মাগুরা সংবাদদাতা: এ যেন সমসাময়িক বাংলার প্রত্যেক পরিবারের চিরাচরিত একটি গল্প। যিনি সারা জীবন সংসারের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন, সময়ের প্রয়োজনে যাকে বইতে হয়েছিল সংসার নামের একটি বিশাল বোঝা। যতদিন নিঃস্বার্থভাবে সংসারের জন্য করে গেছেন ততদিন তিনি ছিলেন পরিবারের সবার আপন, সংসারের হিরো কিন্তু স্বার্থের কারণে এখন সবার চক্ষুশূল। আমরা মাগুরার মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে কথা বলছি, যাকে নিয়ে কিছুদিন আগে একটি নিউজ ভাইরাল হয়েছে। নিজের মা বাধ্য হয়েছেন ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করতে। কিন্তু কেন?
মা এমন একটা শব্দ যা প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে বসত করা একটি আদর্শের জায়গা। কিন্তু আজকাল কয়জন মা তার সেই আদর্শকে ধরে রাখতে পারছেন, কিংবা শেষ বয়সে অর্থনৈতিক টানাপোড়নে অন্য সন্তানদের চাপে কতটুকুই বা ধরে রাখা সম্ভব?
চলুন মোহাম্মদ আলীর গল্পের ভিতরটাতে একটু প্রবেশ করি:
মোহাম্মাদ আলীর পিতা এ.কে. মুজিবর রহমান ম্যাজিষ্ট্রেট থাকাকালীন সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর মা সুফিয়া খাতুনের সমস্ত দেখাশুনার দায়িত্ব পড়ে ছোট্ট এই ছেলেটির উপর, সেই থেকে আজ পর্যন্ত দীর্ঘ ৩০ বৎসর যাবৎ দেখাশুনা করে আসছেন। বড় ভাই শফিকুজ্জামান বর্তমানে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত এবং পরিবার নিয়ে সেখানেই থাকে মেঝ ভাই মনিরুজ্জামান পরিবারসহ ডেনমার্ক প্রবাসী, ছোট ছেলে মোহাম্মাদ আলী এবং তার স্ত্রী, মা মোছাঃ সুফিয়া খাতুনকে সাথে রেখে এতোদিন ধরে একাই দেখাশুনা করে আসছিলেন।
বাবার পেনশনের টাকা দিয়ে কেনা দোকান থেকে যা আয় হতো সেটা দিয়ে সংসার চলতো, আর মোহাম্মদ আলী একটা এনজিওতে চাকরি করা বাবদ যে আয় হত তার থেকে কিছু টাকা জমিয়ে মোহাম্মদ আলী ও তার মেজ ভাই মাগুরা স্টেডিয়াম পাড়াতে মাত্র তিন শতকের ছোট একখণ্ড জমি ক্রয় করেন। দুই ভাই তাদের প্রথম রোজগারের টাকায় কেনা জমিটা মায়ের নামে রেজিট্রি করে দেয় এবং পরবর্তীতে উক্ত জমিতে নিচতলা নির্মাণ করেন মোহাম্মদ আলী এবং উপরের তলা নির্মাণ করেন তার মেজ ভাই এবং উক্ত বাড়িতে ১৪ বছর সুনামের সাথে বসবাস করে আসছে, কিছু বছর পর তাদের পরিবার হবার পর মা মোছাঃ সুফিয়া খাতুন উক্ত জমিটা দুই ছেলেকে ফেরত দিয়ে পাকা দলিল করে বুঝিয়ে দেন । আর ঘটনার সূত্রপাত এখান থেকে।
এখন তারই ছোট বোন এবং জামায় মায়ের এই জমি ফেরত দেয়ার ব্যাপারটি মেনে নিতে পারেননি, মূলত তাদেরই পরিকল্পনায় মাকে নানামুখী চাপে ফেলে মোহাম্মাদ আলীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করতে বাধ্য করানো হয় এবং পরবর্তীতে মোহাম্মদ আলী কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে নিক্ষিপ্ত হন । অন্যদিকে তার স্ত্রী ও সন্তানদের বিভিন্নভাবে হয়রানি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে উক্ত স্টেডিয়াম পাড়ার বাড়িটা দখলের পাঁয়তারা করছে।
এদিকে, মোহাম্মদ আলীর ছোট বোন দাবি করেন তার মা এবং মোহাম্মদ আলীর স্ত্রীর মিল না হওয়ায় মূলত সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আসলে বাঙালি মধ্যবিত্তদের বউ শাশুড়ি সম্পর্কটা যেন তেল ও জলের সম্পর্কের মতো, কখনোই যেন একসাথে মিশতে চায়না। আত্মীয়স্বজনদের উচিত কোন পক্ষ অবলম্বন না করে উভয়পক্ষকে ভালো করে বুঝানো আর তাতেই হয়তো সমস্যার সমাধান মিলবে।
Leave a Reply