মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানে বোমা হামলার হুমকির পর সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় দেশগুলো কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। তারা জানিয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে আক্রমণের জন্য মার্কিন যুদ্ধবিমানগুলো তাদের বিমান ঘাঁটি বা আকাশপথ ব্যবহার করতে পারবে না। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এবং কুয়েত প্রত্যেকে যুক্তরাষ্ট্রকে নিশ্চিত করেছে যে, তাদের আকাশসীমা বা অঞ্চলের কোনও অংশ ইরানের বিরুদ্ধে লঞ্চপ্যাড হিসেবে কাজে লাগানো হবে না। এতে জ্বালানি ভরানো ও উদ্ধার অভিযানও অন্তর্ভুক্ত। একজন উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন, তবে সেন্সিটিভ সামরিক পরিকল্পনার তথ্য প্রকাশের আগে তাঁর নাম প্রকাশ না করার শর্ত রেখেছেন। তিনি জানান, উপসাগরীয় দেশগুলো এই যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে চায় না।
পারমাণবিক চুক্তির আলোচনার মঞ্চে তেহরানকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিমান হামলা চালাচ্ছে। এ সময় উপসাগরীয় দেশগুলোর কঠোর অবস্থান ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি ইরান বুঝতে পারে যে, তেল সমৃদ্ধ আরব মিত্ররা হামলার সঙ্গে একমত নয়, তবে তাদের আলোচনার অবস্থান আরও শক্তিশালী হতে পারে।
অন্যদিকে, হুথিদের হামলার ব্যাপারে উপসাগরীয় দেশগুলো কিছুটা সহনশীল। একজন সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র উপসাগরীয় দেশগুলোর আকাশপথকে লঞ্চপ্যাড হিসেবে ব্যবহার করেছে, তবে কোন ঘাঁটি ব্যবহৃত হয়েছে তা প্রকাশ করতে রাজি হননি। তিনি আরও উল্লেখ করেন, পর্যাপ্ত উপসাগরীয় সমর্থন থাকায় যুক্তরাষ্ট্র আত্মবিশ্বাসী, এমনকি যদি কোনো মার্কিন বিমান ভূপাতিত হলেও তাৎক্ষণিকভাবে অন্য ঘাঁটি থেকে বিমানের উড়ান আটকানো হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসন তেহরানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের পরিকল্পনায়। তারা মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক অভিযান চালাতে উপসাগরীয় দেশগুলোর সহযোগিতা চাইছে, তবে ইরানে হামলার ক্ষেত্রে আরব দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হাসিল করতে ভেটো দিচ্ছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মার্চ মাসে ওয়াশিংটনে আমিরাত ও সৌদি উভয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর থেকেই হুথিদের ওপর হামলা শুরু হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ওই বৈঠকে ইয়েমেনে হামলার অনুমতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
৩০ মার্চ এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প ইরানকে সতর্ক করে বলেন, “যদি তেহরান তাদের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সমঝোতায় না আসে, তবে তাদের ওপর বোমা হামলা ও শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।” এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা চলমান, তবে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির সময়, ২০১৮ সালে তিনি ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেন। চুক্তির আওতায় ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করার বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পেয়েছিল, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি বাতিলের পর ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যার ফলে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম আরও বাড়িয়েছে।
এখনো পর্যন্ত তেহরান কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। ইরানের পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাঠানো এক চিঠির জবাব ওমানের মাধ্যমে পৌঁছে গেছে, যেখানে নতুন একটি পরমাণু চুক্তিতে পৌঁছানোর আহ্বান করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের নেতৃত্বে হামলার পর থেকে, জর্ডান ও উপসাগরীয় দেশগুলোতে সর্বোচ্চ স্তরে যুদ্ধবিমান ও সামরিক সরঞ্জাম মজুত করছে যুক্তরাষ্ট্র। ওপেন সোর্স বিশ্লেষকদের শেয়ার করা ফ্লাইট ট্র্যাকিং তথ্য অনুযায়ী, অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক পণ্যবাহী বিমানের সংখ্যা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে, উপসাগরীয় দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় ভারত মহাসাগরে অবস্থিত ডিয়েগো গার্সিয়া ঘাঁটির হ্যাঙ্গারে বি-২ বোমারু বিমান স্থাপন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
Leave a Reply