শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৩:০১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
পানি উন্নয়নের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা নির্মান, সরেজমিনে পানি উন্নয়ন কর্মকর্তা ব্যক্তিগত ব্রান্ডিং উন্নয়নের লক্ষ নিয়ে ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আর্ট অফ লিভিং প্রজেক্ট বাস্তবায় গোপালগঞ্জে নির্বাচনী সহিংসতায় নিহতের খুনিদের গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবিতে মানববন্ধন হিন্দুদের নির্যাতনের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন লোহাগড়ায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচন স্থগিত লোহাগড়ায় বজ্রপাতে কিশোরের মৃত্যু লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে ট্রাকের চাপায় ১ জন নিহত ছয়তলা ভবন থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী র‌্যাব-৮ কর্তৃক গ্রেফতার ক্লাস চলাকালীন বিদ্যালয়ে আগুণ! পুড়ে গেছে দুটি শ্রেণীকক্ষ

কারাগারে বঙ্গবন্ধু’র ঈদ

খন্দকার ছদরুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি 
  • Update Time : সোমবার, ১৯ জুলাই, ২০২১
  • ৬৬ Time View

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্ম ও কীর্তি দিয়ে গড়েছেন বাঙালির ইতিহাস। তাঁর নেতৃত্বেই স্বাধীনতার জন্য তৈরি হয় বাঙালি জাতি। এরপর নয়মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। এই স্বাধীন রাষ্ট্র এমনিতেই আসেনি। এ জন্য বঙ্গবন্ধুকে আন্দোলন-সংগ্রামের দীর্ঘ পথপরিক্রমা অতিক্রম এবং অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। কারাগারে কাটাতে হয়েছে ৪ হাজার ৬৮২ দিন। (সূত্র : সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সংসদে প্রদত্ত বক্তব্য, দৈনিক প্রথম আলো, ৮ মার্চ ২০১৭।) এই দীর্ঘ কারাজীবন ৩৬৫ দিন দিয়ে ভাগ করলে দেখা যায় তিনি জেলে ছিলেন প্রায় তেরো বছর। ঘাতকরা তাঁকে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে যখন হত্যা করে তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৫৫ বছর। ৫৫ বছর থেকে কৈশোরের ১৮ বছর বাদ দিলে থাকে ৩৭ বছর। এই ৩৭ বছরের মধ্যে প্রায় ১৩ বছর কারাগারে কাটান শেখ মুজিবুর রহমান। তাই খুব সহজেই বলা যায় বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বাসস্থান ছিল ‘কারাগার’।

