শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন

নাটোরে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২০
  • ১২৫ Time View

মোঃ জামিল হায়দার (জনি),নাটোর জেলা প্রতিনিধিঃ নাটোরের নারায়নপুর গ্রামে পারিবারিক বিরোধে স্ত্রী আনোয়ারা বেগম শিল্পিকে (৩০) কুপিয়ে হত্যা করেছে স্বামী মঈনুল হোসেন মনির (৩৫)। প্রকৃতির কাজ সারার কথা বলে স্ত্রী শিল্পিকে ঘরের বাহিরে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে হত্যা করে পালিয়ে যায় মনির। ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকার মসজিদের মাইকে ঘাতক মনিরকে ধরার ঘোষনা দেয়া হলেও তাকে ধরতে পারেনি এলাকাবাসী। গত রাত(সোমবার) ২টার দিকে এই নৃসংশ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী ও সজনরা জানায়,স্বামী -স্ত্রী দু’জনেই দিন মজুরী করলেও মনির অধিংকাংশ বেকার জীবন যাপন করত।এনিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ লেগেই থাকত। মনির কাজের কথা বলে ঢাকায় থাকতো। গত এক সপ্তাহ আগে সে নাটোরে স্ত্রীর কাছে আসে। সোমবার রাত ২টার দিকে প্রকৃতির কাজ সারার কথা বলে স্ত্রী শিল্পিকে ঘরের বাহিরে ডেকে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শিল্পির একটি হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। অপর হাত শরীর সাথে ঝুলছিল এবং ওই হাতের কয়েকটি আঙ্গুল কেটে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। এছাড়া ঘাড়ের পিছন সহ শরীরের বিভিন্ন অংশ কোপানো ছিল। রক্তশুন্য হয়ে শিল্পি সাদা হয়ে যায়। স্ত্রী শিল্পিকে এলোপাতারি কোপানোর পর ঘাতক স্বামী মনির পালিয়ে যায়। শিল্পির চিৎকার শুনে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে গিয়ে শিল্পির রক্তাক্ত নিথর দেহ পরে থাকতে দেখে । তারা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন। নিহতের চাচাতো ভাই মান্নান ও প্রতিবেশী আবুল হোসেন বলেন, দিন মজুরি করলেও মনির সংসারের কোন খরচ দিত না। উপরুন্তু মাঝে মাঝে বাড়িতে এসে স্ত্রী শিল্পির কাছে থেকে জোর জবরদস্তি করে টাকা হাতিয়ে নিত। না দিলেই স্ত্রীকে নির্যাতন করতো। শিল্পি নিজে মৌসুমে ইটভাটায় এবং অন্য সময়ে মানুষের বাড়িতে ঝিগিরি ও দিন মজুরি করে সংসার খরচ দু’ই মেয়ের ভবিষ্যৎ ভেবে সঞ্চয় করছিলেন। ওই টাকা হাতিয়ে নেওযার জন্যই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায় বিরোধ বাধতো। গতরাতে (সোমবার) শিল্পিকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যাওয়া মনিরকে ধরার জন্য এলাকার মসজিদের মাইকে প্রচার করা হলেতারা শিল্পির ছুটে এসে উঠোনে রক্তাক্ত অবস্থায় শিল্পিকে পড়ে থাকতে দেখতে পান। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়। শিল্পির মৃত্যুতে তাদের দুই শিশু কন্যা ৮ম শ্রেণীতে পড়া মৌমিতা ও ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে মহিমার ভবিষ্যত এখন অন্ধকার। তাদের রিক্সা চালক নানাও বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত। এই শিশু কন্যার সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ সহ হৃদয়বানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা। শিল্পির শিশু কন্যা মহিমা জানায়, ঘটনার রাতে মা-বাবার কাছেই ছিলেন। বাবা তার মাকে বাহিরে ডেকে নিয়ে মারপিট করছিল। ভয়ে আমি বাহিরে বের হয়নি। পরে শুনেছি আব্বা তার মাকে মেরে ফেলেছে। মায়ের কথা ভেবে কেঁদেই চলেছে মহিমা ও মৌমিতা। ওরা তাদের মায়ের হত্যার বিচার চায়। নিহত শিল্পির বাবা রিক্সাচালক বাহার আলী জানান, প্রায় ১৭ বছর আগে সদর উপজেলার পার্শ্ববর্তী সুলতানপুর গ্রামের মৃত জাফরের ছেলে মইনুল হোসেন মনিরের সাথে শিল্পির বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের দুই কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তার দেয়া এক চিলতে জমিতে ছনের ঘর করে স্বামী সন্তান নিয়ে সেখানেই বাস করতো শিল্পি। কিন্তু মেয়ের কপালে সুখ ছিলনা। মনির কাজ কাম করতনা। কাজ করতে বললেই সে আমার মেয়ের ওপর নির্যাতন চালাতো। বাড়িতে কম থাকতো সে। কদিন আগে সে মেয়ের কাছে আসে। সোমবার রাতে আমার মেয়েকে পশু হত্যা করার মত কুপিয়ে হত্যা করেছে পাষান্ড মনির। আমি তার ফাঁসি চাই। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ওমর আলী পাঠান বলেন, রাতেই খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। শিল্পির স্বামী একজন বেকার মানুষ। এছাড়া এলাকাবাসীর মাধ্যমে জেনেছেন সে মাদকাসক্ত। ধারনা করা হচ্ছে মাদকের টাকার জন্যই হয়ত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধের জেরে এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করবে হয়ত। তাদের শিশু সন্তানদের জন্য কিছু করা প্রয়োজন। নাটোর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম জানান, লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরন করা হয়েছে। নিহতের স্বামী মনিরকে ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category