পেকুয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শেখেরকিল্লাহঘোনা এলাকায় ৪০.৫০ শতক জমির একটি বায়নানামা জালিয়াতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এনিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ মামলা-মোকাদ্দমায় জড়িয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার প্রকৃত তথ্য তুলে ধরেছেন দলিল লেখক লোকমান হাকিম সিদ্দিক। গতকাল সোমবার সকাল ১১টায় পেকুয়া উপজেলা প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লোকমান হাকিম বলেন, গত রোববার কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত দৈনিক আপনকন্ঠ, দৈনিক আজকের কক্সবাজার বার্তা, সমুদ্রকন্ঠ, কক্সবাজার প্রতিদিন ও বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে বায়নানামা জালিয়াতির বিষয়ে আমাকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। একারণে ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটনে আজ আমি সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছি।
লোকমান হাকিম লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের শেখেরকিল্লা ঘোনা এলাকার মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে আবু তাহের ও তাঁর স্ত্রী বুলবুল আক্তার আমার সহকারি এম আশেক এলাহি ও মো. মুজিবুর রহমানকে সাথে নিয়ে জমির বায়নানামা সৃজন করবে এমন সুবাধে পেকুয়া চৌমুহনীর দানেশীয়া লাইব্রেরীর দ্বিতীয় তলায় আমার ব্যক্তিগত চেম্বারে আসেন। আসার পর দাতা মৃত আবুল হোসেনের ছেলে আবু তাহের ও গ্রহীতা বুলবুল আকতারের স্বামী আবু তাহের আমার অফিস সহকারি আশেক এলাহি এবং মো.মুজিবুর রহমানের মাধ্যমে কাগজপত্র পর্যালোচনা করার জন্য আমার নিকট হস্তান্তর করেন। উভয় পক্ষের কাগজপত্র দেখার পরে আমি ও আমার দুইজন অফিস সহকারীর সামনে দাতা ও গ্রহীতা জমির মূল্য নির্ধারণ করেন। মূল্য নির্ধারিত হওয়ার পর পেকুয়ার মৌজামূল্য অনুযায়ী ৪০.৫০ শতক জমির মূল্য ৩৪ লক্ষ টাকা ধার্য্য করে নগদ ২৮ লক্ষ টাকা ও বাকি ৬ লক্ষ টাকা দরদাম সাব্যস্ত করে আমাকে বায়নানামা সৃজনের জন্য বলেন। আমি বায়নানামা খসড়া প্রস্তুত করে আমার অফিস সহকারি এম. আশেক এলাহিকে বুঝিয়ে দিই। খসড়া বুঝিয়ে দেওয়ার পর আমার আরেক অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর মুজিবুর রহমানকে সাথে নিয়ে সম্পূর্ণ বায়নানামা প্রস্তুত করতে বলি। সম্পূর্ণ বায়নানামা প্রস্তুত হলে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে দাতা ও গ্রহীতা প্রস্তুতকৃত বায়নানামায় স্বাক্ষর করেন। এর পরে প্রস্তুতকৃত বায়নানামায় দাতা ও গ্রহীতা স্বাক্ষর করার পর বায়নানামা দলিলে ৫নং ফর্দে আমি দলিল লেখক হিসেবে স্বাক্ষর করি। গ্রহীতার স্বামী আবু তাহের স্বাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেন। আমার দুই অফিস সহকারি মো. মুজিবুর রহমান ও এম আশেক এলাহি উক্ত বায়নানামায় স্বাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেন। এরপরে মো. মুজিবুর রহমান ও আশেক এলাহিকে উক্ত বায়নানামাটি আমার চেম্বারের নিচ তলার দানেশিয়া লাইব্রেরী থেকে ফটোকপি করে আনতে বলে আমি চেম্বার থেকে নেমে পেকুয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে চলে যাই। ওখান থেকে আসতে আমার কিছু সময় দেরি হওয়ার সুবাধে আমার অফিস সহকারি এম আশেক এলাহি ও মো. মুজিবুর রহমান গ্রহীতার স্বামী আবু তাহেরের যোগসাজসে প্রস্তুতকৃত বায়নানামা দলিলের তফসিলের ফর্দ ৩নং ও ৪নং পাতায় ব্লেড দিয়ে ঘসে দাতা আবু তাহেরের খরিদা দলিলে নেই এমন বিএস খতিয়ান নম্বর ৭৫১, বিএস দাগ নম্বর ১৯১১ বসিয়ে দিয়ে বায়নানামা প্রস্তুত করেন। যা আমার অগোচরে হয়। এসময় দাতা আবু তাহেরের ছেলে জসিম উদ্দিন সেখানে পৌঁছালে তিনি বায়নানামা পড়ে দেখেন। তখন বায়নানামা দলিলে বিএস খতিয়ান নম্বর ৭৫১ বিএস দাগ নম্বর ১৯১১ কোথা থেকে এসেছে জানতে চাইলে আমার অফিস সহকারী আশেক এলাহী ও মুজিবুর রহমান এবং গ্রহীতা বুলবুল আকতার ও গ্রহীতার স্বামী আবু তাহের এসব প্রিন্টে ভূল হয়েছে বলে জসিমকে জানায়। তাৎক্ষনিক আমার দুই অফিস সহকারী ও গ্রহীতার স্বামী আবু তাহের মিলে আরেকটি ৩০০ টাকা মূল্যমানের খালি স্ট্যাম্পে দাতা আবু তাহেরের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে নেন। তখন দাতাকে জানানো হয়, প্রিন্টের ভূল সংশোধনের জন্য এই খালী স্ট্যাম্পটি নেওয়া হয়েছে। ভূল সংশোধন হয়ে গেলে স্ট্যাম্পটি দাতা আবু তাহেরকে ফেরত দেয়া হবে। কিন্তু স্ট্যাম্পটিতে স্বাক্ষর নেওয়ার পরে গ্রহীতা বুলবুল আকতার, তাঁর স্বামী আবু তাহের এবং অফিস সহকারী এম আশেক এলাহী বায়নানামা দলিল সংশোধন করে না আনায় দাতা আবুতাহেরের সঙ্গে তাঁদের কথা কাটাকাটি হয়। ওই সময় আমি সাবরেজিস্ট্রী অফিস থেকে আমার চেম্বারে উপস্থিত হই। তখন কথাকাটাকাটির হেতু কি জানতে চাইলে দুইপক্ষ এসব বিষয় আমাকে খুলে বলে। তখন দাতা আবু তাহেরের স্পষ্ট জবাব ছিল, বায়নানামা সংশোধন না করলে তিনি সাবরেজিস্ট্রী অফিসে গিয়ে মঞ্জুরি সম্পাদন করবেন না। তখন গ্রহীতা বুলবুল আকতার বলছিলেন, বায়নানামা যেভাবে লিখিত হয়েছে সেভাবে হলে তিনি মঞ্জুরি নিবেন। তখন দাতা আবু তাহের বলেন, তাহলে তিনি বায়নানামা মঞ্জুরি করবেন না। তাঁর খালী স্ট্যাম্পটি আমার অফিস সহকারী এম আশেক এলাহীকে দিতে বলেন। তখন আশেক এলাহী গ্রহীতার কথা ছাড়া স্ট্যাম্পটি দেয়া হবে না মর্মে সাফ জানিয়ে দেন। এরপর ঝগড়া করতে করতে দাতা আবু তাহের ও গ্রহীতা বুলবুল আকতার গং আমার চেম্বার ত্যাগ করে। তখন আমি অফিস সহকারী আশেক এলাহীকে নির্দেশ দিই যে, বায়নানামা দলিল ও পে-অর্ডার কাউকে না দিতে এবং খালী স্ট্যাম্পটি দাতা আবু তাহেরকে ফেরত দিতে। তখন আশেক এলাহী আমাকে বলেন যে, বায়নানামা দলিল ও পে-অর্ডার অফিসে রক্ষিত রাখবেন এবং খালী স্ট্যাম্প দাতা আবু তাহেরকে ফেরত দিয়ে দিবেন।
সংবাদ সম্মেলনে লোকমান হাকিম সিদ্দিক বলেন, বায়নানামা সৃজনের সময় দাতা ও গ্রহীতা উভয়পক্ষ সম্মত হয় যে, টাকার লেনদেন হবে সাবরেজিস্ট্রি অফিসে বায়নানামা মঞ্জুরির সময়। আমার চেম্বারে বা আমার সামনে তাঁদের মধ্যে কোনো লেনদেন হয়নি। এখানে উল্লেখ থাকে যে যেহেতু বায়নানামা মঞ্জুরি হয়নি, সেহেতু আমার জানামতে দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে টাকা আদানপ্রদান হয়নি।
Leave a Reply