দেশব্যাপী সংঘঠিত মন্দির ও বসতবাড়িতে হামলা, লুটপাট ও নির্যাতনের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন মাদারীপুরের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। রোববার বিকেল ৫টার দিকে মাদারীপুর-শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ডিসির বাসভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
ঘন্টাব্যাপী চলা কর্মসূচিতে ব্যানার-ফ্যাস্টুন ও প্লেকার্ড হাতে নিয়ে অংশ নেন হাজারো মানুষ। এর আগে বিকেল ৪টায় জেলার পাঁচটি উপজেলা থেকে দলে দলে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের লেকপাড় শহীদ কানন চত্বরে জড়ো হতে থাকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। পরে তাঁরা একযোগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
মিছিলটি মাদারীপুর প্রেসক্লাবসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানে প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকরে বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। পরে মাদারীপুর-শরীয়তপুর-চাঁদপুর আ লিক মহাসড়কটি অবরোধ করে তাঁরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এতে সময় মহাসড়কে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
বিক্ষোভ সমাবেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনেরা, আমার মা-বোনের গায়ে হাত কেন? জবাব চাই, জবাব চাই; জাগো রে জাগো, হিন্দু জাগো; তুমি কে আমি কে? বাঙালী, বাঙালী; তুমি কে আমি কে হিন্দু-হিন্দু; আমার ভাই মরলে কেন? জবাব চাই, জবাব চাই, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় চাই, দিতে হবে, দিতে হবে, হিন্দু সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে, করতে হবে।
জাগো রে জাগো, হিন্দু বোদ্ধান খ্রিষ্টা জাগো প্রভৃতি শ্লোগান দেন। এ ছাড়া ‘জয় শ্রী রাম’ শ্লোগান ছিল নারী-পুরুষ মুখে মুখে। জেলা পুজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খিষ্টান ঐক্য পরিষদ, সনাতন সম্প্রতি সংঘ, হিন্দুজোটসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ সামাবেশে বক্তব্য রাখেন।
এ সময় তাঁরা অভিযোগ করেন, সম্প্রতি শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর থেকে সারাদেশ ব্যাপী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা একের পর এক ঘটে চলেছে। নারীদের ধর্ষণসহ শ্লীলতাহানি করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকার মন্দিরে হামলা চালিয়ে দেবদেবীর মূর্তি ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় সনাতনধর্মীরা।
এসব ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তারসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য মন্ত্রণালয় ও কমিশন গঠন করার জোড় দাবি জানান বক্তরা। দাবি পূরণ না হলে বৃহত্তম আন্দোলনের পাশাপাশি প্রতিরোধের ডাক দেন তাঁরা। মাদারীপুর হিন্দু-বৌদ্ধ-খিষ্টান ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি হরিপদ দাশ বলেন, ‘যখনি দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয় তখনি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর হামলা ঘটে। মন্দিরের ভাঙচুর হয়।
জমি দখল থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি করে এক শ্রেণির লোক। এসব ঘটনায় দেশে এখন পর্যন্ত কোন বিচার করা হয়নি। তাই অপরাধীরা বার বার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর টার্গেট করে এই নির্যাতন চালায়। স্বাধীন দেশে আমাদের প্রতিটি নাগরিকের সুরক্ষা অধিকার রয়েছে। নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে। অথচ, আমরা আজ অসহায়, অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে নেমেছি।
আমরা চরম নিরাপত্তহীনতায় দিন পার করছি।’ মাদারীপুর জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশ বলেন, স্বাধীন দেশে বসবাস করে প্রায়ই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে।
অথচ, জন্মগতভাবে এসব সংখ্যালঘু সবাই বাঙ্গালী। যারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় জড়িত ও এসব দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে হিন্দুদের সুরক্ষার জন্য মন্ত্রণালয়সহ কমিশন গঠনের দাবি জানাই।
Leave a Reply