শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৭:৩২ অপরাহ্ন

মাদারীপুরের টেকেরহাট শ্রম বিক্রির হাট,নারী পুরুষের এই হাটে প্রতিদিন হয় শ্রম কেনা বেচা

আরিফুর রহমান মাদারীপুর প্রতিনিধি
  • Update Time : সোমবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ১৩৩ Time View

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার টেকেরহাটে প্রতিদিন বসে শ্রম বিক্রির হাট। ভোর হওয়ার আগেই এই হাটে জড়ো হন শ্রমিক নারী-পুরুষ। যাদের শ্রমিক প্রয়োজন তারা এই হাটে এসে দরদাম করে শ্রমিক নিয়ে যান কাজ করানোর জন্য। রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে যেমন দূর্ভোগে পরে এসব শ্রমিকেরা তেমনী ঝুঁকি থাকে সড়ক দুর্ঘটনার।

জানা যায়, প্রায় ৩০ বছর ধরে ভোরের আলো ফোঁটার আগে নারী পুরুষ জড়ো হন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের টেকেরহাটের ব্রিজের ঢালে। উদ্দেশ্য শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে চান এ সকল নারী পুরুষ। যাদের শ্রমিক প্রয়োজন তারা এই হাটে এসে পছন্দের শ্রমিক বেছে দরদাম করে নিয়ে যান নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। এই হাটটি স্থানীয়দের কাছে মানুষ বিক্রির হাট আবার কারো কাছে শ্রম বিক্রির হাট হিসাবে পরিচিত। খোলা আকাশের নিচে শত শত নারী পুরুষের ভিড় হওয়ায় রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে দূর্ভোগে পড়ে এসব মানুষজন। আবার ঢাকা-বরিশাল রুটের ব্যস্ততম মহাসড়ক হওয়ায় ঝুঁকি থাকে সড়ক দুর্ঘটনার। শ্রম বিক্রির এই হাটে শ্রমিকের মুজরী নিয়ে শ্রমিক ও শ্রম কিনতে আসা মানুষের আছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য।
শ্রম বিক্রি করতে আসা কয়েকজন জানান, বর্তমানে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জীনিসপত্রের যে দাম তাতে প্রতিদিন তারা যে মুজরী পান তা দিয়ে সংসার চলে না। এই বাজারে একজন শ্রমিকের এক দিনের মুজরী ধরা হয় ৩শত থেকে ৫শত টাকা। যেহেতু তারা শ্রমিক তাই অন্য কাজ করতে না পারায় তারা এই বাজারে এসে বাধ্য হয়ে এই টাকায় শ্রম বিক্রি করে শ্রমিক হিসাবে কাজ করে। এখানে শত শত নারী পুরুষ তাদের শ্রম বিক্রি করতে আসে। প্রতিদিন কিছু শ্রমিক কাজ পেলেও বেশীরভাগ শ্রমিকের ভাগ্যে কাজ জোটেনা। তাই অর্ধাহারে অনাহারে তাদের দিন কাটাতে হয়।
অন্যদিকে কয়েকজন নারী শ্রমিক জানান, পুরুষের তুলনায় তাদের মুজরী কম। তাদের এক দিনের মুজরী দেয়া হয় আড়াইশত টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে ৩শত টাকা পর্যন্ত। তারপরও তারা কেউ কেউ কাজ পেলেও বেশীরভাগ নারীই থাকেন কাজ বঞ্চিত। তাই তাদের অবস্থা আরও খারাব বলে জানান।
শ্রমিক কিনতে আসা কয়েকজন জানান, শ্রমিকদের মুজরী বেশী তাই তাদের দিয়ে কাজ করনো আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। শ্রমিকদের মুজরী যদি আর একটু কম হত তাহলে ভাল হত।
খোলা জায়গায় মহাসড়কের পাশে বসে এই হাট। তাই বৃষ্টি হলেই তাদের সবাইকে ভিজতে হয়। এক কথায় শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সবই যায় তাদের উপর দিয়ে। এছাড়া রাস্তার পাশে হওয়ায় ধুলা ময়লা তাদের নিত্য সঙ্গি। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কটি ব্যস্ততম মহাসড়ক হওয়ায় যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা।
বিষয়টি রাজৈর পৌরসভার মেয়রের দৃষ্টিতে আনা হলে পৌর মেয়র নাজমা রশীদ বলেন, পৌরসভার বড় কোন ফান্ড নেই যে কোন জমি কিনে শ্রম বাজারের শ্রমিকদের সেডের ব্যবস্থা করে দিবো। তবে জেলা প্রশাসক যদি একটি খাস জমি শ্রম বাজারের জন্য নিদৃষ্ট করে দেন তাহলে সেখানে পৌরসভার অর্থায়নে সেড করে দিব। যাতে শ্রমিকরা এই সেডের মধ্যে বসতে পারে এবং রোদ বৃষ্টি ঝড়ে তাদের কোন সমস্যা না হয়।
শ্রম হাটের শ্রমিকদের দুরবস্থা ও রাজৈর পৌরসভার মেয়রের বক্তব্য জেলা প্রশাসক মো. মারুফুর রশিদ খানকে জানালে তিনি সাথে সাথে রাজৈর পৌর মেয়রকে শ্রম হাটের আশে পাশে কোন একটি খাস জমি দেখতে নির্দেশনা দিয়ে দেন। জমিটি যদি অবৈধ দখলে থাকে তাহলে তিনি তা উচ্ছেদ করে শ্রম বাজারের জন্য নির্ধারণ করে দিবেন বলে মেয়রকে জানান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যত দ্রুত সম্ভব শ্রমিকদের জন্য একটি ভাল মানের শ্রম বাজার করে দেয়ার চেষ্টা করবেন।

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category