মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাশকান্দি ইউনিয়নের এক ব্যক্তি ৪০ জনকে ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ওই ব্যক্তির হয়ে এক ইউপি সদস্য ও তার ভাই ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি অনেকের টাকা গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, এই ৪০ জনকে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাদের আটকে রেখে টাকার জন্য চাপ দেওয়া হয় পরিবারের লোকদের। বাশকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রাসেল বেপারি, তাঁর ভাই ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি গোলাম মাওলা বেপারি, এলাকার মাতবর মতিন সিপাইসহ আরও কয়েকজনের এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে বলে অভিযোগ। দালাল শহিদ দিপাইয়ের অনুপস্থিতিতে বেশ কিছু লোকের টাকা গ্রহণ করেছেন ইউপি সদায় ও তাঁর ভাই। গত শনিবার রাতে লিবিয়ায় ৭ যুবককে আটক করে ওই দেশের পুলিশ। পরে বাশকান্দি ইউনিয়নের মির্জারচর গ্রামের সামাদ সিপাইয়ের ছেলে মানব পাচারকারী শহিদ সিপাইয়ের ভাই মেরাজ সিপাইকে স্থানীয় শেষপুর বাজারে আটক করে ওই সাত যুবকের পরিবার।
কিছুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি ভিডিও নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে। ভিডিওটি পোষ্ট হয় গত ৫ নভেম্বর রাশেদুজ্জামান নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে। এ ছাড়া ‘লিবিয়া টু ইতালি বাশকান্দি ইউনিয়ন সেম নিউজ’ নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রতিনিয়ত হচ্ছে কোনো না কোনো ভুক্তভোগীর ভিডিও পোষ্ট। যেখানে তারা তাদের করুণ কাহিনির বর্ণনা দেন। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। চলতি সপ্তাহে লিবিয়ায় পুলিশের হাতে সাতজন আটক হওয়ায় শহিদের ভাই মেরাজকে আটক করে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। লিবিয়ায় আটক যুবকদের ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
লিবিয়ায় আটক ব্যক্তিরা হলেন- বাশকান্দি ইউনিয়নের মির্জারচর গ্রামের সুলতান খানের ছেলে জুলহাস মান, ছলেনামা বাজিতপুর গ্রামের ইউনুস ছেলে সজীব বেপারি, মফেজ মাতুকারের ছেলে কামাল মাতুব্বর, সাহেব আলী সরদারের ছেলে
অভিযোগ ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে
লিবিয়ায় আটক যুবকদের ফিরিয়ে আনার আকুতি
তুষার সরদার, বোরহান মোল্লার ছেলে রুহুল আমিন
মোল্লা, হালিম হাওলাদারের ছেলে হাবিন হাওলাদার ও কিনাই মোল্লার ছেলে কিবরিয়া মোল্লা। এই সাত ভুক্তভোগীর পরিবার মেরাজকে সারাদিন আটক করে রাখে। পরে চলতি মাসের মধ্যে লিবিয়ায় আটক যুবকদের ফিরিয়ে আনার শর্তে তাঁকে ছেড়ে দেয়। ভুক্তভোগী ও তাঁর স্বজনরা জানান, শহিদ সিপাই একেকজনের কাছ থেকে ১১ থেকে ১৫ লাখ টাকা করে প্রায় ৫ কোটি টাকা নিয়েছেন তাদের যন্ত্রনাদর ইতালি পৌঁছে দেবেন বলে। কিন্তু প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও ইতালি নিয়ে যাননি, এমনকি তাদের খোঁজও দিচ্ছেন না।
হাবিব সিপাই নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, তাঁর চার সন্তানের মধ্যে তিন সন্তানই এখন লিবিয়ায় আটকা পড়েছেন। তিনি তাঁর বসতবাড়ি বিক্রি করে ছেলেদের পাঠিয়েছেন। তিনি জমি হারিয়েছেন, এখন সন্তানদেরও হারাতে বসেছেন। তিনি সন্তানদের ফেরত চান এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।
কিনাই মোল্লা নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, এক বছর হলো ছেলেকে লিবিয়া নিয়ে রেখেছে শহিদ। তাঁর ছেলের সঙ্গে মোট সাতজন পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য রাসেল বেপারি ও যুবলীগের সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, প্রতিশক্ষ তাদের নামে অপবাদ দিচ্ছে। এই অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তারা নিজেরাই ভুক্তভোগী দাবি করে বলেন, তাদের আপন বোনের ছেলে ও ভাতিজাও এখন লিবিয়ায় আটক আছে।
শহিদ সিলাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে তাঁর বাড়িতে গেলে দেখা যায়, দরজায় তালা ঝুলছে। স্থানীয়রা জানান, শহিদ লিবিয়া চলে গেছেন।
শিবচর থানার ওসি সুরত গোলদার বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ এলে বা মামলা হলে তদন্ত্রের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply