বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা, যা দেশের প্রাচীনতম নগরীগুলির একটি, নিয়ে আমাদের পূর্বধারণা ছিল যে নগরীটির পত্তন হয়েছিল ১৬১০ সালে। সেক্ষেত্রে, ঢাকার বয়স দাঁড়ায় প্রায় ৪০০ বছর। তবে সাম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক খননে নতুন কিছু তথ্য উঠে এসেছে, যা ঢাকার বয়স আরও বেশি হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে।
পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজের মাধ্যমে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন পাওয়া গেছে। খননকালে পাওয়া প্রাচীন দুর্গ ও নিদর্শনগুলো প্রমাণ করছে, ঢাকায় সম্ভবত ১৪৩০ সালেই একটি প্রাসাদ দুর্গ নির্মিত হয়েছিল।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এসব নিদর্শন থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা ধারণা করছেন, ঢাকায় মানববসতির সূচনা যিশুখ্রিষ্টের জন্মের আগেই হয়েছিল। খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম থেকে দ্বিতীয় শতকের মধ্যে এই জনপদের বয়স আড়াই হাজার বছরেরও বেশি হতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকেরা।
২৯ অক্টোবর এশিয়াটিক সোসাইটিতে অনুষ্ঠিত একটি আলোচনায় প্রত্নতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান এই তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও শিক্ষার্থীদের একটি দল ২০১৭-১৮ সালে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খননকাজ পরিচালনা করে। এতে প্রাচীন দুর্গের দেয়াল, নর্দমা, কূপসহ বিভিন্ন নিদর্শন পাওয়া যায়। এছাড়াও, এখানে মোগল আমলের মুদ্রা, মৃৎপাত্র, পোড়ামাটির ভাস্কর্যসহ আরও প্রত্ননিদর্শন মিলেছে।
তিনি বলেন, ইসলাম খানের আগমনের পূর্বেই এখানে একটি প্রাসাদ দুর্গ ছিল, যা মোগল আমলে ঢাকাদুর্গ নামে পরিচিত। এই প্রত্ননিদর্শনগুলোর কার্বন পরীক্ষা যুক্তরাষ্ট্রে করা হলে প্রমাণিত হয় যে এগুলোর বয়স ১৪৩০ খ্রিষ্টাব্দের। তাই নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এই দুর্গ ইসলাম খানের আগমনের আগেই নির্মিত হয়েছিল এবং এটি ‘ঢাকাদুর্গ’ নয় বরং ‘ঢাকার দুর্গ’।
এই খননে আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে, যেমন গ্লেজড মৃৎপাত্র এবং রোলেটেড মৃৎপাত্র, যা পঞ্চম থেকে দ্বিতীয় খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ঢাকায় জনবসতির ইঙ্গিত দেয়। এই ধরনের মৃৎপাত্র প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন (মহাস্থান), উয়ারী-বটেশ্বর এবং ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলেও পাওয়া গেছে। এতে প্রমাণ হয় যে, এখানে আদি ঐতিহাসিক যুগে সমৃদ্ধ জনপদ ছিল এবং ঢাকার সংযোগ প্রাচীন সিল্ক রুটের সঙ্গে থাকতে পারে।
ঢাকা শহর সময়ের বিবর্তনে আদি ঐতিহাসিক যুগ, প্রাক-মধ্যযুগ, সুলতানি আমল, মোগল আমল, ঔপনিবেশিক আমল, পাকিস্তান আমল এবং স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী হিসেবে সাতবার মর্যাদা লাভ করেছে।
Leave a Reply