মাহবুব আলম সেলিম, নরসিংদী জেলা প্রতিনিধিঃ ১০ নভেম্বর মঙ্গলবার বাদ আসর দৌলতকান্দি ও তালুককান্দি গ্রামের সর্বস্তরের জনগণের আয়োজনে, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সদ্য প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. ইউনূস খন্দকার এর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় শোকসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নস্থ দৌলতকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে উক্ত শোকসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে মুছাপুর ও মহেশপুর ইউনিয়নের গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গসহ বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। উক্ত শোকসভা ও দোয়া মাহফিলে উপস্থিত সূধীজনদের এবং তাঁর রাজনৈতিক সহচরদের বক্তব্যে তাঁর জীবদ্দশায় করে যাওয়া সকল কর্মকান্ড উঠে আসে। প্রশংসীত হয়েছিলেন সর্বমহলে তিন। রায়পুরা উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের তালুককান্দি গ্রামের মরহুম আলহাজ্ব আব্দুস ছালাম খন্দকারের চতুর্থ সন্তান মরহুম আলহাজ্ব মো. ইউনূস খন্দকার। উক্ত গ্রামের প্রাণপুরুষ ও অভিভাবক, সমাজহিতৈষী, সজ্জন, হৃদয়বান ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব, বীরমুক্তিযোদ্ধা, ভৈরবের বিশিষ্ট ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান “খন্দকার ফার্মাসিউটিক্যালস” এর চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি সুদীর্ঘকাল রায়পুরা উপজেলা বি.এন.পি’র সিনিয়র সহ- সভাপতিও ছিলেন। বিশিষ্ট ব্যবসায়ীক ব্যক্তিটি দৌলতকান্দি আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠাতাকালীন সভাপতি এবং দৌলত কান্দি এম.বি উচ্চ বিদ্যালয় ও বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর নগর (রামনগর) কলেজের আজীবন দাতা সদস্য ছিলেন। সমাজহিতৈষী ও নিরহংকারী এই ব্যক্তিটি আর আমাদের মাঝে বেচেঁ নেই। এখন তিনি রায়পুরা উপজেলার মানুষের কাছে শুধুই স্মৃতি। তিনি বিগত ৩ নভেম্বর ভৈরবস্থ নিজ বাসায় সকাল আনুমানিক নয়টায় ইন্তেকাল করেন(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহী রাজিউন)। তিনি মৃত্যুকালে স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও দলীয় নেতাকর্মী রেখে যান। রাষ্ট্রীয় সম্মানে তাঁর জানাযায় রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বিএনপির কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলার বহু নেতাকর্মীসহ আওয়ামী লীগেরও অনেক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেছিন। তার ছোট এক ভাই মো. হারুনুর রশিদ মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের একাধিকবারের সফল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনিও একজন বিশিষ্ট সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী ও ন্যায়বিচারক হিসেবে সমাজে সমাদৃত। বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ ইউনুছ মিয়া খন্দকার ছিলেন দল মত নির্বিশেষ সর্বস্তরের মানুষের জন্য একজন উন্নয়নের দিকনির্দেশক ও পৃষ্ঠপোষক। তাঁহার মৃত্যুতে এলাকায় নেমে আসে গভীর শোকের ছায়া। তালুককান্দি গ্রামের কৃতিসন্তান, ভৈরব রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের প্রভাষক মো. টিপু সুলতান বলেন, মো. ইউনূস খন্দকার এর মৃত্যুতে আমরা এলাকাবাসী গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর মৃত্যুতে আমাদের মাঝে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ হবার মতো নয়। আলোকিত মানুষটি যেভাবে গ্রামটিকে ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ রেখে সকলের সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে আমাদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন, ঠিক সেইভাবে আমরাও কৃতজ্ঞচিত্তে শ্রদ্ধা ও সন্মানের সহিত তাঁকে চিরদিন স্মরণীয় করে রাখবো। তিনি আমাদের গ্রামটিকে একটি আদর্শ গ্রাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন, যা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে। বহু গুণের অধিকারী ছিলেন প্রয়াত মো. ইউনূস খন্দকার। তিনি ছিলেন একজন অহিংস ও আদর্শবান ব্যক্তি। সমাজের সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের সাথে ছিল তাঁর সুসম্পর্ক। তিনি ছিলেন একজন পরোপকারী মানুষ। সমাজের সকল মানুষকে তিনি সর্বদা সৎ পরামর্শ দিতেন। তিনি সমাজে হতদরিদ্র, গরীব ও অসহায় মানুষদেরকে জীবনভর সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতেন। বিনয় ও নিরাগ ছিল তাঁর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কখনো মানুষটিকে কারোর সাথে রাগ করতে দেখা যায়নি, সদা হাস্যময় ও সদালাপী মানুষটিকে ভালবাসত এবং শ্রদ্ধা করত দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ। তিনি ছিলেন একজন সমাজ হিতৈষী ব্যক্তিত্ব। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সমাজ হিতৈষী মনোভাব নিয়ে অগ্রদূত হিসেবে আমাদের গ্রামে তিনি এক যুব নেতৃত্ব গড়ে তোলেন। সম্ভাবত ১৯৭৫ সালে তিনি “অগ্রদূত সংঘ” নামে একটি অরাজনৈতিক ক্লাব প্রতিষ্ঠিত করেন। উক্ত সংঘের সভাপতি হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন সমাজের কল্যাণে ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা, সাহিত্য, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে প্রেরণামূলক ভূমিকা ও বহু সৎকর্মের স্বাক্ষর রেখেছিলেন। মরহুম আলহাজ্ব মো. ইউনূস খন্দকার ছিলেন একজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব। তিনি যখন উপলব্ধি করেছিলেন যে, রায়পুরা পূর্বাঞ্চলে নারী শিক্ষা কচ্ছপ গতিতে চলছে তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ প্রতিষ্ঠিত করবেন। অবশেষে যুগোপযোগী নারী শিক্ষার উন্নয়নে ১৯৮৭ সালে পূর্বাঞ্চলের বিশিষ্টজনদের সাথে নিয়ে দৌলতকান্দি আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নামে একটি নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করেন। পরবর্তী এক সময়ে বিদ্যালয়টিতে কারিগরি কলেজ শাখা চালু করেন। তিনি উক্ত বিদ্যালয় ও কলেজের প্রতিষ্ঠাতাকালীন সভাপতি থেকে শুরু করে মৃত্যুর দুই মাস পূর্ব পর্যন্ত অবিরতভাবে সুদীর্ঘকাল সভাপতি হিসেবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব করে গেছেন। এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর রায়পুরা পূর্বাঞ্চলে অভূতপূর্ব নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়াও তিনি দৌলতকান্দি এম.বি উচ্চ বিদ্যালয় ও বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর নগর কলেজের আজীবন দাতা সদস্য ছিলেন। অসংখ্য স্কুল-কলেজে, মসজিদ মাদ্রাসায় তিনি অনুদানের ছোঁয়া ও প্রেরণামূলক উদ্যোগের অসামন্য স্বাক্ষর রেখেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন বর্ষীয়ান, নিঃস্বার্থ ও নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ। তিনি রাজনৈতিক জীবনে কখনো প্রতিহিংসাপরায়ণ ছিলেন না। তিনি সবসময়ই স্বচ্ছ রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। বর্তমানে রায়পুরা উপজেলায় যে সংগঠিত ও প্রতিষ্ঠিত বিএনপি, তা মুলত আলহাজ্ব ইউনুছ মিয়া খন্দকারের নীতি আদর্শ, পরামর্শ, দক্ষ সাংগঠনিক নীতিনির্ধারনেরই ফসল বলে মনে করেন রায়পুরা উপজেলার বিএনপির নেতাকর্মীরা।
Leave a Reply