জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে সর্বসম্মত প্রস্তাব পাস হওয়ায় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়বে বলে মনে করেন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা৷ তাদের মতে, এর একটা নৈতিক এবং প্রতীকী গুরুত্ব আছে৷
তারা মনে করেন, জাতিসংঘে পাস হওয়া প্রস্তাব রোহিঙ্গাদের পক্ষে একটা নতুন নৈতিক ভিত্তি তৈরি করলো৷ বিশ্বের সবদেশ রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যা, নির্যাতন, তাদের নিজ দেশ থেকে বিতাড়নের বিষয়টি স্বীকার করে নিলো৷ তবে এটা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে পারে নিরাপত্তা পরিষদ৷ মানবাধিকার পরিষদের সেই ক্ষমতা না থাকলেও বাস্তবতা সবাই স্বীকার করে নিলো৷ তবে বাংলাদেশকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বিষয়টা বারবার তুলে ধরতে হবে, এমনকি প্রাসঙ্গিক না হলেও তুলে ধরতে হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন৷
সোমবার জেনেভায় মানবাধিকার পরিষদের ৪৭তম অধিবেশনে সর্বসম্মতভাবে এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়৷ বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে এ সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে৷ বাংলাদেশের উদ্যোগে ইসলামিক সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) সব সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাবটি পেশ করা হয়৷
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যৌন নির্যাতনসহ সব ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার আওতায় আনা এবং তদন্ত প্রক্রিয়া জোরদার করার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়৷ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং আন্তর্জাতিক আদালতে চলমান বিচার প্রক্রিয়াকেও সমর্থন জানানো হয়৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘‘বিষয়টি উল্টো করে দেখলে এর গুরুত্ব বোঝা যাবে৷ যদি প্রস্তাবটি পাস না হতো তাহলে মিয়ানমারের সামরিক সরকার উল্লসিত হতো৷ তারা আরো জোর পেতো৷ তাই এই প্রস্তাবটি পাশ হওয়ায় তাদের ওপর এক ধরনের নতুন চাপ তৈরি হয়েছে৷ এর একটি নৈতিক গুরুত্ব আছে৷ প্রতীকী গুরুত্ব আছে৷ তারা রোহিঙ্গাদের ওপর যে গণহত্যা ও অমানবিক নির্যাতন করেছে তা বিশ্বের সব দেশ স্বীকার করে নিলো৷’’
তিনি বলেন, ‘‘মানবাধিকার পরিষদের নিজের এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের ক্ষমতা নেই৷ সেটা চাইলে নিরাপত্তা পরিষদ করতে পারে৷ কিন্তু এখন দেখার বিষয়, নিরাপত্তা পরিষদে মানবাধিকারের প্রবক্তা দেশগুলো কী ভূমিকা রাখে৷’’
সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক বলেন, ‘‘ভারত, চীন ও জাপানের মতো দেশগুলো এখনো মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের সাথে কাজ করছে৷ তাদের সেখানে স্বার্থ আছে৷ রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের মানবতার পক্ষে অবস্থান স্পষ্ট নয়৷ তবে এই প্রস্তাব পাস হওয়ার পর তারা তাদের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আনে কিনা তা দেখার বিষয়৷ আর বিশ্ব নেতৃত্ব কী করে তা-ও দেখতে হবে৷’’
দু’জন বিশ্লেষকই মনে করেন, রোহিঙ্গা সমস্যা শুধু বাংলাদেশের কোনো সমস্যা নয়৷ বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হলেও এটা একটা আন্তর্জাতিক সমস্যা৷ তাই বিশ্বের সব দেশের উচিত রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে বাধ্য করা৷ মিয়ানমার যেন কোনো আন্তর্জাতিক সমর্থন না পায়৷ এই প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে এটা আরো একবার স্পষ্ট হলো যে, এটা আন্তর্জাতিক সমস্যা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব নেয়া উচিত৷
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘‘বাংলাদেশের এখন কাজ হলো এই ইস্যুটিকে সব সময় জীবন্ত রাখা৷ কোনোভাবে যেন এটা চাপা পড়ে না যায়৷ সেজন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে সব সময় তুলে ধরা৷ বিভিন্ন দেশকে সার্বক্ষণিক বলা৷ যদি প্রাসঙ্গিকও না হয় তারপরও তুলে ধরতে হবে, যাতে এই ইস্যুটা দৃষ্টিসীমা থেকে সরে যেতে না পারে৷ নতুন এই প্রস্তাব পাস হওয়ায় বাংলাদেশের জন্য সুবিধা হলো৷’’
অধ্যাপক ইমতিয়াজ মনে করেন, ‘‘বাংলাদেশের সুশীল সমাজ ও সংবাদমাধ্যমেরও দায়িত্ব আছে৷ আমাদের এখানে কিছু একটা হলেই জাতিসংঘ বিবৃতি দেয়৷ আমরা সেটা ফলাও করে প্রচার করি৷ অন্য আরো অনেক বিষয়ে জাতিসংঘের কোনো ভূমিকা দেখি না৷ সংবাদমাধ্যমের এটি বলা উচিত৷’’
বাংলাদেশের এখন রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা উচিত বলে মনে করেন শহীদুল হক৷
ভাসানচর ও কক্সবাজারের ৩৫টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর বসবাস ৷ এই ১১ লাখের মধ্যে সাত লাখ মিয়ানমার থেকে আসেন ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হামলা ও নির্যাতনের মুখে৷
আলোকিত জনপদ ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
https://www.facebook.com/alokitojanapad
আলোকিত জনপদ টুইটার আইডিটি ফলো করুন
https://twitter.com/AlokitoJanapad
দেশ বিদেশের সব খবর সবার আগে জানতে আলোকিত জনপদ ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন।
ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই আলোকিত জনপদ এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন।
বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
আলোকিত জনপদ এর ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন
Leave a Reply