ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় জনবসতি এলাকায় আবাদি জমিতে অবৈধ ভাবে ইটভাটা গড়ে তুলেছেন আর অবাধে বনের কাঠ পোড়াচ্ছে। এসব ভাটার ধোঁয়ার দূষণে স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি গবাদি পশুপাখি, ফসলাদি,গাছগাছালি ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে এবং পরিবেশ হারাচ্ছে বৈচিত্র, বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন।
কয়লার মুল্য বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে নিষিদ্ধ ড্রাম চিমনির ইট ভাটার পাশাপাশি অধিকাংশ ঝিকঝাক ভাটায়ও কাঠের গুড়ি,দেদারছে পোড়াচ্ছেন বনের কাঠ,আবার ভাটার পাশেই অবৈধ ভাবে গড়ে তুলেছেন করাত কল। এসব করাত কলে কাঠ চেড়াই করে ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে। এছাড়া অধিকাংশ ভাটায় শিশু কিশোরেরা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে।
এতে করে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ইট ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে তারা। পরিবেশ অধিদপ্তর সুত্রে জানাযায়, চরফ্যাশন উপজেলায় ৩২ টি ইটের ভাটা রয়েছে, তার মধ্যে ১৪ টি ইটের ভাটার অনুমোদন রয়েছে।
উপজেলার রিফাত ব্রিকসে মালিক জয়নাল উদ্দিন বলেন, সব মালিকই এরকম কাঠ পোড়াচ্ছে আমি পোড়াইলে দোষ কি? তবে রিফাত ব্রিকসের গিয়ে দেখা যায়, সারিবদ্ধ ভাবে বনের কাঠের স্তুপ দেওয়া রয়েছে তিনি সারা বছরই কাঠের গুড়ি দিয়ে ইট পোড়ায় তার ইটভাটায় কয়লার কোন বালাই নাই। এওয়াজপুর ইউনিয়নের ফাহিম ব্রিকস গিয়ে দেখা যায়, ভাটার পাশেই টমেটু, লাউ, কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসলের বৃহৎ একটি খামার, চার পাশে মানুষের বসত বাড়ি।
ভাটার ধুঁয়ায় বসত বাড়ির গাছ গাছালি মরে যাচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে ফসলের ক্ষেত। ভাটাটি ঝিকঝাক হলেও পোড়ানো হয় বনের কাঠ। বনের কাঠ চেড়াই করার জন্য ভাটার পাশেই রয়েছে একটি অবৈধ করাত কল। পার্শ্ববর্তী খালে কাঠ ভর্তি একটি নৌকা খালাসের অপেক্ষায় নোঙ্গর করা দেখা গেছে।
হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের সামরাজ এলাকায় মোহনা বিক্সে গিয়ে দেখা যায়, ভাটার পাশেই বনের কাঠের বিশাল স্তুপ, এসব বিশাল স্তপ থেকে কাঠ স্ব-মিলে চেরাই করে ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে। ভাটার ধুঁয়ায় বসত বাড়ির গাছ গাছালি মরে যাচ্ছে।
ক্ষতি হচ্ছে ফসলের ক্ষেত,ভাটাটি ঝিকঝাক ও অনুমোদন আছে বলে দাবী ভাটা মালিক পক্ষের। তবে এর স্বপক্ষে কোন কাগজ দেখাতে পারেননি। ওই এলাকার সরমান বিক্সে গিয়েও একই দৃশ্য দেখা গেছে। সরমান ব্রিক্সের ম্যানেজার ফাহিম ইটের ভাটাও করাত কলের অনুমোদন আছে দাবী করলেও এর স্বপক্ষে কোন কাগজ দেখাতে পারেননি।
তবে ফাহিম দাবী করেন পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের দুই লাখ টাকা জরিমানা করে এবছরের জন্য কাঠ পুড়ে ইট তৈরীর অনুমতি দিয়ে গেছেন। ফাহিম ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম, মোহনা ইটভাটার মালিক বেলায়েত হোসেন মহানজন জানান, সরকারি নিয়মকানুন মেনে ইটভাটা পরিচালনা করতে গেলে আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে।
কয়লার দাম অনেক বেশি তাই ভাটায় কাঠ পোড়াতে হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.শোভন কুমার বসাক বলেন- ইটের ভাটার ধোয়ায় শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের ক্যান্সার, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসার উপ সহকারি -পরিচালক মো. এমাজউদ্দীন বলেন- ইটের ভাটার গরমে গাছ ও ক্ষেতের ফসল পড়ে যায়, মৎস্য খামারের মাছও মরে যায়, আর ধোয়ায় ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নওরীন হক বলেন- বিষয়টি লিখিত ভাবে জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হবে, সেখান থেকে যে নির্দেশনা আসবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিবেশ অধিদফতর ভোলার সহকারি পরিচালক মো. তোতা মিয়া বলেন,ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদফতর অভিযান চালিয়ে তিনটি অবৈধ ইট ভাটা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ৯ টি ভাটার জরিমানা করা হয়েছে।এদিকে স্থানীয়রা তাদের ওই অভিযানকে লোক দেখানো বলে মন্তব্য করেছেন।
Leave a Reply