রণিকা বসু (মাধুরী) বিশেষ প্রতিনিধি
বিশ্বের এক ইঞ্চি জমিও সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। আর এ লক্ষ্যে বিশ্বের সকল শান্তিকামী রাষ্ট্র-মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানিয়ে বিএসএএফ’র মৌনমিছিল পূর্ব পথসভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, অনেক সময় ধরে কোনো জঙ্গি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বড় হামলা হয়নি। কিন্তু, তার অর্থ এই নয় যে জঙ্গি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো নির্মূল হয়ে গেছে। ছোট পরিসরে হলেও আইএস-সমর্থিত সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদীরা জীবিত আছে এবং নানা ছদ্মেবেশে আমাদের সমাজেই বসবাস করছে। এ জন্য বাংলাদেশকে সজাগ থাকতে হবে। করোনা ভাইরাসের কারণে উগ্র-মতবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার কিছু বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। রুদ্ধ জীবনে বর্তমানে আমরা সবাই ইন্টারনেট নির্ভরশীল। তরুণ জনগোষ্ঠী ইন্টারনেটে বেশি সময় দিচ্ছে। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্লেষণ ও সমীক্ষা থেকে এটা সন্দেহাতীত যে তাদের উগ্রবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সর্বাত্মকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে “২৬ নভেম্বর ২০০৮ মুম্বাইতে হোটেল তাজসহ ১১টি স্থানে পাকিস্থানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার বর্বরোচিত জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মরণ ও বিশ্বব্যাপী সকল জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে” বাংলাদেশ সোস্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বিএসএএফ) আয়োজিত পথসভা ও মৌনমিছিলে তারা এসব কথা বলেন। বিএসএএফ প্রধান সমন্বয়ক মুফতী মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ সভাপতি এম এ জলিল, প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ লেকা শক্তি পার্টির সভাপতি মোঃ শাহিকুল আলম টিটু, সিনিয়র সাংবাদিক সমীরণ রায়, আওয়ামী ওলামা লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির মুখপাত্র ক্বারী মাওলানা মোঃ আসাদুজ্জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক মুফতী ইব্রাহীম খলীল ফারুকী, বাংলাদেশ সাংবাদিক সংস্থার সভাপতি লায়ন নুরুল ইসলাম, সদস্য মাওলানা ইলিয়াস চৌধুরী, বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথিক গবেষক ডা. আবু দাউদ মোহাম্মাদ, নয়ন ভান্ডারী, নারী নেত্রী এলিজা রহমান প্রমুখ। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশেও হত্যাকান্ড, নাশকতা ও ধ্বংসাত্মকমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের প্রচেষ্টা এখনও অব্যাহত রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই আমরা নৈরাজ্যকর কোনো না কোনো খবর মিডিয়ার সুবাদে পেয়ে থাকি। বর্তমান সবচেয়ে আলোচিত শব্দ হলো জঙ্গিবাদ। উগ্রপন্থায় সংঘবদ্ধভাবে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করার নামই জঙ্গিবাদ। মূলত যারা এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত তাদের কোন ধর্ম নেই। