শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:১১ পূর্বাহ্ন

সারাদেশে প্রসিদ্ধ বিরুলিয়ার ‘লাল গোলাপ’

মো.মাইনুল ইসলাম ,সাভার প্রতিনিধি
  • Update Time : শনিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ১৮৭ Time View

রাজধানীর মিরপুরের অতি নিকটে এবং সাভারের তুরাগ নদীর পাড় ঘেঁষে দ্বীপের মতো গড়ে উঠেছে একটি গ্রাম বিরুলিয়া। এই গ্রামের নামেই নামকরণ করা হয়েছে বিরুলিয়া ইউনিয়ন।

এই ইউনিয়নের ২৯টি গ্রামের কয়েকটি গ্রামের মেঠো পথ ধরে হাঁটলে মনে হবে এযেন গোলাপের রাজ্য’র মধ্য হাঁটছি বাণিজ্যিক বা সখের বসেই হোক না কেন এ গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই যেন গোলাপের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।

সাভারের বিরুলিয়ায় বিরুলিয়া ইউনিয়নের গ্রামবসীদের সঙ্গে কথা বলে জনাযায়, ১৯৯০ সালে ঢাকার কয়েকজন যুবক ঘুরতে এসে এলাকার আবহাওয়া, গাছপালা লালমাটির জমিগুলো গোলাপ চাষে উপযোগী মনে হলে অন্যের জমি লিজ নিয়ে এ এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে প্রথম গোলাপ চাষ শুরু করেন।

ফলন ভালো আর ওই যুবকদের সফলতা দেখে স্থানীয়রাও ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেন এবং চাষ শুরু করে। খুব কম সময়ের মধ্যে তা গ্রামের সবার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৫০ হেক্টরের অধিক জমিতে গোলপের চাষ হয়।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় বিরুলিয়ার মোস্তাপাড়া, সামাইর ও শ্যামপুর এলাকায়। প্রায় দুই শতাধিক চাষি বাণিজ্যিকভাবে এ ফুলের চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। ফলন আর চাহিদা ভাল সহ ও আর্থিক লাভবান হওয়ায় দিনে দিনে বাড়ছে এ চাষির সংখ্যা।

গোলাপ ফুলের গ্রামটিতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সড়কের পাশে, বাড়ির সামনে এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনের সব জায়গাতেই গোলাপ চাষ করা হয়েছে। সকালে গোলাপের বাণিজ্যিক বাগান গুলোতে কাউকে কোনও কাজ করতে দেখা যায়নি।

তবে দুপুরের পর প্রতিটি বাগানেই শ্রমিকদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ফুল কাটা, ফুল বাছাই, ফুল ভেজানো, ফুল বাঁধা সবই যেন কৃষক শেষ করেন সন্ধ্যের আগেই। কারণ সন্ধ্যোর পরই জমে মোস্তাপাড়া ও শ্যামপুর ফুল বাজার।

যেখানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ফুলের পাইকাররা এসে পাইকারীভাবে ফুল কেনেন। গোলাপ চাষের জনপ্রিয়তা নিয়ে জানতে চাইলে চাষি সবুর বলেন, গোলাপ চাষ একটি নিশ্চিত লাভের ব্যবসা। এতে খুব কম ঝুঁকি থাকে কারণ একবার চাড়া রোপন করলে ২৫ বছর নিশ্চিন্তে ফলন পাওয়া যায়।

একদিন বাজারে গোলাপের দাম কম পেলেও পরে তা পুষিয়ে নেওয়া যায়, যা অন্য কোনও সবজি চাষে এমন সুবিধা পায় না কৃষকরা। এছাড়াও বিক্রিরও কোনও ঝামেলা নেই। বাড়ির কাছে সৃষ্ট ফুলের বাজার গুলোতে পাইকাররা এসে ফুল কিনে নিয়ে যায় তাতে করে বাড়তি কোন ঝামেলায় পড়তে হয়না ফুল চাষীদের।

সাভারের বিরুলিয়ায় ফুলের বাগানে কথা হয় কৃষক আলাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে মেরিন্ডা, হাজারি, লিংকন, পাপা মিলন, বধূয়া বা হলুদ ও সাদা গোলাপের চাষ হয়। তবে বাজারে চাহিদা বেশি লাল মেরিন্ডার। এই গ্রামের ৯০ শতাংশ মানুষেরই এখন প্রধান জীবিকা এই ফুল চাষ। সাভার কলেজের এক শিক্ষার্থী জানান, বাবার সঙ্গে তিনি এ গোলাপ চাষের হাল ধরেছেন।

তারা ১১০ শতাংশ জায়গায় গোলাপের চাষ করেছেন। তাদের চাষ করা গোলাপ ঢাকা, চট্টগ্রাম এমনকি দেশের বাইরেও যাচ্ছে। ১৬ ডিসেম্বর, ১৪ ফেব্রুয়ারি (ভালোবাসা দিবস), একুশে ফেব্রুয়ারি, পয়লা বৈশাখ, নববর্ষ, বিয়ের অনুষ্টানসহ বিশেষ দিনে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুন এবং দামও পাওয়া যায় ভালো।

মোস্তাপাড়া ফুল বাজারে কথা হয় টাঙ্গাইলের ফুল ব্যবসায়ী আশিকুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ক্রেতাদের কাছে এই এলাকার গোলাপের চাহিদা অনেক বেশী এবং গ্রামটিতে গোলাপের চাষ বেশি হওয়ায় উৎপাদনও অনেক থাকে।

তাই আমরা চাহিদা অনুযায়ী গোলাপ কিনতে পারি। বিরুলিয়া ফুল চাষি সমিতির আহ্বায়ক মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেনঃ প্রতিদিন বিরুলিয়ার বাজার গুলোতে প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার ফুল বিক্রি হয়। যদি সরকার ফুল রফতানিতে আরও ভূমিকা রাখতো তাহলে এর চেয়ে বেশি গোলাপ বিক্রি হতো বাজার গুলোতে।

শুধু যে ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি এ গ্রামটিতে তা নয়, গোলাপের গ্রামগুলোর সৌন্দর্যের কথা বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

ফলে প্রতিদিনই ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এসে ভিড় জমাচ্ছেন গ্রামের এসব বাগান গুলোতে। সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেনঃ মাঠ ফসলের পাশাপাশি ফুল চাষেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস।

গোলাপ চাষে যেন চাষিরা আরও বেশি লাভবান হন তার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে কৃষকদের পরিচিত করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও উন্নত ফলনের জন্য যা যা করণীয় সব ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হবে।

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category