে আছে।

আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাছের সতেজ ডালপালা কিংবা ঝোপ ঝাড়ের লতাপাতাগুলো অনেক আগেই ভিজে জবুথবু হয়ে বসে আছে, ভীষণ নীরবতায়। এই সকল গাছপালা কিংবা লতাপাতার গা চুইয়ে চুইয়ে জমে থাকা কুয়াশাগুলো টুপটাপ করে ঝরে পড়ছে–তার আওয়াজ খুব ছোট্ট করে পাওয়া যাচ্ছে। পুরো ব্যাপারটাই একটু থমথমে এবং ভীতিময়। হঠাৎ একটি শিরিষ গাছের কোঠর থেকে অদ্ভুত রকমের শব্দ কানে ভেসে আসে।

সম্ভবত পেঁচার ডাক হবে। শব্দগুলো আরো একটু নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা মনোযোগ সহকারে কান পেতে রাখতেই স্পষ্ট করে বুঝতে পারা গেল- এক জোড়া ভুতোম পেঁচা তার নিজস্ব ভঙ্গিমাতে ডেকে চলেছে। এমন গাঢ় অন্ধকারে ভুতোম পেঁচার ডাক শুনে শরীরে রীতিমত একটু ঝাঁকুনিই আসলো। আমাদের কাছে কেবল একটি টর্চলাইট। লাইটের ব্যাটারী প্রায় শেষের পথে। তাই আলো জ্বলে কিন্তু সেই আলোর গতি বেশি দূরে গিয়ে পৌছায় না।

আবছা কিংবা মৃদু অথবা কোন রকমের দুর্বল শক্তির ব্যাটারির টর্চ লাইটটির ক্ষীণ আলো জ্বেলে জ্বেলে আমরা হেঁটে চলেছি। আমাদের পথ যেন কিছুতেই ফুরতে চাচ্ছে না। আমরা যতই হেঁটে হেঁটে পথ শেষ করছি; মনে হচেছ যেন এই চিরচেনা পথটি ততোই আমাদের কাছে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে যাচ্ছে। আমরা খুব সাবধানে পা ফেলছি; একে তো গাঢ় অন্ধকার পথ তার উপরে আমরা ঝোপ-জঙ্গল ও গাছপালায় ঘেরা মেঠো পথ ধরে হেঁটে চলছি।

মনের ভেতরে ভয় লাগছে যে, পায়ের নিচ কোন সাপ-জন্তু পড়ে না যায়। এই অন্ধকারে বিষাক্ত সাপের হাটা-চলা তো হতেই পারে। কিন্তু হঠাৎ মনে পড়ে গেল যে ছেলেবেলায় মা বলেছিলÑশীতে সাপ কিংবা অন্য কোন জন্তু গর্ত থেকে খুব বেশি বাইরে বেড়িয়ে ঘোরাফেরা করে না। কথাগুলো মনে পড়ায়, কিছুটা স্বস্তি পেয়ে গেলাম। যাক, বাবা। এই অন্ধকারে হয়তো পায়ের নিচে সাপ পড়ার সম্ভবণা নেই।

যদি, কোন রকমে একটি বিষধর সাপকে পায়ের নিচে পাড়া দিয়েই বসি; তাহলে আর রক্ষা নেই। প্রাণের অন্তিম সময়টুকু এই জঙ্গল ঘেরা অন্ধকারেই রেখে যেতে হবে। তবুও, এই অন্ধকারের গুমোট পরিবেশে কিছুটা ভয় আমাদের অন্তরটাকে; ঠান্ডা বাতাসে গরম পোষাক জড়ানোর মতোন জাপটে ধরেছে।

আমরা রাতের অন্ধকারে হাঁটছি আর হাঁটছি। এখন রাতই আমাদের জীবনের একমাত্র ভরসা। রাতকেই আমরা এখন প্রেমিকার মত করে ভালোবাসি। কখনো ভাবতে পারিনি, এই রাতই হবে আমাদের সুরক্ষার কবচ। আকাশের বুক চিরে সূর্য উঠলেই আমরা আড়ালে চলে যাই। অপেক্ষা করতে থাকি কখন সূর্য পশ্চিম আকাশের শেষ সীমান্তে গিয়ে ডুবে যাবে; এবং আমরা আবার প্রাণ ফিরে পাবো। এখন রাতের অন্ধকারই আমাদের নতুন করে বেঁচে থাকার দিশা দেখায়; স্বপ্ন যা কিছু অবশিষ্ট আছে– সবই এখন এই অন্ধকারের চাদরে বিছিয়ে রেখেছি।

আমাদের মনে পড়ে, আমরা যখন ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে পড়ি তখন শরৎকাল শুরু হয়েছিল, তবে আমার পছন্দ ঘন বর্ষার দিন। আমি ঘন বর্ষার দিনে আরাম করে ঘুমিয়ে থাকতেই পছন্দ করি। আমাদের একুশে বন্দরের একটি টিনের ঘর। চার পাশে বরান্দায় ঘেরা। মূল ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতে হলে বারান্দা পেরিয়ে যেতেই হবে। চারপাশে থাকা বারান্দায় একটি করে দরজা রয়েছে। আমি ঘরের দক্ষিণ পাশের বারান্দাতে ঘুমাতাম।

দক্ষিণ পাশের বারান্দা হলেও আসলে এই বারান্দাটি ঘরের পেছনের দিকে ছিল। বরান্দার পরেই একটি খাল বহুদূরে চলে গেছে। সেই ছোটবেলা থেকেই এই খালের জলে শরীর ডুবিয়ে ডুবিয়ে বড় হয়েছি। ছোটবেলায় এই খালটিকে একটি বড় নদী মনে করতাম। জলের স্রোতের দিকে তখন তাকালে মনে হতো–এই জলের স্রোত কোন দূরের দেশে আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে; যা আমার কাছে পুরোই অচেনা।

তবুও এই খালটিকেই আমরা ভালোবাসতে থাকি। মাছ ধরা, গোসল করা, খালের জলের প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে ডিঙি নৌকায় করে জিনিসপত্র আনা-নেওয়া সবই করতাম; যখন খালের জল ভাটার টানে কমে আসত; মূলত তখনই আমরা খালের জলে নিজেদের ভাসিয়ে নিতাম। তখন কেউ আমাদের বাঁধা দিত না। তবে এখন আর সেই খাল নেই; এখন আমরা যা দেখি সেটাকে আমরা আগের তুলনায় বলতে পারি নালা।

যদিও এখনো সেই খালটির যতটুকই টিকে আছে; সেটিই অনেক বড় কথা। এখনো ছোট ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে কাউকে না কাউকে মাছ ধরতে নেমে পড়তে দেখি। যে কথাগুলো বলছিলাম আমাদের টিনের চালের ঘরে রিমঝিম বৃষ্টির শব্দে আমি ঘুমাতাম। কখনো কখনো ঘরের পেছনে পড়ে থাকা খালটিতে বৃষ্টির ফোটা ঝড়ে পরার নান্দনিকতার দৃশ্য দেখে দেখে মুগ্ধ হতাম।

তখন মনের ভেতরে কবি হওয়ার ইচ্ছে জেগে উঠত। মনে মনে বিড়বিড় করে চেষ্টা করতাম, ওই মনোরম প্রাকৃতিক নৈসর্গের দৃশ্য দেখে দুই কিংবা তিন লাইনের কোন নতুন কবিতার ছন্দ আবিস্কার করতে পারি কি না? কিন্তু চেষ্টা করে এক লাইন কিংবা দেড় লাইন আবিস্কার করতে পারলেও মুহুর্তেই আবার সেই লাইনগুলো ঝড়ে পড়া বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ভুলে যেতাম; তাই আর কখনোই আমি কবি হতে পারিনি। কবি হওয়া কি চাট্টিখানি কথা? কবিরা তো কবি হতেই জন্ম নেয়।

আমাদের বাড়িটি গ্রামের ভেতরের সবচেয়ে আদি বাড়ি ছিল। বংশ পরম্পরায় আমরা এই বাড়িতেই বসবাস করে আসছি। আমাদের ধারণা নেই যে ঠিক কত বছর আগে আমাদের এই বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অথবা কে এই বাড়িটি প্রথম এই গ্রামের এসে গড়ে তুলেছিল। কম করে হলেও এই বাড়িটি আমাদের কত জন পূর্ব পুরুষের ভিটে মাটি হবে, সেটি অনুমান করেও আমার পক্ষে এই মুহুর্তে বলা সম্ভব না।

তা যদি বলতে হয়, তাহলে জমির দলিল পর্চা না দেখে বলা কঠিন। কিন্তু এই ভিটে মাটিতে আমাদের দীর্ঘ দিনের বসবাস। কয়েক শতাব্দি যে পেরিয়ে গেছে, এই মুহুর্তে আমার জন্য তা বলতে পারা অনেক দুস্কর। গত দশ থেকে বারো প্রজন্মকে যদি হিসেবে ধরি তাহলেও তা পাঁচশ থেকে ছয়শ বছরের বেশি হয়ে যায়। আমরা মনে করি আমাদের এই ভিটেমাটিতে তারও অনেক বছর আগে থেকেই আমাদের বসবাস।

তো যাই হোক, আমাদের বাড়িটি পাঁচ বিঘা জমির উপরে দাড়িয়ে আছে। বাড়িটির দুই পাশে সারি সারি করে; আমাদের বংশ পরম্পরার অংশীদারগণ ঘর তুলে বসবাস করছি। লম্বা আকৃতির বাড়িটির দুই পাশে সারি সারি করে আমরা দুই ডজন পরিবার এখনও টিকে আছি।

এই টিকে থাকা তো জীবনের সাথে যুদ্ধ করে কোন রকমে বেঁচে থাকা। মুক্তিযুদ্ধের বছর থেকে সেই যে ভারতে চলে যাওয়া শুরু হয়েছিল তা আর এখনো ফেরানো সম্ভব হয়নি। আমাদের বংশের সকলেই যদি এই বাড়ি, মানে এই দেশ ছেড়ে চলে না যেত; তাহলে এই পাঁচ বিঘার বাড়িতে মানুষের চাপে আর যাই হোক, এই বাড়িতে কোন ভাবেই বসবাস করা যেত না। তখন হয়তো আমরা দেখতে পেতামÑআমাদের এই বাড়ির চারপাশে ছড়িয়ে কেবল বাড়ির আয়তন বেড়েই যেত; কিন্তু তা আর হয়নি। কেবল মানুষ কমেই গেছে; এবং বাড়ি যা ছিল, তাই-ই রয়ে গেছে।

আমাদের ঘরটিকে যদি বাদ দেই; তাহলে আমাদের বাড়ির বাকী যে ঘরগুলো আছে; সেই ঘরগুলোর আয়তন আমাদের ঘরের চেয়ে অনেক ছোট এবং জৌলুসহীন। অনেকটাই জীর্ণ ন্যাকরার মতন। অধিকাংশ ঘরের চালের টিনগুলো মরিচা পড়ে গেছে। আবার ঘরের বেড়ার টিনগুলো অনেক পুরনো হয়ে গেছে। তবে আমাদের ঘরটিও বেশ কয়েক বছর আগে এমন মরিচা পড়া ও পুরনো দিনের হয়ে পড়েছিল।

বছর দুয়েক আগে সংস্কার কাজ করায়; আমাদের ঘরটি বাড়িতে সবার ঘরের চেয়ে বেশি উজ্জ্বল ও বড় আয়তনের হয়ে বসে আছে। তাই বাড়ির ভেতরে যে কেউ ঢুকলেই বাড়ির মধ্যখানে উঠান রেখে দুই পাশের সারিবদ্ধ ঘরগুলোকে দেখেই বুঝে উঠতে পারবে যে এই বাড়িতে আমাদের পরিবারের আধিপত্য বিস্তার সবচেয়ে বেশি ছিল। তবে, কালের পরিবর্তনে এখন সেই প্রভাব অনেক কমে গেছে।

তারপরও যৎসামান্য প্রভাব এখনো টিকে আছে। আমরা কখনোই সে প্রভাব ব্যবহার করিনি অথবা বলতে পারেন ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তা পড়েনি। কিন্তু এখন আমরা কিছু হলেই ভীতু হয়ে পড়ি। আমাদের বুকের ভেতরের জমে থাকা আগুনের অন্তর এখন আর আগের মত দাউদাউ করে জ¦লে ওঠে না। এখন তা দ্রুতই নিভে যাওয়ার প্রতীক্ষায় তেলহীন প্রদীপের মতই মিটিমিটি করে জ্বলছে।

