গঙ্গা চুক্তি নবায়নে ভারতের উদ্যোগ, বাংলাদেশের জন্য বাড়ছে উদ্বেগ
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালে। এর আগেই চুক্তির শর্তাবলী পর্যালোচনা করে ভারতের স্বার্থে নতুন কাঠামোয় চুক্তি নবায়নের পরিকল্পনা করছে নয়াদিল্লি। শুক্রবার (২৭ জুন) টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু নদীর চুক্তি বাতিলের পর এবার বাংলাদেশ-ভারতের ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তিতে পরিবর্তন আনতে চায় ভারত। দেশটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে শুষ্ক মৌসুমে ভারতের পানির চাহিদা অনেক বেড়েছে। ফলে, বর্তমান চুক্তি তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না।
ভারত চাইছে, প্রতি বছর মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত ফারাক্কা ব্যারাজ থেকে অতিরিক্ত ৩০-৩৫ হাজার কিউসেক পানি নেয়ার সুযোগ। এই প্রস্তাবের পক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ সরকারও একমত। ফারাক্কা ব্যারাজ মালদহ জেলায় হওয়ায় রাজ্য সরকারের মতামত গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদে স্বাক্ষরিত গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ফারাক্কা ব্যারাজে গঙ্গার পানির প্রবাহ দুই দেশের মধ্যে নির্দিষ্ট হারে ভাগ হয়। বিশেষ করে ১১ মার্চ থেকে ১১ মে পর্যন্ত দুই দেশ পর্যায়ক্রমে প্রতি ১০ দিন অন্তর ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পেয়ে থাকে। ভারত এখন এই সময়েই বেশি পানি নিতে চায়।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালে ভারত ফারাক্কা ব্যারাজ চালু করে, যার মাধ্যমে গঙ্গার পানি হুগলি নদীতে সরিয়ে নিয়ে কলকাতা বন্দরের কার্যক্রম সচল রাখা হয়। বাংলাদেশের অভিযোগ, এই বাঁধের ফলে পদ্মা নদীতে পানিপ্রবাহ কমে গিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মরুকরণের ঝুঁকি বাড়ছে; কৃষি, মৎস্য ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইন্দুস চুক্তি বাতিলের পর ভারতের এই উদ্যোগ দক্ষিণ এশিয়ার পানি কূটনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। নতুন গঙ্গা চুক্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থ কতটা সুরক্ষিত থাকবে, তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র বা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) ভবিষ্যৎ বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Leave a Reply