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের যে অপ্রতিরোধ্য বিস্তার ঘটছে, তাতে এটি সর্বাপেক্ষা বড় ‘আতঙ্কে’ পরিণত হয়েছে। করোনার এ সংকটময় পরিস্থিতিতে বিশ্বশান্তি ও ইসলামের ভূমিকাকে বিশ্লেষণ করা সময়ের অপরিহার্য দাবি হয়ে উঠেছে। তারা আরো বলেন, ‘ইসলামের নামে সন্ত্রাস’ সৃষ্টি ইহুদিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদীদের সুদূরপ্রসারী চক্রান্তেররই ফসল। কোরআনের কিছু আয়াতের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে জিহাদের নামে সন্ত্রাস বৈধ করার অপচেষ্টা করছে তারা। বিশেষত আধুনিক তরুণ যাদের অধিকাংশই ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের মধ্যে ইসলামের বিকৃত ধারণা দিয়ে সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার করছে। অথচ ইসলাম শান্তির ধর্ম আর ইসলামের উত্তম আদর্শে মুগ্ধ হয়েই যুগে যুগে মানুষ ইসলামে আকৃষ্ট হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তায়েফের ময়দানে অমুসলিমদের নির্যাতনে রক্তাক্ত অবস্থায় জ্ঞান হারিয়ে ফেললেও তাদের প্রত্যাঘাত করার কথা ভাবেননি। ইসলাম প্রচারের পদ্ধতি সম্পর্কে আল্লাহর নির্দেশ হল- ‘আপনি আপনার পালনকর্তার পথের দিকে আহ্বান করুন জ্ঞানগর্ভ কথা ও উত্তম উপদেশগুলোর দ্বারা এবং তাদের সঙ্গে উত্তম পদ্ধতিতে বিতর্ক করুন’ (সুরা নহল, আয়াত: ১২৫)। বক্তারা আরো বলেন, সমগ্র বিশ্বে ধর্মের নামে নজিরবিহীন সহিংসতা, তা শুধু ইসলাম নয় বরং কোনো ধর্মই সমর্থন করে না। নৈরাজ্য সৃষ্টি করে কাউকে ধর্মের সুশীতল ছায়ার বেহেশতি বাতাসের সাধ উপভোগ করানো যায় না। নৈরাজ্যের মাধ্যমে কেবল বিশৃঙ্খলাই দেখা দিতে পারে, শান্তি নয়। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চাই ধর্মের শান্তিময় শিক্ষার বাস্তবায়ন। বিশ্বনিয়ন্ত্রণকর্তা সব সময়ই মানুষকে শান্তির পথে আহ্বান করে থাকে। প্রকৃত-শান্তিরর ধারক ও বাহক কখনো সমাজের ও দেশের অশান্তির কারণ হতে পারে না। নেতৃবৃন্দ বলেন, এসব নৈরাজ্যকারীদের জন্য সমগ্র বিশ্বই আজ রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সর্বোপরি নৈতিকভাবে চরম অধঃপতনে নিপতিত। তাই সন্ত্রাসী যেই হোক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক মুফতী মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী তার সভাপতির বক্তব্যে মুম্বাই তাজ হোটেল ,বটমূলে উদীচী, ২১আগস্ট গ্রেনেড হামলা , ও বাংলাদেশের ৬৩টি জেলায় একসাথে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ সহ বিশ্বের যেসমস্ত জায়গায় বর্বরোচিত জঙ্গি হামলায় যারা নিহত হয়েছে তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং আত্মার শান্তি কামনা করে বলেন, জঙ্গি উগ্রবাদীরা বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় মারাত্মক বাঁধা। ধর্মীয় সম্প্রীতিকেও ক্ষতবিক্ষত করছে চরমভাবে। জঙ্গি হামলার মধ্য দিয়ে বিশ্বে সৃষ্টি করছে অস্থিতিশীল পরিবেশ। বিশ্ব অর্থনীতির করছে অপূরনীয় ক্ষতি। বিশ্ব জনমনে ধর্মকে জঙ্গি তৎপরতাকে বৈধ করার হাতিয়ার হিসাবে ব্যাহার করছে। আমরা ধর্ম বর্ণ দেশ ও জাতি নির্বিশেষে এ অশুভ জঙ্গিবাদ এবং তাদের চালিকা শক্তি পাকিস্তান সহ তাদের পৃষ্ঠপোষদের ঐক্যবদ্ধভাবে যদি রুখতে না পারি তাহলে বিশ্ব হবে মানবতাবিরোধী যজ্ঞের মঞ্চ। তাই আসুন বিশ্ব শান্তি-সম্প্রীতির গড়তে সময়ের দাবী পূরণে ঐকব্যবদ্ধভাবে কাজ করি।
Leave a Reply