যাই হোক যে কথা বলছিলাম, সেই রকম এক ঘন বর্ষায় আমরা ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি। আমার মনে পড়ে সেদিন কী অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছিল। শরতের আকাশ হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আকাশজুড়েই মেঘের উন্মাদনা ছিল। চারদিক দিন রাত বৃষ্টিতে একাকার হয়ে উঠেছিল। কিছুতেই থামছিল না। তবে মুষল ধারার বৃষ্টি বলতে আমরা যা বুঝি, ঠিক সেই রকম মুষল ধারায় বৃষ্টি ঝরে পড়ছিল না। তবে বৃষ্টির ধারা ছিল গ্রামের মেঠোপথ ধরে ষাটোর্ধ্ব কোন এক বৃদ্ধ লোকের লাঠিতে ভর করে হেঁটে চলার মতন। তেমন এক বৃষ্টিমুখর মধ্য রাতে ঘর ছেড়ে আমরা বেড়িয়ে পড়েছিলাম।

আমরা যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম; তাতে ওই রকম বৃষ্টিময় গভীর রাতেই আমাদের ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে পড়তে হয়েছিল। তখন অবশ্য ওই বৃষ্টি খুব দরকারই ছিল। বৃষ্টির পরশে সহজেই আগুনের তেজগুলো নিস্তেজ হয়েছিল। যাই হোকÑ এমন একটি ঘটনা যে ঘটে যাবে কিংবা ঘটে যেতে পারে; সে বিষয়টি আমরা কখনো বিশ্বাস করতে চাইনি যে, এমন একটি পরিস্থিতির ভেতরে আমরা পড়ে যাব।

তবে আমাদের মনে একটু একটু সংশয় ছিল যে এমন একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটলেও ঘটে যেতে পারে। তবে আমরা ধরে নিয়েছিলাম যে, রাষ্ট্র ব্যবস্থা যে অবস্থায় এখন আছে; এই সময়ে এমন কোন ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই। কিংবা কেউ হয়তো সাহস করবে না। ক্ষমতায় থাকা রাষ্ট্রপক্ষের নেতৃবৃন্দকে টিভিতে/পত্র-পত্রিকায় অহরহ বক্তৃতা দিতে দেখা যায় যে তারা অসাম্প্রদায়িক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এই দেশটিকে গড়ে তুলতে চায়।

তবে, মনের ভেতরে মৃদু আংশকা ছিল যে ‘হয়তো ঘটতেও পারে’। তবে সত্যি সত্যি ঘটে যাবে তা আমরা কখনোই সিরিয়াসলি ভাবিনি। তবে শেষ পর্যন্ত ঘটনাটি ঘটেই গেল। তারপর থেকে আমরা দৌড়ের উপরেই আছি। দৌড় আর আমাদের কিছুতেই ছাড়ছে না। আমরা দৌড়কে ছাড়ছি না। দৌড়ও আমাদের সাথে বন্ধুত্ব করে নিয়েছে। দৌড় এবং আমরা মিলেমিশে গেছি। তবে অন্ধকারের নির্জনতা, কোলাহলহীন প্রকৃতিই আমাদের মূল নির্ভরতার ভরসা হয়ে গেছে।

যে কথা বলছিলাম আমাদের ঘরের চেয়ে বাড়ির অন্য ঘরগুলোর জীর্ণদশাই; বাড়িতে আমাদের পরিবারের আভিজাত্যটুকু এখনো ধরে রেখেছে। যদিও এখন যুগ পাল্টে গেছে। মানুষেরা আগের চেয়ে এখন বেশি শিক্ষিত হয়েছে। ফলে এক ধরনের সামাজিক পরিবর্তন এসেছে। এখন আর কেউ আগের মত যার যার বাড়িতে কাউকে মাদবর মানতে চায় না। সব পরিবারই এখন নিজেরাই নিজেদের সিদ্ধান্ত নেয়।

কিন্তু আগেকার দিনে বাড়ির মাদবরের দেওয়া যে কোন সিদ্ধান্ত ছিল, শেষ কথা। ফলে গ্রামের গোষ্ঠি কেন্দ্রীক মাদবরদের মাতুব্বিরা কমে গেছে। এখন আর সমাজে কেউ কাউকে কোন কিছু চাপিয়ে দিতে পারে না। সেইসব দিন এখন আর নেই। অনেক বছর আগে থেকেই, তা হারিয়ে যেতে বসেছিল। এখন দিনে দিতে তা বিলুপ্তর পথে চলে এসেছে।

