বিশ্বব্যাপী মানুষের ভরসার কথা মাথায় রেখে প্রসিদ্ধ টেক কোম্পানি অ্যাপল নানাবিধ পরিষেবা দিয়ে থাকে। আর এতে তাদের জনপ্রিয়তা এবং ব্যবসায়িক লাভ দুইই সময়ের সঙ্গে বাড়ে। কিন্তু এবার কোম্পানির ‘লাভের গুড় পিঁপড়ে খেয়ে গেছে, থুড়ি অন্য কেউ ফায়দা লুটে নিয়েছে’!
সম্প্রতি জানা গেছে, অ্যাপলের একটি প্রোডাক্ট ডেলিভারি ফিচারের সুযোগ নিয়ে সাইবার ক্রিমিনালরা দুই বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। এতে করে একাধিক গ্রাহক আর্থিক কেলেঙ্কারির মুখে পড়েছেন।
অন্যের নামে অ্যাপল প্রোডাক্ট কেনেন ধনী স্ক্যামাররা
সম্প্রতি ‘ব্ল্যাক হ্যাট এশিয়া’ কনফারেন্সে সাইবার ক্রাইমের একটি স্কিম সামনে এনেছেন সিকিউরিটি রিসার্চাররা। যেখানে অনলাইন অ্যাপল স্টোরের ‘সামওয়ান ইলস উইল পিক ইট আপ’ বা সোজা বাংলায় ‘অন্য কেউ এটি নেবে’ ফিচারটি কাজে লাগিয়ে কীভাবে স্ক্যামাররা মাত্র দুই বছরের মধ্যে চার লাখ ডলারের বেশি আয় করেছেন, তার চাঞ্চল্যকর তথ্য ধরা পড়েছে।
৯টু৫ ম্যাকের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই স্ক্যামটির নাম ‘পয়জন অ্যাপল’, যা দক্ষিণ কোরিয়ার ক্রেগলিস্ট এবং ইবর মতো সেকেন্ড হ্যান্ড অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ডিসকাউন্টে অ্যাপল প্রোডাক্ট কেনার সময় কার্যকর হয়।
এক্ষেত্রে একবার কোনো ক্রেতা, প্রোডাক্ট কেনার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলে, অপরাধীরা তাদের ক্রেডিট কার্ড জাতীয় বিশদ চুরি ও ব্যবহার করে আসল অ্যাপল স্টোর থেকে একই জিনিস কেনেন। তবে, হোম ডেলিভারির অপশন সিলেক্ট করার সময় তারা ‘অন্য কেউ এটি নেবে’ অর্থাৎ যে ক্রেতার নামে অর্ডার হচ্ছে, তিনি ছাড়া অন্য কেউ প্রোডাক্ট রিসিভ করবে– এই বিকল্পটি বেছে নেন। এতে করে একদিকে আসল ক্রেতা গোটা কেলেঙ্কারি সম্পর্কে কিছু জানতেই পারেন না, অন্যদিকে তার সরকার কর্তৃক ইস্যু করা আইডি বা কিউআর কোড/অর্ডার নম্বর ব্যবহার করে স্ক্যামাররা বহু মূল্যবান অ্যাপল প্রোডাক্ট সহজে হাতিয়ে নেন।
তারপর কী হয়?
এ প্রসঙ্গে স্কিমটির তথ্য প্রকাশক নগুয়েন কিম এবং হিউনহো চো জানিয়েছেন যে, এভাবে জালিয়াতি করে অ্যাপল প্রোডাক্ট হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত লাভজনক। কেননা, একজন অপরাধী ছাড়-অফার কাজে লাগিয়ে ৭০০ ডলারে আইফোন ১৫ কিনে সেটি ৮০০ ডলারের আসল দামে বিক্রি করতে পারেন, যাতে তার ১০০ ডলারের নিট লাভ হয়।
এদিকে, ঘটনার শিকার হওয়া ব্যক্তিরা অ্যাপলের সহযোগিতায় শিথিলতা এবং কোম্পানি পলিসি সম্পর্কে বিলম্বের অভিযোগ করেছেন। এমনকি ভুক্তভোগীরা তাদের কার্ড প্রদানকারী এবং আইনি সংস্থাগুলিকে সতর্ক করলেও লাভ হয়নি।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, এই স্কিম বা স্ক্যামটি মূলত দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানকে টার্গেট করে কাজ করছে। তবে, গবেষকরা অনুমান করছে যে, এর পেছনে থাকা অপরাধীরা সম্ভবত চীন থেকে কাজ করেন, কারণ স্ক্যামের সঙ্গে জড়িত ফিশিং ওয়েবসাইটগুলো একটি চীনা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের সঙ্গে রেজিস্টার্ড ছিল। ফলত, ভারত-বাংলাদেশের কথা বলা না হলেও, দেশ দুইটির মানুষ এমন সমস্যার মুখে পড়তে পারেন– এমনটা অস্বাভাবিক নয়। তাই অনলাইনে কেনাকাটা করার সময় থার্ড পার্টি প্ল্যাটফর্মে লোভনীয় ডিসকাউন্ট দেখেই তাতে ভরসা করে ফেলবেন না।
Leave a Reply