ট্রাম্প প্রশাসন শরণার্থী ও আশ্রয়প্রাপ্ত ব্যক্তিদের গ্রিন কার্ড আবেদন পর্যালোচনায় নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অতিরিক্ত যাচাই-বাছাইয়ের কারণে অভিবাসী ও শরণার্থীদের গ্রিন কার্ড আবেদন প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে বলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ নিশ্চিত করেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দুটি নির্বাহী আদেশের ফলে এই আবেদনের প্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলে গেছে, যার ফলে কয়েক হাজার বাংলাদেশিসহ ১০ লাখের বেশি বিদেশি যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের স্বপ্ন হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই আদেশ অব্যাহত থাকলে তারা অভিবাসনবিরোধী অভিযানের শিকার হতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়প্রাপ্ত শরণার্থীদের ব্যাপক যাচাইয়ের পর, তারা গ্রিন কার্ড আবেদন করার আগে অন্তত এক বছর যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে হবে বলে নির্দেশনা রয়েছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিবাসন নীতিতে জাতীয় নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন।
তবে ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন জাস্টিস সেন্টারের পরিচালক আজাদেহ ইরফানি এই সিদ্ধান্তকে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি-নৈতিকতার পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, সব অভিবাসীকে নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে দেখা ভুল দৃষ্টিভঙ্গি। এর ফলে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের অপেক্ষার সময়সীমা ৮-১০ মাস থেকে আরও দীর্ঘ হতে পারে।
এদিকে, গাজায় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অভিযোগে কিছু গ্রিন কার্ডধারী ও শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার এবং ৩০০ এরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিয়ো।
সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭৬,৮০০ জন বিদেশি রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন এবং ৪০,০০০ জন রিফিউজি হিসেবে গ্রিন কার্ডের আবেদন করেছেন। এই আবেদনগুলো বর্তমানে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলে আছে।
ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড সিটিজেনশিপ সার্ভিসের (USCIS) মতে, কয়েক লাখ পেন্ডিং আবেদন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশিও রয়েছেন। বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও এলডিপির কর্মী-সংগঠকরা রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন, পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন।
এই আদেশকে অমানবিক আখ্যা দিয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলো আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। USCIS সূত্র জানায়, গ্রিন কার্ডধারীদের গ্রেপ্তারের ঝুঁকি বাড়ায় সিটিজেনশিপ আবেদনের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ১.৩ কোটি গ্রিন কার্ডধারী রয়েছেন, যাদের মধ্যে ১.০৮ কোটি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এর মধ্যে আরিজোনায় সর্বাধিক ১,৯৩,০০০ জন বসবাস করছেন।
অন্যদিকে, গত ২৬ মার্চ ট্রাম্প একটি নতুন নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যাতে মার্কিন নাগরিকদের ভোট দেওয়ার জন্য নাগরিকত্বের প্রমাণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং ডাকযোগে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
সম্পাদক
এড. গৌরাঙ্গ বসু (ট্রিপল এম.এ)
প্রকাশক
সবুজ বালা
© ২০২৫ আলোকিত জনপদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত