আকারে ছোট হওয়ায় অনেকেই একসঙ্গে কয়েকটি কোয়েল পাখির ডিম খেয়ে ফেলেন। তবে একসঙ্গে কতটি ডিম খাওয়া নিরাপদ বা বেশি খেলে কোনো ক্ষতি হতে পারে কি না, সে বিষয়ে অনেকেই নিশ্চিত নন।
সাধারণভাবে একটি মুরগির ডিমের ওজন হয় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম, যাতে থাকে প্রায় ৭ গ্রাম প্রোটিন। অন্যদিকে একটি কোয়েল পাখির ডিমের ওজন হয় ৯ থেকে ১০ গ্রাম এবং এতে থাকে প্রায় ১.২ গ্রাম প্রোটিন। আকারে ছোট হলেও ওজন অনুপাতে কোয়েলের ডিমে প্রোটিনের ঘনত্ব মুরগির ডিমের প্রায় সমান।
কোয়েল ডিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও বি, আয়রন, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। এসব উপাদান শরীর থেকে ফ্রি রেডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব কমায়, ফলে কোষগুলো সুরক্ষিত থাকে। এতে থাকা ভালো কোলেস্টেরল (HDL) রক্তনালিকে সুরক্ষা দেয় এবং খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া এতে থাকা উচ্চমাত্রার আয়রন হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। পাশাপাশি এই ডিম সহজেই হজম হয়।
একসঙ্গে কতগুলো কোয়েলের ডিম খাওয়া উচিত?
একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক দিনে সাধারণত ৩ থেকে ৫টি কোয়েলের ডিম খেতে পারেন। তবে নিয়মিত না খেয়ে সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন খেলে আরও ভালো হয়। যদি কারও কোলেস্টেরল বা হৃদরোগের সমস্যা থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে ডিম খাওয়া উচিত।
শিশুদের ক্ষেত্রে, যাদের বয়স ১ থেকে ৩ বছর, তারা ১ থেকে ২টি কোয়েলের ডিম খেতে পারে। তবে শুরুতে অল্প পরিমাণ দিয়ে দেখে নিতে হবে অ্যালার্জি আছে কি না। ৫ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুরা ৩টি ডিম খেতে পারে।
অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী মায়েরা দিনে ২ থেকে ৩টি ডিম খেতে পারেন। তবে একসঙ্গে বেশি ডিম খাওয়া এড়ানোই ভালো। কারণ কোয়েলের ডিমের কাঁচা সাদা অংশে থাকা ‘অ্যাভিডিন’ নামক প্রোটিন শরীরের বায়োটিন (ভিটামিন বি৭) শোষণে বাধা দেয়।
সতর্কতা হিসেবে, ডিম খাওয়ার আগে সবসময় সঠিক পরিমাণ ও পদ্ধতি মেনে চলা উচিত।
অতিরিক্ত কোয়েলের ডিম খেলে যা হতে পারে
১. কোলেস্টেরল বৃদ্ধি: দিনে ৩ থেকে ৪টির বেশি কোয়েলের ডিম খেলে রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
২. কিডনির উপর চাপ: যারা কিডনি রোগে ভুগছেন, তাদের জন্য অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
৩. অ্যালার্জি বৃদ্ধি: যাদের ডিমে অ্যালার্জি আছে, তাদের ক্ষেত্রে কোয়েলের ডিমে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া আরো তীব্র হতে পারে।
৪. পাচনের সমস্যা: বেশি খেলে বদহজম, গ্যাস এবং পেট ফাঁপা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৫. বায়োটিনের ঘাটতি: কাঁচা কোয়েলের ডিমের সাদা অংশে ‘অ্যাভিডিন’ নামক একটি প্রোটিন থাকে, যা শরীরে বায়োটিন (ভিটামিন বি৭) শোষণ বন্ধ করে দেয়। তবে ভালো করে রান্না করলে এটি কমে যায়। এছাড়া, কাঁচা বা আধা সেদ্ধ ডিমে সালমনেলা ব্যাকটেরিয়ার ঝুঁকি থাকে, তাই এভাবে খাওয়া উচিত নয়।
বিশেষ সতর্কতা: শিশু ও গর্ভবতী নারীদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কোয়েলের ডিম খাওয়া উচিত।
Leave a Reply