আজ মুসলিম উম্মাহর জন্য এক পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ দিন, আশুরা। ইসলামিক পঞ্জিকার মহররম মাসের ১০ম দিনে পালিত এই দিনটি মুসলিম জাতির জন্য বিশেষ ইবাদত ও স্মরণীয় ঘটনার প্রতীক।
আশুরার দিনটি আমাদের ধর্মীয় ইতিহাসে অনেক গুরুত্ব বহন করে এবং এর সাথে সংযুক্ত রয়েছে বহু গুরুত্বপূর্ণ ও হৃদয়গ্রাহী ঘটনা। আশুরার দিনটি ইসলামিক ইতিহাসে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনে বহু মহান ঘটনাবলীর স্মরণ করা হয়। প্রাচীন কালের নবি ও রাসূলদের বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনা এই দিনে সংঘটিত হয়েছে বলে বিভিন্ন ইসলামিক বর্ণনায় পাওয়া যায়।
প্রায় ১,৪০০ বছর আগে, এই দিনে কারবালার প্রান্তরে সংঘটিত হয়েছিল হযরত ইমাম হুসাইনের (রাঃ) হৃদয়বিদারক শাহাদাত। হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ), মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নাতি, অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে কারবালায় শাহাদাত বরণ করেন।
এই ঘটনার মাধ্যমে ইমাম হুসাইন (রাঃ) বিশ্ববাসীকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর এবং সত্যের পথে চলার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। আশুরার দিনটি রোজা রাখা, দোয়া ও ইবাদতের জন্য বিশেষ মর্যাদার। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, আশুরার রোজা এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়।
এই দিনটি উপলক্ষে মুসলিমরা বিভিন্ন ইবাদত পালন করেন। কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ, দরিদ্রদের মাঝে খাদ্য বিতরণ ইত্যাদি ইবাদতের মাধ্যমে এই দিনটি পালন করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আশুরা বিভিন্নভাবে উদযাপন করা হয়। কোথাও এটি বিশেষ ইবাদতের মাধ্যমে পালিত হয়, আবার কোথাও এটি মহররমের শোকের মাস হিসেবে পালিত হয়।
মুসলিম বিশ্বে বিশেষ করে শিয়া মুসলিমরা কারবালার ঘটনাকে স্মরণ করে শোক পালন করেন এবং ইমাম হুসাইনের (রাঃ) আত্মত্যাগের গুরুত্ব বোঝাতে বিশেষ সমাবেশ, শোক মিছিল ও নাট্য মঞ্চায়ন করে থাকেন। আশুরা আমাদের শিক্ষা দেয় সত্যের পথে অবিচল থাকার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তোলার এবং সর্বোপরি আল্লাহর প্রতি গভীর বিশ্বাস ও আত্মসমর্পণ করার।
ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর শাহাদাতের মধ্যে যে দৃঢ়তা, সাহস এবং আত্মত্যাগের শিক্ষা রয়েছে, তা আজও আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। পবিত্র আশুরা আমাদেরকে আমাদের ধর্মীয় ঐতিহ্য ও মূল্যের কথা মনে করিয়ে দেয়।
এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, সত্য ও ন্যায়ের পথে চলতে হলে অনেক ত্যাগ ও কুরবানির প্রয়োজন। আশুরার দিনে আমরা সকল মুসলিম ভ্রাতৃবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সত্য, ন্যায় ও মানবতার পথে চলার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করি।
Leave a Reply