“গাছ বাঁচান, বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাস করুন”-এই শ্লোগান নিয়ে পায়ে হেঁটে বিশ্বভ্রমণ শুরু করেছেন কলেজছাত্র সাইফুল ইসলাম শান্ত। শুক্রবার (২৯ মার্চ) দুপুরে গোপালগঞ্জে এসে পৌঁছান। গত ২২ মার্চ ঢাকা থেকে তিনি এ বিশ্বভ্রমন শুরু করেন। টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে যশোর হয়ে ভারতে যাবেন তিনি। পরে সেখান থেকে অন্যান্য দেশ পরিভ্রমন করবেন। এ ভ্রমনের মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাস করতে গাছ লাগানোর জন্য মানুষকে সচেতন করবেন। আর এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে গোপালগঞ্জবাসী। বাদল সাহার প্রতিবেদনে বিস্তারিত।
কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলা সদরের মো. সিরাজুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম শান্ত। ঢাকার যাত্রবাড়ি দনিয়া কলেজ থেকে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছেন। অসচেতনতার কারনে গাছ কাটার ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ায় দাগ কাটে তার মনে। সিদ্ধান্ত নেন পায়ে হেঁটে সারাদেশ ও বিশ্বভ্রমন করে মানুষকে সচেতন করবেন।
আজ শনিবার (৩০ মার্চ) দুপুরে হাইকার সাইফুল ইসলাম শান্ত গোপালগঞ্জ রিপোর্টার্স ফোরাম কার্যালয়ে আসেন এবং সংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন। এসময় তিনি তার বিশ্বভ্রমণের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বলেন, আমি ‘জাতিসংঘ ঘোষিত ১৯৩টি দেশ ভ্রমণ করতে যাত্রা শুরু করেছি। এ ভ্রমণ শেষ করতে প্রায় ১৩/১৪ বছর লেগে যাবে। জরুরী কোন প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণকালীন সময়ে দেশে ফেরার কোন ইচ্ছা নাই। মা, বাবা, ভাই বোন আত্মীয় স্বজনদের সেভাবে বলে রওনা হয়েছি।
হাইকার সাইফুল ইসলাম শান্ত আরো জানান, ২২ মার্চ ঢাকা থেকে পায়ে হেঁটে বিশ্বভ্রমন শুরু করেন তিনি। পরে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু পায়ে হেটে পারাপার হওয়া যাবে না বিধায় বাসে পাড় হই। পরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক দিয়ে পায়ে হেঁটে ফরিদপুর ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দিয়ে মাদারীপুর জেলার টেকেরহাট পৌঁছাই। পরে টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ সড়ক হয়ে এক সপ্তাহের পথপরিক্রমায় শুক্রবার (২৯ মার্চ) সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জ শহরে এসে পৌঁছাই। পরে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ হোস্টেলে রাত্রীযাপন করি। আজ শনিবার (৩০ মার্চ) সকালে গোপালগঞ্জ জেলা সদর তিনি পায়ের হেঁটে ভ্যমন করেন এবয় সচেতনতামূলক প্রচারনা চালান। গোপালগঞ্জ শহরের পৌঁছালে ঘিরে ধরেন সাধারন মানুষ। এসময় আমার সাথে সেলফি ও ছবি তোলেন। পরে জেলা সদর থেকে পায়ে হেঁটে বিকেলে টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছাই।
তিনি আরো জানান, টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছে উপজেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে রাত্রীযাপন করে রবিবার (৩১ মার্চ) সকালে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে পায়ে হেটে যশোরের বেনাপোলের উদ্দেশ্যে রওনা হবো। নড়াইল জেলা হয়ে যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে কলকাতা পৌঁছাবো। এরপর ভারতের ঝাড়খন্ড, বিহার, উত্তর প্রদেশ হয়ে দিল্লিতে পৌঁছানোর ইচ্ছা রয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী উজবেকিস্তান যাওয়ার কথা রয়েছে। তারপর পর্যায়ক্রমে মধ্য এশিয়ার তুর্কমেনিস্তান, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, কাজাখস্তান, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনসহ ক্রমান্বয়ে এশিয়ার অন্যান্য দেশ ভ্রমণ করার আসা প্রকাশ করেছেন এই যুবক। এরপর আফ্রিকা এবং ইউরোপ ভ্রমণের পরিকল্পনা করবেন তিনি। এরপর উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ ভ্রমণের পর অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ গিয়ে বিশ্বভ্রমণের পরিসমাপ্তি ঘটাবো।
ভ্রমণের অর্থ যোগানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাইলেজ অনুসারে স্পন্সর নিয়েছি আমি। নিজের সঞ্চিত সামান্য কিছু অর্থ, বাবার দেয়া ১০ হাজার টাকা আর প্রাথমিকভাবে এক হাজার ডলার স্পন্সর পেয়েছি। এই অর্থ নিয়ে আমার পথচলা শুরু হলো। গাছ না লাগিয়ে কাটার ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। এতে জীব ও পরিবশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব এবং গাছ লাগানোর উপর প্রচারনা চালাবো।
স্থানীয় সাইদুল ইসলাম বলেন, মানুষকে সচেতন করতে তার এ বিশ্বভ্রমনকে সফল হোক। গাছ কাটার ফলে গরম বাড়ছে। এতে আমাদের জীবনে ব্যাপক প্রভাব পরছে। মানুষ সচেতন হয়ে গাছ লাগলে গরম কমে আসবে।
শহরের মডেল স্কুল রোডের বাসিন্দ সলিল বিশ্বাস বলেন, জনসংখ্যা বাড়ার ফলে মানুষ প্রতিনিয়ত বন, জঙ্গল উজার করতে গাছ কেটে ফেলছে। এতে বৈশ্বি উষ্ণতা বাড়ার ফলে একদিতে ডেম গমর বাড়ছে অন্যদিকে মরু অঞ্চলে বরফ গলছে। এতে পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব পড়ায় প্রাকৃতিক বিপয্যয়সহ নানা রোগ হচ্ছে। আমাদের উচিত আর এ ভ্রমনে সহায়তা করা এবং বেশি বেশি গাছ লাগানো।
Leave a Reply