শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৮:১৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

রংপুরে ১৫ জোড়া দরিদ্র সন্তানের জাঁকজমক পূর্ণ যৌতুক বিহীন বিয়ে

রিয়াজুল হক সাগর,রংপুর
  • Update Time : বুধবার, ৬ মার্চ, ২০২৪
  • ৬৬ Time View

রংপুরে দরিদ্র পরিবারের ১৫ জোড়া সন্তান তরুণ-তরুণীর যৌতুক বিহীন বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাতে নগরীর শেখ রাসেল ইনডোর স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকতা শেষে নব দম্পতিদের স্বাবলম্বী করতে নগদ অর্থ, ভ্যান, সেলাই মেশিন সহ সংসারের নানা উপকরণ তুলে দেওয়া হয়।

এখানে প্রথমবারের মত জাঁকজমক পূর্ণ পরিবেশে বিয়ের আয়োজনে করে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন।মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেখা যায়,সাদা কাপড়ে ঘেরা পুরো শেখ রাসেল স্টেডিয়াম।সজুত করা হয়েছে সারি করে রাখা ভ্যান, সেলাই মেশিন, গ্যাসের চুলা, বালতি, প্লেট-গ্লাস, জগ, তোশক সহ সংসারের প্রয়োজনীয় আসবাব পত্র।

প্রতিটি ভ্যানে এক-দুই করে নম্বর সাটিয়ে দেওয়া রয়েছে।ইনডোর স্টেডিয়াম ভবনের সামনে ফুলে সজ্জিত হয়েছে গেট। সিঁড়ি মাড়িয়ে স্টেডিয়ামের ভেতরে ঢুকতেই দেখা মেলে বিয়ের সাজের মিলন মেলার।সাজানো মঞ্চে সারি করে বিয়ের পাঞ্জাবী, পায়জামা, জুতা, পাগড়ি পড়ে বসে আছে ১৫ জন বর।

আরেকটি ঘরের ভেতরে বিয়ের সাজে ১৫ জন কনে। সকলেরই হাস্যোজ্জ্বল মুখ। মঞ্চের বিপরীতে বসে ছিল ৩০ পরিবারের সদস্যরা।ছিলেন রংপুর প্রশাসনের কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ, সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।স্টেডিয়ামের বাইরে বর-কনের পরিবারসহ বিয়েতে আসা ৪ শতাধিক অতিথির জন্য চলছিল রান্না।

পোলাও, মুরগির রোস্ট, গরুর মাংস, জর্দা পোলাও পাকে ব্যস্ত বার্বুচিরা।বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা, নবদম্পতিকে শুভেচ্ছা জানানো, খাওয়া-দাওয়ার আয়োজনে শামিল হন আগত অতিথিরা।দারিদ্র শ্রেনীর মানুষ হয়েও বর্ণিল আয়োজনে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পেরে উচ্ছ্বসিত ছিলেন নব-দম্পতিরা।

রংপুর সদর উপজেলার পাগলাপীর বিড়াবাড়ি এলাকার কনে রশিদা বেগমের মামাতো বোন খাদিজা আক্তার বলেন, গরীব ঘরের সন্তান আমরা। আমার মামাতো বোনের আয়োজন করে বিয়ে দেওয়া আমাদের জন্য অনেক কষ্টের হতো।এই বিয়ের আয়োজন সহজ করে দিয়েছে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন।

যৌতুকবিহীন বিয়ের ব্যবস্থা করেছে,আর্থিক ও সাংসারিক সহযোগিতা করেছে। এতে মেয়ে ও ছেলে দুই পরিবারই বেজায় খুশি। এভাবে দারিদ্র মানুষকে সহযোগিতা করলে যৌতুকবিহীন সমাজ গড়া সম্ভব হবে।নগরীর জুম্মাপাড়ার এলাকার কনে নুসরাত বেগম বলেন, এত বড় আয়োজন করে আমার বিয়ে এটি ভাবি নাই।এই আয়োজন অনেক ভালো লেগেছে।সদর উপজেলার পাগলাপীর কিশামত হরকলি গ্রামের বাসিন্দা বর মারজান মিয়া বলেন, যৌতুক বিহীন বিয়ে করতে পেরেছি।আমার খুবই আনন্দ লাগছে।

এমন করে বিয়ে হলে সমাজ থেকে যৌতুক উঠে যাবে।একই এলাকার মুলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বর আজমান হোসেন বলেন, যৌতুক বিহীন বিয়ে করতে পেরে আনন্দ লাগছে।কর্মজীবনের জন্য ভ্যান, সেলাই মেশিনসহ অন্যান্য জিনিস দিয়েছে।

এসব দিয়ে সুখে-শান্তিতে সংসার চালাতে পারব।বিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আবু জাফর, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃমনিরুজ্জামান, রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাবিবুল হাসান রুমি, বিসিবির পরিচালক, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আনোয়ারুল ইসলাম, সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের শিক্ষক আজহারুল ইসলাম দুলাল,রংপুরের কর্মরত সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার সুধী মানুষ।

আল-খায়ের ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর তারেক মাহমুদ সজীব বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ জনকল্যাণ মূলক কাজ করে যাচ্ছে। আমরা অস্বচ্ছল পরিবারের ছেলে-মেয়েদের ঘটা করে যৌতুক বিহীন বিয়ের আয়োজন করেছি। তাদের প্রত্যেককে গাড়িতে করে এখানে নিয়ে এসেছি এবং গাড়িতে করেই বাড়িতে পৌঁছে দেব। সাথে প্রত্যেক দম্পতির জন্য এক ট্রাক ভরা উপহার পৌঁছে দেওয়া হবে।

তারা কোনভাবেই না ভাবে সুবিধা বঞ্চিত। যদি বিত্তবানরা এভাবে একটি করে পরিবারের দায়িত্ব নেয়, তাহলে শীঘ্রই যৌতুক মুক্ত বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব হবে। বিয়ে অনুষ্ঠান শেষে নৈশ্য ভোজের পর গাড়িতে করে বর-কনে ও পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, যৌতুক নেওয়া রাষ্ট্রীয়ভাবে বে-আইনি সমাজে ব্যাধি হয়ে রয়েছে।আল-খায়ের ফাউন্ডেশন যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে আমি তাদের সাধুবাদ জানাই।

যৌতুক বে-আইনি কাজ, এটি বন্ধ করা পুলিশের কাজ।আমি মনে করি এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে একটি সুস্থ ধারার সূচনা হলো। আমরা এ কাজকে শুধু সমর্থনই করি না। মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে আমরা নব-দম্পতির জন্য উপহার দিয়েছি। আশা করছি ভবিষ্যতে সব বিয়েই যৌতুকবিহীন হবে।

রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আবু জাফর বলেন, আজকের যৌতুকবিহীন বিয়ের বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার হলে সমাজ থেকে যৌতুক ব্যধি দূর হবে। যৌতুক প্রথা বন্ধে এ ধরনের উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।এমন উদ্যোগের আয়োজন হলে প্রশাসন সব সময় তাদের পাশে থাকবে।

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category