বঙ্গবন্ধুর কারাগার জীবনের কিছু অংশ আছে তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে। এরপর প্রকাশিত হয় ‘কারারাগারের রোজনামচা’ শীর্ষক গ্রন্থ। ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপনের পর ওই বছরেই প্রথম তিন মাসে তিনবার গ্রেফতার এবং জামিন পান বঙ্গবন্ধু। এরপর মে মাসে আবারও গ্রেফতার হন। সেই সময়কার জেলে বন্দিজীবনের দিনলিপি রয়েছে কারাগারের রোজনামচায়। কারাগারের দিনলিপি এবং বঙ্গবন্ধুর অন্য দুটি বক্তব্যে ১৯৭১ সালের ২০ নভেম্বর পাকিস্তানের কারাগারে বন্দিজীবনের ঈদসহ মোট ৭টি ঈদ জেলে পালনের তথ্য পাওয়া যায়। যেখানে পরিবার-পরিজন এবং নেতাকর্মীদের ছাড়া জেলের নিরানন্দ ও দুঃখময় ঈদের বাস্তবতা ফুটে ওঠে।
পরিবার-আত্মীয়স্বজন ছাড়া জেলের ঈদ কেমন―সেটা কারাবন্দিরাই জানেন। আর জানে কারাবন্দির স্বজনরা। বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকায় ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত ছিলেন স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েরাও। দুঃসময়ের ঈদের মর্মন্তুদ বয়ান বঙ্গবন্ধু লিখেছেন তাঁর কারাগারের দিনপঞ্জিতে। ১৯৬৭ সালের দিনপঞ্জিতে তিনি লেখেন, ‘…১১ তারিখ রেণু এসেছে ছেলেমেয়ে নিয়ে দেখা করতে। আগামী ১৩ই ঈদের নামাজ। ছেলেমেয়েরা ঈদের কাপড় নেবে না। ঈদ করবে না, কারণ আমি জেলে। ওদের বললাম, তোমরা ঈদ উদযাপন করো। … ছেলেমেয়েদের মুখে হাসি নেই। ওরা বুঝতে শিখেছে। রাসেল ছোট তাই এখনো বুঝতে শিখে নাই। …ওদের কাছ থেকে বিদায় নেবার সময় রেণুকে বললাম, বাচ্চাদের সবকিছু কিনে দিও। ভাল করে ঈদ করিও, না হলে ওদের মন ছোট হয়ে যাবে। (শেখ মুজিবুর রহমান, কারাগারের রোজনামচা, পৃষ্ঠা : ২০১)
বাবা ছাড়া সন্তানদের ঈদ কতটা বিষাদের তা বুঝতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। তাই তো বেগম মুজিবকে বলে দেন ঈদে যা যা দরকার তা যেন ছেলেমেয়েদের কিনে দেন। সন্তানরাও গভীরভাবে বুঝেছেন জেলে বাবার বন্দিজীবনের বাস্তবতা। কারণ তারা গড়ে উঠেছেন বাবার আদর্শেই। যে বাবা জেলে খেয়ে-না খেয়ে ঈদ করবেন সেই বাবার সন্তানরা কী আনন্দঘনভাবে ঈদ করতে পারেন? তাই বাবার প্রতি সহমর্মিতা ও শ্রদ্ধা-ভালোবাসা রেখে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যে, ঈদে নতুন কাপড় নেবেন না তারা। এ ঘটনায় বাবা-সন্তান পরস্পরের প্রতি যে মমত্ববোধের গভীরতা―তাই ফুটে ওঠে। এটি ছিল ১৯৬৭ সালের ঈদুল ফিতর (রোজার ঈদ)। ঈদের দিন বঙ্গবন্ধুর পায়ে ব্যথা ছিল। অনেক কষ্ট করেই নামাজে যান তিনি। এই সুযোগে তাঁর প্রাণপ্রিয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা হয়। তবে এই ঈদ বাঙালিদের প্রকৃত ঈদ ছিল না। পুরো বাংলায় আইয়ুব খানের অপশাসন-শোষণে জর্জরিত। বাঙালি মুসলমানের সকল অধিকারই খর্ব করেছে অবৈধভাবে শাসনভার দখল করা এই সামরিক জান্তা। তাই অবরুদ্ধ বাঙালি মুসলমানের ঈদ তো আসলে ঈদ নয়, একটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। দিনপঞ্জিতে সেই কথাও উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু। ‘… কারাগার থেকেই দেশবাসী ও সহকর্মীদের জানাই ঈদ মোবারক। পূর্ববাংলার সেই দিনই ঈদের আনন্দ ভোগ করতে পারবে, যেদিন তারা দাসত্ব থেকে মুক্তি পাবে, এবং দেশের সত্যিকারের নাগরিক হতে পারবে। (কারাগারের রোজনমাচা, পৃষ্ঠা : ২০২)
সেবছর কোরবানির ঈদ হয়েছিল ২২ মার্চ, বুধবার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখনো জেলে। পরবর্তী ঈদগুলো কি জেলে করতে হবে, নাকি মুক্তি পাবেন―তারও কোনো নিশ্চয়তা বা আভাস নেই। এরমধ্যে তাঁর নামে ঢাকায় পাঁচটি মামলার পরও সরকারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, পাবনা ও যশোরে আরও ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়। আইয়ুব সরকার যে তাঁকে এবার বড় পরিকল্পনা নিয়েই জেলে বন্দি করেছে তার আভাসই পাওয়া যায় এই মামলাগুলোর মাধ্যমে। এমন বাস্তবতায় কোরবানির ঈদ উদযাপন নিয়ে অনেকটা আবেগীই হয়ে উঠেন বঙ্গবন্ধু। কয়েদি জীবনের ঈদ নিয়ে বিরক্তও ছিলেন তিনি। অপ্রত্যাশিত ঈদের কথাই ধরা পড়েছে তাঁর স্মৃতিকথায়। ‘…গত ঈদেও জেলে ছিলাম। এবারও জেলে। বন্দিজীবনে ঈদ উদযাপন করা একটি মর্মান্তিক ঘটনা বলা চলে। বারবার আপনজন, বন্ধু-বান্ধব, ছেলেমেয়ে, পিতামাতার কথা মনে পড়ে। ইচ্ছা ছিল না নামাজে যাই।… কয়েদিদের কি নামাজ হয়! আমি তো একলা থাকি। আমার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক বন্দিকে থাকতে দেয় না। একাকী কি ঈদ উদযাপন করা যায়? জেলার সাহেব নামাজ বন্ধ করে রেখে আমাকে নিতে আসেন। তাই যেতে বাধ্য হলাম।’ (কারাগারের রোজনমাচা, পৃষ্ঠা : ২১২―২১৩)
১৯৬৮ সাল। শেখ মুজিবুর রহমানসহ রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং হচ্ছে। এর কিছুদিন পর আরেক ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় জড়ানো হয় তাঁকে। অবশ্য এই ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে তিনি আগেই টের পান। ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি গভীর রাতে শেখ মুজিবুর রহমানকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু কারাগারের গেট দিয়ে বাইরে এলে তাঁকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বন্দি করে নিয়ে যায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে। তাঁকে জড়ানো হয় আগরতলায় গিয়ে পাকিস্তানকে ভাঙ্গার ষড়যন্ত্রের মামলায়। আগরতলা মামলা এমন সময় করা হয় যখন শেখ মুজিবুর রহমানের প্রস্তাবিত ছয় দফাভিত্তিক আন্দোলন এবং শেখ মুজিবসহ রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে পূর্বপাকিস্তানে পুরো বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ।পিতার পরিঃ আঃ মাগফিরাতে

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category