শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ০৭:৩৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
হতাশায় শেষ বাংলাদেশ, জয়ের কাছাকাছি শ্রীলঙ্কা পাকিস্তানের সঙ্গে স্থগিত, বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন চুক্তি করতে আগ্রহী ভারত সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য কঠোর নির্দেশনা, অমান্য করলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা আবারও ৪ দিনের রিমান্ডে ‘নগদ’-এর নেতৃত্বে নতুন চেয়ারম্যান ডিভোর্সের গুঞ্জন নিয়ে মুখ খুললেন ঐশ্বরিয়া ইউক্রেন বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) অনুরোধ জানাবে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সিইসির একান্ত বৈঠক আবারও বাড়ছে স্বর্ণের মূল্য আমীর খসরু: শক্তিশালী সংসদ গঠনে সহায়তা করবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)

আমার বাবা-আমার ভালোবাসা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : শনিবার, ৩ জুলাই, ২০২১
  • ৪৪৪ Time View

(পর্ব-০৪)

১৯৮২ সাল, আমি বুয়েটে ভর্তি হয়েছি, ডিপার্টমেন্ট যন্ত্রকৌশল । ভর্তি শেষে গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসেছি। বাবা আট বছর সময় ধরে প্যারালাইজড অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছেন। বিবেক ,বুদ্ধি , স্নায়ু , অনুভূতি সবই ঠিক আছে । পারে না শুধু নিজের কাজগুলো নিজে করতে এবং অন্যের সাহায্য ছাড়া ঘুরে ফিরে শোয়ার জন্য শরীরের নিজের অঙ্গ বদল করে শুয়তে । আমার বাবার সে এক অসহনীয় কষ্টের জীবনের কথা । বাবার এই অসহনীয় কষ্টের জীবনে তার ছেলে হিসাবে আমি তেমন কিছুই করতে পারি নাই টোটকা ফোটকা সেবা ছাড়া । তবে যে সেবাটা আমার বাবার সন্তানের কাছে পাওয়ার কথা ছিলো আমি তার পুরোপুরিটা করতে পারিনি । মহান আল্লাহ পাক তাঁর নিজ গূনে এই অধম বান্দার অনিচ্ছাকৃত অপরাধ এবং ভুলক্রমে বাবার প্রতি কোনো অবহেলা হয়ে থাকেলে তা যেন ক্ষমা করে দেন ।

তখন মোবাইলের যুগ ছিলো না বিধায় আমার খুশির (বুয়েটে ভর্তির) খবরটি বাবাকেও জানানো যায়নি । তাই বাড়ীতে পৌঁছে সর্বপ্রথম বাবার পাশে গিয়ে আমি আমার মা আর মাতৃতল্য বড় ভাবিকে নিয়ে বসেছিলাম । আমার বাবা বিছানায় শায়িত অবস্থায় ছিলেন । আমার বুয়েটে চান্স পাওয়া এবং ভর্তির কথা শোনার পর আমার মাথাখানি টেনে তার বুকের উপর নিলেন । মুখে কিছুই বলতে পারছিলেন না । আবেগে বাবা এতটাই আপ্লুত হয়েছিলেন যে, তার কন্ঠ দিয়ে কোনো কথাই বের হলো না । শুধু দুই চোখ হতে অজস্র ধারায় ঝরা পানি তার গণ্ডদেশ বেয়ে বিছানা এবং বালিশ ভাসিয়ে একাকার করে ফেলেছিলেন । আর বাবার এই নীরব কান্নার সাথে আমার জোরে কান্না যোগ হয়ে বাবার পাকা চুলে ঢাকা মহব্বতের বক্ষ আমার চোখের লবনাক্ত গরম পানিতে ভরে গেল । সম্ভবত একেই বলে হর্ষ বিষাদের সেই সুখকর কান্না ।

