শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৪৯ অপরাহ্ন

তীব্র দাবদাহে ঝরে পড়ছে লিচু ও আমের গুটি

আলেকিত জনপদ ডেস্ক
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
  • ১৫৭ Time View

সারাদেশের মতো তীব্র দাবদাহ ও অতি খরায় পুড়ছে মেহেরপুরও। অসহনীয় গরমে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে মানুষসহ পশু-পাখিরাও। এই তাপমাত্রার প্রভাব পড়েছে ফসলের ওপর। তীব্র তাপের কারণে বোটার রস শুকিয়ে ঝরে পড়ছে আম ও লিচুর গুটি।  

সুস্বাদু লিচু ও আমের জন্য বিখ্যাত মেহেরপুর। এ বছর আম ও লিচুর মুকুল গুটিতে পরিণত হয়েছে। আবার অনেক গাছে গুটি আসার আগেই অনাবৃষ্টি আর দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে লিচু ও আমের মুকুল। সেই সঙ্গে ঝরে পড়ছে আম ও লিচুর গুটি। প্রকৃতির এই বিরুপ আচরণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলার লিচু ও আম চাষিরা। এ অবস্থায় লিচু আর আম বাগানে সেচসহ বিভিন্ন পরিচর্যা করে লিচু ও আমের গুটি রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন বাগান মালিকরা। কৃষি বিভাগ বলছে, প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে গাছের গুটি রক্ষায় চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

মেহেরপুর জেলরা কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী, জেলায় লিচুর বাগান রয়েছে ৮০০ হেক্টর জমিতে। এ সব বাগানে, আটি লিচু, বোম্বাই, চিলি বোম্বাই, আতা বোম্বাই ও চায়না-থ্রি জাতের লিচু উৎপাদন হয়ে থাকে। চলতি বছরে জেলায় সাড়ে ৮ হাজার টন লিচুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যা দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে অধিক মুনাফা আয় করার আশা করছেন বাগান মালিকরা। কিন্তু গুটি ঝরতে শুরু করায় চাষিদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ।

এছাড়া এই জেলায় ৩ হাজার ৩৩৬ হেক্টর আম বাগান রয়েছে। গেল বছর উক্ত বাগানের উৎপাদিত ৪১ হাজার ৩০ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছিল। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলায় ব্যাপক চাহিদা পূরণ করেছে। একই সঙ্গে ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও মেহেরপুরের আম রপ্তানি করে অধিক মুনাফা আয় করেছেন আম বাগান মালিকরা। ল্যাংড়া, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলী, আম্রপালী, গোপালভোগ, হাড়িভাঙ্গাসহ বেশ কয়েকটি জাতের আম বাগান রয়েছে। মেহেরপুরের আম ও লিচু জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা হয়ে থাকে। এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও প্রতি বছর পাঠানো হয় এই আম ও লিচু। এ দুই মৌসুমী ফল বিদেশে রপ্তানি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আয় হলেও এ বছর উৎপাদনে ভাটা পড়েছে।

মেহেরপুর সদর উপজেলার কালিগাংনী গ্রামের চাষি আব্দুল মান্নান বলেন, নিজ মাঠে তার ২ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আমবাগান রয়েছে। এ বছর দীর্ঘমেয়াদী শীত ও ঠান্ডা হওয়ায় আম বাগানে এখনো মুকুল আসেনি। অবশেষে কয়েকটি গাছে মুকুল এসে গুটিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু অতিমাত্রায় রোদের কারণে প্রতিনিয়ত গুটি ঝরে পড়ছে। কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী বাগানে সেচ দিচ্ছি।ওষুধ স্প্রে করলেও তাতে উপকারর হচ্ছে না।

মেহেরপুর সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া গ্রামের লিচু বাগান মালিক তোজাম্মেল হক বলেন, সাড়ে তিন বিঘা জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। বাগানে আগাম জাতের আটি লিচু রয়েছে দেড় বিঘা। আটি লিচু গাছের ডগায় ডগায় মুকুল ছেয়ে গেছে। বাকি জমিতে রয়েছে আতা বোম্বাই লিচুর গাছ। সেগুলোতেও মুকুল দেখা দিয়েছে। সব গাছেই এখন লিচুর গুটি। গুটিগুলো ডগা শুকিয়ে যাচ্ছে এবং একটু বাতাস হলেই ঝরে পড়ছে। এ বছর লিচুর ফলন বিপর্যয় ঘটবে।

আম ব্যবসায়ী হেমায়েতপুরের আনারুল বলেন, গাছে মুকুল আসার সঙ্গে সঙ্গে মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকার অন্তত ২০ বিঘা জমির আমবাগান ও ১০ বিঘা জমির লিচুর বাগান কিনেছি। দুই বছরের জন্য বাগান কিনতে হয়। গেল বছর মুকুল এসেছিল কিন্তু ঝড়ে আম পড়ে যাওয়ায় বেশ লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছিল। এ বছর সেই লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার আশায় বিভিন্ন ধরনের বালাইনাশক স্প্রে করেছি। কিন্তু আমের তেমন মুকুল না এলেও লিচু গাছে ব্যাপক মুকুল এসেছিল। দাবদাহে সেই গুটি শুকিয়ে ঝরে যাচ্ছে। এর প্রতিকার না পেলে লোকসানে পড়তে হবে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান বলেন, মেহেরপুর জেলায় এ বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দীর্ঘদিন থেকেই অনাবৃষ্টি চলছে। এর প্রভাব ফসলের ওপরে পড়ছে। তবে এমন পরিস্থিতি কবে নাগাদ ঠিক হবে তা বলা যাচ্ছে না।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ সামসুল আলম বলেন, ‘তীব্র তাপের কারণেই আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। কৃষিবিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যেসব বাগানে আম ও লিচুর গুটি ঝরে যাচ্ছে, বিকেলের দিকে পরিমিত মাত্রায় বোরন স্প্রে করলে গুটি ঝরা রোধ করা যাবে। যেহেতু তাপমাত্রা বেশি তাই গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে। তাহলে গুটি ঝরা রোধ হয়ে যাবে। এতে কিছুটা হলেও উপকার পাওয়া যাবে। এছাড়া নিয়মিত সেচ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category