আমার ছোট কাকা আব্দুর রশিদ মাতুব্বরের মুখে একটি গল্প শুনেছিলাম গ্রামের এক হাজী সাহেব সকালবেলা ফজরের নামাজ শেষে ছনের ভুইয়ের মধ্য (এক ধরনের ঘাস যা দিয়ে আগের দিনে ঘর ছাওয়ার কাজ করা হতো) আইল পথ দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন । একদল ডাকাত ছনের ভুইয়ের মধ্য একটি লোককে হত্যা করে রেখেছিল ।
তো হাজী সাহেব আসার সময় তার লম্বা সাদা পাঞ্জাবিতে রক্ত লেগে যায় কিন্তু হাজী সাহেব বুঝতে পারেনা । হাজী সাহেবের কাজের লোক সকালে গোয়াল থেকে গরু বাহির করার সময় দেখে হাজী সাহেবের সাদা পাঞ্জাবিতে রক্ত লেগে আছে । কাজের লোকটি গুমরা মুখ চোরা গোছের দেখে হাজী সাহেব কে রক্তর ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। সকালে বেলা কিছুটা হলে লোকমুখে জানাজানি হয় ছনের ভুইয়ের মধ্য মানুষ হত্যা করা হয়েছে ।
পুলিশ আসে, বিভিন্ন লোকজন থেকে পুলিশ মৌখিক সাক্ষী নেয়। কেউ হত্যার ব্যাপারে কোনো সন্ধান দিতে পারেনা । হঠাৎ হাজী সাহেবের গুমরা মুখ চোরা কাজের লোক বলে উঠলো — আমি জানি। পুলিশ বলল– তাহলে আপনি কি জানেন বলেন ? বলল– আমি যে বাড়িতে কাজ করি সেই হাজী সাহেব, ঐ যে বসা তার সাদা পাঞ্জাবিতে আমি সকালে রক্ত দেখেছি।
হত্যা সম্ভবত হাজী সাহেব করেছে। উপস্থিত পুলিশ এবং এলাকার লোকজনের মধ্যে হাজী সাহেবও উপস্থিত ছিল । পুলিশ হাজী সাহেবকে পাকড়াও করল। হাজী সাহেব তো কিছুই জানে না। তখন পুলিশ বলল– হাজী সাহেব আপনি সকালে যে পাঞ্জাবী পড়ে নামাজ পড়েছেন সেটা নিয়ে আসেন।
সরল মনে হাজী তার কাজের মুখ চোরা গোছের লোকটিকে দিয়ে ঘর থেকে সাদা পাঞ্জাবি আনায়। উপস্থিত লোকজন পাঞ্জাবির ভাঁজ খুলে দেখে পাঞ্জাবির নিচের অংশে ছোপ ছোপ রক্ত লেগে আছে। পুলিশ হাজী কে গ্রেফতার করল। হাজির মনে একটা দুঃখ, সে হত্যা করলেন না কিন্তু হত্যার আসামি হলেন।
হায় বিধাতা আমার পাপ কোথায়? ১২ বছর আগে এক হত্যা সংঘটিত ঘটনার কথা মনে পড়ে হাজির বিবেককে আর প্রশ্ন করল না । প্রচন্ড দুঃখে হাজী সাহেব মুচকি ভঙ্গিতে হাসতে লাগলো। পুলিশ জিজ্ঞেস করল হাজী সাহেব মানুষ হত্যা করে আবার হাসতেছেন? হাজী সাহেব বলল– স্যার, হাসি সৃষ্টিকর্তার সঠিক বিচার দেখে।
পুলিশ বলল— তাহলে বলেন আপনার সৃষ্টিকর্তার সঠিক বিচার কেমন? উপস্থিত লোকজনের মধ্যে হাজী সাহেব তার হাসির ব্যাখ্যা দিতে শুরু করলো।— আজ থেকে ১২ বছর আগের ঘটনা। আমার বাবার ছিল অঢেল অর্থ। ভাই মাত্র আমরা দুইজন। ছোট ভাই প্রতিবন্ধী এক বাচ্চা রেখে তার স্ত্রী সহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়।
ছোট প্রতিবন্ধী বাচ্চা নিয়ে মহা বিপদে পড়ি। একদিকে তাকে লালন পালন করা সমস্যা । অন্যদিকে বড় হলে এই বিশাল সম্পত্তির ভাগ পাবে । বিভিন্ন চিন্তা করে এক দুপুরে দেখি ভাইয়ের প্রতিবন্ধী ছেলে আমাদের পুকুরের ঘাটলায় বসে কান্না করছে। আশেপাশে কোন লোক নেই এই সুযোগে আমি ছেলেটিকে আমার পা দিয়ে লাথি মেরে পানিতে ফেলে দেই।
ফলে তার মৃত্যু হয়। লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোথায় ও পায়না । আমিও ব্যাস্ত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করি। অবশেষে পুকুরের পানিতে মরে ভেসে ওঠা দেখে সবাই এটাকে নিছক পানিতে পড়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বলে চালিয়ে দেয়। তারপর আমি হজ করে এসেছি ।
নিয়মিত নামাজ রোজা , দান ছদকা দিয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করে পিছনের সব কিছু ভুলে গেছি। কিন্তু পাপে ছাড়েনা বাপেরে তার প্রমান আমি বুঝতে পেরে অতি দুঃখে হাসতে ছিলাম । পুনশ্চঃ একটি হত্যা মামলার রিমান্ড ফেরৎ আসামি স্কট কালে নিজেদের অপরাধমুক্ত বক্তব্য তুলে ধরার প্রক্কালে আমার এই গল্প লেখার অবতারণা জাগলো।
আলোকিত জনপদ ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
https://www.facebook.com/alokitojanapad
আলোকিত জনপদ টুইটার আইডিটি ফলো করুন
https://twitter.com/AlokitoJanapad
দেশ বিদেশের সব খবর সবার আগে জানতে আলোকিত জনপদ ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন।
ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই আলোকিত জনপদ এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন।
বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
আলোকিত জনপদ এর ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন
Leave a Reply