নিজস্ব প্রতিবেদক :
৯৫ বছর বয়সী নিজের গর্ভধারিণী মাকে রাস্তার পাশে ফেলে গেছে তারই মেয়ে! ঢাকায় নিজের বাসা থেকে এনে গ্রামের বাড়ির কাছাকাছি সড়কের পাশে একটি ব্যাগ দিয়ে ফেলে রেখে যায় ওই বৃদ্ধাকে। সন্ধ্যার দিকে এক ভ্যানচালক ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরে বৃদ্ধার নাতনির বাড়িতে পৌঁছে দেন তাকে। ঘটনাটি মাদারীপুর জেলার শিবচরে এক সপ্তাহ আগে ঘটলেও জানাজানি হয় গতকাল শুক্রবার। ওই বৃদ্ধার নাম সাম্প্রীয় বৈরাগী।
বৃদ্ধার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের সাদেকাবাদ গ্রামের রাজমোহন বৈরাগীর স্ত্রী সাম্প্রীয় বৈরাগী। প্রায় ৩০ বছর আগে স্বামী রাজমোহন বৈরাগী দুই মেয়ে ও তিন ছেলে রেখে মারা যান। তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে কুমোদ বৈরাগী মারা গেছেন। মেজো ছেলে স্বত্ব বৈরাগী কিডনি রোগে আক্রান্ত। ছোট ছেলে নিত্য বৈরাগী কলকাতায় থাকেন। ছোট মেয়ে সরস্বতী স্বামীর সঙ্গে কলকাতায় থাকেন। পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। আর বড় মেয়ে পার্বতী মন্ডল ঢাকার আগারগাঁও থানার তালুকদার রোডে স্বামীর সঙ্গে বসবাস করেন। তার স্বামী দিনা ম-লের গ্রিলের ব্যবসা। চার বছর আগে পার্বতী তার মাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
প্রথমে মেয়ের বাসায় সুখে-শান্তিতেই থাকলেও করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর থেকে সাম্প্রীয় বৈরাগীর স্থান হয় ঘরের একটি কক্ষের ব্যালকনিতে। এরপর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মেয়ে পার্বতী বৃদ্ধা মাকে গ্রামের বাড়ি শিবচরের সাদেকাবাদ এলাকায় নিয়ে এসে বাড়িতে নেওয়ার পরিবর্তে ওই এলাকার একটি কাঁচা রাস্তার পাশে ফেলে রেখে দিয়ে ঢাকায় ফিরে যায়।
সাম্প্রীয় বৈরাগীকে উদ্ধার করা ভ্যানচালক আনোয়ার মিয়া বলেন, ‘তাকে দেখতে পেয়ে নিজ বাড়িতে নিয়ে যআসি। পরে তিনি মাদবরচর ইউনিয়নের ডাইয়ারচর গ্রামে তার বড় ছেলের মেয়ে নাতনি রিতা রানী মন্ডলের শ্বশুরবাড়ির কথা বলেন। পরদিন (১৯ ফেব্রুয়ারি) তার নাতিন জামাই ডাইয়ারচর গ্রামের দয়াল ম-লের ছেলে জগদীশ ম-লের বাড়িতে পৌঁছে দিই।’
বৃদ্ধার নাতিন জামাই জগদীশ মন্ডল বলেন, ‘পৃথিবীতে সন্তান দেখেছি। এত নিষ্ঠুর সন্তান কোথাও দেখিনি। প্রায় শতবর্ষী বৃদ্ধা মাকে কীভাবে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে গেল! আমি বুঝে উঠতে পারছি না।’
বৃদ্ধার নাতনি রিতা রানী মন্ডল বলেন, ‘নিজের বয়স্ক ভাতার টাকা উত্তোলন করে আমার দাদি তার বড় মেয়েকে দিয়েছেন। সেই মেয়ে মাকে নিজের বাসায় নিয়ে অনেক কষ্ট দিয়েছে। যদি নিজের মায়ের ভরণপোষণের এতই কষ্ট হচ্ছিল তাহলে আমার বাড়িতে রেখে গেলেও পারত। তা না করে রাস্তায় ফেলে গেল কেন? আমি এর বিচার চাই।’
সাম্প্রীয় বৈরাগী বলেন, ‘মেয়ের বাসায় চার বছর ধরে ছিলাম। করোনার পর থেকে ফ্ল্যাটের খোলা ব্যালকনিতে থাকতে হয়েছে। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে রাতজেগে একা একা কান্না করেছি। আমার পেটের মেয়ে আমাকে গাড়িতে করে তুলে এনে রাস্তার পাশে এভাবে ফেলে যাবে কখনো বুঝতে পারিনি। তবুও চাই ওরা সুখে থাকুক!’
এদিকে বৃদ্ধার মেয়ে পার্বতী ম-লের স্বামী দিনা ম-লের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
Leave a Reply