সেদিনের এত বড় ঘটনাটি যদি এমনভাবে ঘটে না যেত; তাহলে হয়তো এভাবে পলাতক হওয়া দরকার না। এখন আমরা আসলে ভয়ে পালিয়ে থাকি। নিরুদ্দেশ হয়ে থাকি। ঘটনাটি যখন ঘটে আমরা বাড়িতে ছিলাম না। অনুমান করি তখন ঘড়ির কাটায় রাত এগারোটা কিংবা সোয়া এগারটা। আমি ও আমার ছোট ভাই আমাদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরের ছোট্ট বাজারে ছিলাম। বাজারটি আসলেই খুব ছোট্টই। এখনো পুরোপুরি বাজার বলা যায় না।

তবে বোঝা যাচ্ছে দিনে দিনে এই ছোট্ট বাজারটি আরো অনেক বড় হবে। আমাদের গ্রামের মূল রাস্তা থেকে একটি শাখা-রাস্তা গ্রামের ভেতর দিয়ে, প্রাইমেরী স্কুলের পাশ ঘেঁষে আমাদের বাড়ির দিকে চলে এসেছে। তবে, আমাদের বাড়িতেই রাস্তাটি এসে শেষ হয়নি, সে আরো বহুদূরে চলে গেছে; ওই রাস্তার একটি বাঁকে ছোট ছোট কয়েকটি মুদি দোকান ও কাঁচা-তরকারির পসরা নিয়ে ছোট্ট বাজারটি গড়ে উঠেছে। বাজারের শুরুতে অবশ্য একটি চা’য়ের দোকান ছিল। সেই চা’য়ের দোকান ঘিরেই গত দশ বছরে এই ছোট্ট বাজারটি গড়ে উঠেছে। গ্রামের মানুষেরা বাজারটিকে ‘বাঁকের বাজার’ নামেই ডাকতে শুরু করেছে।

আমাকে হঠাৎ করে মা ফোন করে বলতে থাকে–‘আগুন, বাড়িতে আয়। বাড়িতে আয় বাবা আগুন। আমাদের সারা বাড়িতে এখন আগুন।’ আমি মায়ের মুখ থেকে কথাগুলো শুনেই থতমথ খেয়ে গেলাম। কী করবো না করবো বুঝতে পারছিলাম না। সঙ্গেই ছিল ছোট ভাই। আমার ফোন সেটের ভলিউম (শব্দ) বাড়ানো থাকায় মায়ের ফোনের কথাগুলো আমার সঙ্গে থাকা ভাইও শুনে ফেলে। আমরা দুজনেই চিন্তিত হয়ে পড়ি।

তখন আর কোনকিছু না ভেবেই, আমরা বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করি। খুব বেশি সময় লাগেনি। আমরা মিনিট পাঁচ সাতের ভেতরেই বাড়ির কাছে চলে আসি। এরমধ্যেই অবশ্য আমরা একটা শোরগোল শুনতে পাই। সেদিন দুর্গা পূজার নবমীর রাত ছিল। আমরা একদিন আগে থেকেই শুনতে পাচ্ছিলাম এবং ইন্টারনেটের সামাজিক মাধ্যমগুলোতে দেখতে পাচ্ছিলাম, আমাদের পাশের গ্রামের একটি পূজামন্ডপে গভীর রাতে কে বা কারা যেন পবিত্র কোনআন শরীফ রেখে গেছে। এখন তা নিয়ে সেই পুরো গ্রামজুড়ে অস্থিরতা চলছে। ঘটনার পরের দিন লোকজনে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই পূজামন্ডপে হামলা চালায়।

ভেঙ্গে ফেলে মন্ডপের সকল প্রতিমা। আমাদের মনেও তখন থেকেই সংশয়, আতংক কাজ করছিল। পাশের গ্রামের অস্থিরতার রেশটা আমাদের গ্রামেও এসে পড়তে পারে; সেই আতংকে ভেতরে ভেতরে আমরা সত্যি সত্যিই কিছুটা ভয় পাচ্ছিলাম। কে জানে কখন কি ঘটে যায়? আমাদের বাড়িতে গত একশ বছর ধরেই দুর্গা পূজা হয়ে থাকে। আমরাই বাড়িতে পূজার আয়োজন করে থাকি। তাই ঘটনার পর থেকে আমরাও একটু ভয়ে ভয়ে আছি। কিন্তু আমরা যে ভয়/আংশকা করছিলাম আমাদের সেই আশংকাই ঘটে গেল। আমরা বাড়িতে প্রবেশ করেই দেখি সবকিছু লন্ডভন্ড।

