আজ ২৬ অক্টোবর জনাব ফজলুল হক এর জন্মদিন। ১৮৭৩ সালের এই দিনে পুরো নাম আবুল কাশেম ফজলুল হক বাকেরগঞ্জ জেলায় যার বর্তমান নাম ঝালকাঠি রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়ায় তার নানার বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি একে ফজলুল হক নামে বহুল পরিচিত। রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের কাছে শেরে বাংলা, বাংলার বাঘ এবং হক সাহেব নামে অধিক পরিচিত ছিলেন।
তার পৈতৃক নিবাস ছিল বরিশাল শহর থেকে ১৪ মাইল দূরে বানারীপাড়ার চাখার নামক গ্রামে। তার পিতা মৌলভী মোহাম্মদ ওয়াজেদ এবং মাতা সৈয়দন্নেসা খাতুন।
মক্তবের পড়া শেষ করে ১৮৮১ সালে তিনি বরিশাল জিলা স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৮৮৬ সালে অষ্টম শ্রেণীতে তিনি বৃত্তি পান ও ১৮৮৯ সালে ফজলুল হক প্রবেশিকা পরীক্ষায় তৎকালীন ঢাকা বিভাগে মুসলমানদের মধ্যে প্রথম স্থান দখল করেন। তিনি ১৯০৩-১৯০৪ সালে রাজচন্দ্র কলেজে খন্ডকালীন অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯০৬ সালে প্রশাসনে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগ দান করেন তিনি। তিনি নবাব সলিমুল্লাহ ও নবাব নওয়াব আলী চৌধুরীর হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন। ১৯০৬ সালে ভারত মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার সময় থেকে ১৯১৩ সালে তিনি অবিভক্ত বাংলার মুসলিম লীগের সেক্রেটারি হোন। আবার ১৯১৬ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যখন এম.এ. পাশ করেন তারপর তিনি দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করেছিলেন । তার পুত্র ফাইজুল হক ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পাট প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ।
রাজনীতিবিদ একে ফজলুল হক ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সেক্রেটারিও ছিলেন। তিনি ১৯২৯ সালে স্যার আবদুর রহিমকে সাথে নিয়ে ‘প্রজা পার্টি’ নামক দল গঠন করে জমিদারি প্রথা ও রেয়াতব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৩৫ সালে ফজলুল হক কলকাতার প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হয়ে ছিলেন। তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হওয়ার পর তিনি স্থায়ীভাবে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন।
১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত শেরে বাংলা রাজনৈতিকভাবে বেশ নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। ঢাকায় স্থায়ী হয়ে আইন পেশা দেখাশোনা শুরু করেন তিনি। এই সময় তিনি পূর্ব পাকিস্তানের এডভোকেট জেনারেলের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের পরে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক নতুন করে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য আওয়ামী লিগের সাথে যুক্ত হয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠনের সময় তিনি ছিলেন সামনের সারির অন্যতম একজন। নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভায় আবারো মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পূর্ব বাংলার দায়িত্ব নেন এই বাংলার বাঘ। তৃতীয়বারের মতো বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেছিলেন তিনি। শারীরিক অক্ষমতার কারণে ১৯৫৮ সালে তিঁনি রাজনীতি থেকে অবসর নেন।
তিনি মুসলমানদের শিক্ষা বিস্তারে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন। তিনি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তার মধ্যে অন্যতম ইডেন কলেজ, কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ, আদিনা ফজলুল হক কলেজ, তেজগাঁও এগ্রিকালচার কলেজ (বর্তমানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) প্রভৃতি। বাংলা একাডেমী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা ছিল অপরিসীম।
এই মহান নেতা ১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল ৮৯ বছর বয়সে ঢাকায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বর্তমানে হাইকোর্টের পশ্চিম পাশে তার মাজার অবস্থিত। একই স্থানে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও খাজা নাজিমুদ্দিনেরও কবর রয়েছে সেখানে । তাদের তিনজনের সমাধিস্থলই ঐতিহাসিক তিন নেতার মাজার নামে আজ পরিচিত৷ লেখা ঃ মুগ্ধ খন্দকার। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ ঃ গুগল, উইকিপিডিয়া।
Leave a Reply