সম্ভবত: অক্টোবর মাস, ১৯৭১ সাল । এই মাস আমার বাবা-মা এবং পুরা পরিবারের স্মৃতির খাতায় লেখা সবচেয়ে ভয়াবহ, বেদনা বিদুর , শোকে গাঁথা, দু:খ – কষ্টে ভরা ভয়ঙ্কর এক মাস । এই মাসে একদিনের ব্যবধানে আমার সবচেয়ে বড় এবং সেজো ভাই মারা যান । পুত্র শোকে কাতর এবং গভীর শোকে মুহ্যমান আমার বাব- মা । স্নেহময়ী বাবা মায়ের ভালবাসার মন্দিরে কাগজে মোড়ানো শোকের আঁধারের শাসনে আর নিপীড়নে ক্লান্ত হয়ে আস্তে আস্তে বয়সের ভারে আমার বাবা দূর্বল হতে শুরু করলেন । ১৯৭৬ সালে এসে আমার বাবা ধীরে ধীরে বিছানার কোলে নিজেকে সমর্পণ করলেন । যে বাবা এতোদিন বিচার সালিসি সহ নানা কর্মতৎপরতার এলাকা কাঁপিয়ে বেড়িয়েছিলেন সেই বাবা এখন পরমুখি হয়ে পড়লেন। মেজো ভাই আমাদের বড় পরিবারের হাল ধরলেন তার বিস্তারিত আমি লিখবো , “আমার বিবেকের সুতায় বাঁধা পর্ব গুলোতে” । বড় পরিবার এবং ছোট চার ভাই বোনের লেখা পড়ার খরচ মেটাতে মেজো ভাই মোটামুটি হীমসীম খাচ্ছে । এমন পরিস্থিতিতে সংসারের খরচ মেটাতে বাবার জমি বিক্রি করতে হতো । আর ঐ বিক্রি জমি দলিল করে দিতে অসুস্থ বাবাকে নৌকায় করে একাধিকবার নিয়ে যেতে হয়েছে উপজেলা সদরে । অসুস্থ বাবা সংসারের দায়বদ্ধতা আর সংসার চালানোর ঘানি তখনও টেনে চলেছে ।

প্রাইমারি স্কুলে আমি সব সময় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করতাম । প্রাইমারি শেষ করে আমি প্রাণের বেজড়া ভাটরা হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম । আমাদের এলাকার চার পাঁচটি প্রাইমারি স্কুলের প্রথম স্থান অধিকারী ছাত্ররা এসে বেজড়া ভাটরা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হলো । কিন্তু সব পরীক্ষায় আমি প্রথম হতে লাগলাম এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকারীর ছাত্রের চেয়ে মার্কের অনেক পার্থক্য থাকতো । প্রাইমারি স্কুলের দ্বিতীয় স্থান অধিকারী আমি নামক ছাত্রের প্রথম স্থান দখলের অনুপ্রেরণার কারিগর ছিলেন আমার বাবা । ওই দুর্দিনে আমার ক্লাসের সব পড়ার বই কিনে দেওয়ার সামর্থ্য ছিলো না । কিন্তু অনেক সময় স্কুল পিরিয়ডে অন্যের বই থেকে পড়ে তা আমার মাথার কুঠিরে রক্ষিত মেধার কৌটায় আবদ্ধ করে ফেলতাম । রাতে বাবা বিছানায় শুয়ে আমার পড়াশোনার দিকে খেয়াল রাখতেন । আমি পড়া বন্ধ করলে সাথে সাথেই বলে ওঠতেন বাবা পড়া বন্ধ করলে কেন ! সেই বাবা আজ আমার সাফল্যে পূর্বের স্মৃতির রোমন্থনে শুধু তার চোখের আনন্দের অশ্রু ঝরিয়ে যাচ্ছেন । বাবার ঐ চোখের জলে আমার হৃদয়ের হারমোনিয়াম এর সুর লহরীতে ভরে গেলো আমার সারা হৃদয় আর দেহ মন –

” বাবা আমার ভালোবাসা,
আমার বিবেকের হালখাতা,
বিবেকের সূতোয় বেঁধেছি বাবাকে,
রেখেছি আমার হৃদয়ের মনিকোঠায় ।” ( চলবে )

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Adsense