মন্ডপে কোন প্রতিমাই এখন আর দাঁড়িয়ে নেই। সব ভেঙ্গেচুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। বাড়িতে সারি সারি করে দাঁড়িয়ে থাকা ঘরগুলোতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আমরা বাড়িতে আসতে আসতে আগুনের তেজও বেড়ে গেছে। ঘর থেকে সবাই বেড়িয়ে এসে বিলাপ করছে। বাড়ির লোকজনের কান্নায় চারপাশ ভারী হয়ে গেছে। আমাদের বাড়িটি শহর থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় এখানে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন কিংবা প্রশাসনের কর্তাদের আসা কিছুটা কঠিন; বাড়ির পাশের বড় খালটি থেকে আমরা কেউ কেউ বালতি ভরে জল তুলে ঘরের আগুন নেভানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে থাকি।

কিন্তু আগুনের লেলিহান এতই ক্ষিপ্র যে আমাদের সে চেষ্টা কোন কাজেই লাগছে না। আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আগুনের তান্ডব দেখছিলাম। বাড়ির আরো যারা আছেন তারা কেউ কেউ কান্নার সাথে সাথে ঘর থেকে জিনিসপত্র বের করে আনছিল। ঠিক, এমন মুহূর্তে আরো একদল লোকজন হাতে লাঠি সোটা, রামদা নিয়ে আবারো আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করে। তারা তখন সরাসরি আমাদের ঘরসহ আরো আধা-পোড়া ঘরগুলোতে ঢুকে কিছু কিছু দামি দামি জিনিসপত্র বের করে বাহিরে নিয়ে আসতে লাগলো। তখন কেউ কেউ বাঁধা দিতে এলে কারো কারো গায়ে, হাতে থাকা লাঠির/রাম দা’য়ের আঘাতে দমিয়ে রাখে।

আমরা তখন দেখতে পাচ্ছিলাম ওরা আমাদের ঘরেও দলবলে ঢুকে পড়তে শুরু করে। তখন আর আমরা থেমে থাকিনি। আমাদের বাঁধার মুখেও দুইজন লোক হাতে রাম দা, বাঁশের লাঠি নিয়ে ঘরে ঢুকে দামি মালপত্র ভাংচুর ও লুটপাট করতে শুরু করে। আমরা বারবার তাদেরকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করতে থাকি। আমি বলতে থাকি ভাই, আমাদের আর কোন ক্ষতি কইরেন না। আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। ভাই থামেন।

থামেন ভাই। আর ভাংচুর কইরেন না। কিন্তু তারা ভীষণ বেপরোয়া। তাদের হাতে থাকা লাঠির/রাম দা’য়ের আঘাতে আমাদের আলমারি, চেয়ার টেবিল, টেলিভিশন, ফ্রিজসহ যাবতীয় যা কিছু জিনিসপত্র চোখে পড়ছিল সবই ভেঙে ফেলছে। তাদের গায়ে যত জোর আছে সব শক্তি দিয়েই তারা বারি মারছে। আর সব কিছু চূর্ণ-বিচূর্ণ হচ্ছে। বাড়িতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। ওদিকে অন্য সব ঘরের ভেতরেও আমাদের বাড়ির স্বজনদের হাউমাউ শব্দ শুনতে পাচ্ছি। কিছুক্ষণের ভেতরেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের বাড়িতে আরো অনেক মানুষ ঢুকে পড়েছে।

এমন এক ভীতকর পরিস্থিতি চোখের সামনে এসে পড়ায়; আমরা তখন আর সহ্য করতে পারিনি। জীবনের মায়া সব ভুলে গেলাম। কী করবো না করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। হঠাৎ আমাদের মাথায় রক্ত উঠে যায়। প্রতিশোধের নেশা ঝলক মেরে রক্তের শিরায় চমকে ওঠে। আমরা আমাদের ঘরে থাকা শাবল ও কুড়াল নিয়ে দ্রুতগতিতে অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়া লুটকারী দুইজনের মাথায় সজোরে বারি দিতে থাকি; এবং মুহূর্তেই তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তখন আমরা দেখতে পাই তাদের থেতলে যাওয়া মাথা থেকে মুহূর্তের ভেতরেই রক্তের স্রোতধারা আমাদের ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ে।

রক্তের দলা ছিটকে আমাদের হাতে, মুখে আর গায়ে এসে লাগে। আমরা বুঝতে পারি তারা মরে গেছে। আমরা কাউকে কিছু বুঝে উঠতে দেই নি। বাহিরে অনেক শোরগোল হচ্ছে। কান্নাকাটি। হৈচৈ। ঘরের খাটের উপরের বিছানো তোষকখানা উঠিয়ে আমি ওই মৃত লুটকারীদের দেহের উপরে দ্রুত গতিতে বিছিয়ে দেই। যাতে, কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমরা সরে যেতে পারি। আমরা কোন রকম কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে দ্রুত দুই ভাই ঘর থেকে বাইরে বেড়িয়ে এসে পড়ি; এবং পালাতে শুরু করি।

যখন বাড়ি থেকে আমরা বের হই, তখন দেখি আমাদের বাড়ির পাশের মোল্লা বাড়ি ও সরদার বাড়ি থেকে কয়েকজন যুবক, যাদেরকে আমি চিনি। তারা ছুটে এসে আমাদের বাড়ির আগুন নেভাতে চেষ্টা করছে। লুটকারী কারো কারো হাত থেকে কিছু কিছু মালামাল রক্ষা করার চেষ্টা করছে। তবে লুটকারীরা কিছুতেই কারো কথা শুনতে চাচ্ছে না। তাদের অনেকরেই মুখে তখন অশ্লীল গালাগালি খইয়ের মতন ফুটছে, তারা প্রচন্ড ক্রোধের সাথে বলছে‘ওদের এই দ্যাশে থাকতে দিমু না। মালাউনের বাচ্চাগো মাইরা ফ্যালা। শালাগো এই দ্যাশে কোন জায়গাই দিমু না।

খানকির পোলারা বেশি বাইরা গেছে। কোরআন শরীফ মালাউন শালাগো মূর্তির পা’য়ের কাছে রাখে। কত বড় দুঃসাহস খানকির পোলাগো। কোরআন শরীফ থাকে আমাগো বুকে। খানকির পোলারা সেটা রাখে পায়ে।’ তখন সকলের চোখে মুখে ক্রোধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। হঠাৎ করে আমরা শুনতে পাচ্ছি দূরের বাতাসে পুলিশের গাড়ির হুইসেলের শব্দ ভেসে আসছে। কয়েক মিনিটের ভেতরেই পুলিশের গাড়ির সেই হুইসেলের শব্দ আমাদের বাড়ির আরো খুব কাছেই চলে আসে। আমরা বুঝতে পারি, এখানে আর বেশিক্ষণ আমরা থাকতে পারবো না। আমাদের নিরুদ্দেশ হতে হবে।

তখন আকাশে অনেক কালো মেঘ জমেছিল। গভীর রাত হলেও অন্ধকারের আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল আমাদের বাড়ির দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠা আগুনের কালো ধোঁয়ায় পুরো আকাশটাকে ঢেকে ফেলেছে। আকাশের মেঘ আর আমাদের বাড়ির আগুনের কালো ধোঁয়া মিলেমিশে যেন একাকার হয়ে গেছে।

যাই হোক এরপর থেকে আমরা পালাতে শুরু করি। আমরা নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখি; বৃষ্টির ছোঁয়া লেগে লেগে আমাদের হাতে মুখে লেগে থাকা ছোপ ছোপ রক্তের দাগ শরীর থেকে ধুঁয়ে ধুঁয়ে যাচ্ছিল। তবে তা কিছুতেই টের পাচ্ছিলাম না। তখন মনের ভেতরে দ্রুতগতিতে আমাদের বাড়ি, পুকুর, খাল, বিল, জমির আলপথের পথ পেরোনোর তাড়া আমাদের পেছেনে দৌঁড়াচ্ছিল। আমরা তখন থেকে ছুটছি তো ছুটছি।

সেই থেকে অনেক দিন ধরেই আমরা ছুটেই চলেছি। আমাদের পথ যেন কিছুতেই শেষ হয় না। আমরা দিনের বেলাতে ছুটতে পারি না। লুকিয়ে থাকি, অন্তরীণ হয়ে থাকি। আমাদের চারপাশে ভয় কাবু করে রাখে। আমরা দিনের প্রখর সূর্যের আলোর ভেতরে নিজেদের কখনো খুঁজে পাই না। আমরা আত্মগোপনে চলে যাই। যেন কেউ আমাদের দেখতে না পায় কিংবা বলতে পারি, আমরা যেন কারো নজরে না পড়ে যাই।

আমাদের মাথায় সেটি অন্ধকার শেষ হতে হতেই ঘুরতে শুরু করে; তখন আমরা কোন একটি সমাধানের পথ বের করতে শুরু করি। কিন্তু আমাদের হাতে খুব বেশি বিকল্প সমাধানের পথ খুঁজে পাই না। খুঁজে পাবোই বা কী করে? আমাদের কাছে তো এখন কোন বিকল্প নেই। আমরা তাই প্রতিদিনের মত একই ধরনের পদ্ধতি গ্রহণ করে দিনের আলোতে নিজেদের লুকিয়ে রাখি। লুকানোই আমাদের হাতে একমাত্র উপায় থাকে। আমরা তাই নতুন করে অন্ধকার প্রকৃতির কাছে ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা দিনের আলোর কাছ থেকে নিজেদের লুকিয়ে ফেলি যাতে আমরা নিরাপদে থাকি। কিন্তু কখনো কখনো আমরা ভীষণ ক্লান্ত হয়ে যাই। মনে হয়, আর পারছি না।

এভাবে কতদিন লুকিয়ে বেঁচে থাকা যায়। ফেরারী জীবন বড় বিপন্নময়। তাই কখনো কখনো ভাবতে থাকি আলোময় দিনের পৃথিবীতে ফিরে যাবো। যেখানে ফিরে পাবো সেইসব সোনাীল দিন; রূপালি নক্ষত্রের রাত কিংবা অপরূপ চাঁদের জোসনায় ভিজে একাকার হয়ে সুখে মেতে উঠা পুরনো দিনগুলো; কিন্তু কিছুতেই আর ফিরে যেতে পারছি না। আমাদের ভয় তাড়া করে ফিরছে। আমরা এখন ভীত হয়ে আঁধারে ঘুরে বেড়াই। কিন্তু আমরা তো অনেক সাহসী ছিলাম। আমাদের টগবগে আগুনে গলানো জলন্ত লাভার মতন অন্তর ছিল। আমরা যখন তখন যে কোন কিছুই পুড়িয়ে ফেলতে পারতাম।

কিন্তু এখন আর পারি না। আমরা পালাতে থাকি। কিন্তু পালিয়ে কোথায় গিয়ে নিরাপদ আশ্রয় নেবো, পুলিশের কিংবা সেই সব লোকজনের আতঙ্কে তা খুঁজে পাচ্ছি না। আমাদের বুকের আগুনের অন্তর পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। অনেক বার ভেবেছি চলে যাবো। চিরতরে দেশ ছেড়ে চলে যাবো। কখনো আর ফিরে আসবো না। কিন্তু পারিনি। শেকড়েরর টানে চলে যেতে পারিনি। আমাদের ওই বাড়িতেই আমার বাবা, দাদু, পরদাদুসহ আরো আরো অনেক বংশপরম্পরার আত্মা লুকিয়ে আছে।

আমাদের বাড়ি ভর্তি গাছপালা, আরো অনেক শরীকের প্রিয় মুখগুলো চোখের সামনে বার বার ভেসে আসে। মনে পড়ে যায় আমার মায়ের মুখ। এই দেশ ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না। আমরা বাড়িতেই ফিরে যেতে চাই যেখানে আমাদের মা হয়তো বাড়ির সামনের দীর্ঘ পথের দিকে তাকিয়ে ডাকছে আগুন, তুফান। আয় তোরা। ফিরে আয়। আমাদের আগুনে পোড়ানো অন্তর পুড়ে ছাই হলেও বাড়ি ফেরার নতুন পথ খুঁজে চলেছি।

সূত্র:বি‌ডি‌নিউ‌জের সৌজ‌ন্যে

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category