যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) নিশ্চিত করেছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনা একটি হত্যাচেষ্টা।
বর্তমানে এই সংস্থাটি ঘটনাটি তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে। শুরুতে মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হলেও পরবর্তীতে এফবিআইয়ের কাছে তা হস্তান্তর করা হয়েছে।
শনিবার পেনসিলভেনিয়ায় একটি সমাবেশে গুলির শব্দ শোনার পরপরই নিরাপত্তা কর্মীরা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মঞ্চ থেকে সরিয়ে নেন। এর কিছুক্ষণ পর ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে বলেন, একটি বুলেটের আঘাতে তার কানের একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ঘটনায় সিক্রেট সার্ভিসের গুলিতে দুজন নিহত হয়। এদের মধ্যে একজন বন্দুকধারী, অন্যজন সমাবেশে অংশগ্রহণকারী।
সিক্রেট সার্ভিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আরও দুই অংশগ্রহণকারী গুরুতর আহত হয়েছেন।
সিক্রেট সার্ভিসের মুখপাত্র অ্যান্থনি গুগলিয়েমি বলেছেন, সন্দেহভাজন হামলাকারীকে সংস্থাটির এজেন্টরা গুলি করে। ১৯৮১ সালে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের ওপর হামলাই ছিল দেশটিতে কোনো প্রেসিডেন্ট বা বড় কোনো দলের প্রার্থীর ওপর হত্যাচেষ্টার সবশেষ ঘটনা। ওই ঘটনায় রিগ্যান মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিলেন।
এখনও এই হামলার কারণ সম্পর্কে জানতে পারেনি সংস্থাটি। স্পেশাল এজেন্ট কেভিন রোয়েক এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, আর কোনো হামলার আশঙ্কা তার সংস্থা করছে না। তবে হামলাকারীকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। হামলাকারী পেনসিলভেনিয়ার বেথেল পার্কের ২০ বছর বয়সী তরুণ থমাস ম্যাথিউ সি।
বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া হামলার ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই এর নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে ওবামা বলেন, আমাদের গণতন্ত্রে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। তিনি বলেন, আমরা এখনও জানি না, আসলেই কী ঘটেছিল। কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গুরুতর আহত হননি জেনে ভালো লাগছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুয়ারিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, মহাসচিব দ্ব্যর্থহীনভাবে এই রাজনৈতিক সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে তার শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লাইয়েন জানিয়েছেন, এই ঘটনায় তিনি গভীরভাবে মর্মাহত এবং তিনিও ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ তিনি গুলিতে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
এক্স-এ পোস্ট করা বার্তায় নিন্দা জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভেলাদিমির জেলেনস্কি, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ, ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি, পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেই দুদা।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই হামলার ঘটনায় ট্রাম্পের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামলার পরবর্তী ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে দেশটি।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এই ঘটনাকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। এক্স-এ দেয়া এক বার্তায় তিনি বলেছেন, মার্কিন রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর আক্রমণ একটি ঘৃণ্য কাজ।
ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টোলটেনবার্গও হামলার নিন্দা জানিয়ে ট্রাম্পের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। এক্স-এ তিনি লিখেছেন, আমাদের গণতন্ত্রে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। ন্যাটোর সহযোগীরা আমাদের স্বাধীনতা ও মূল্যবোধ রক্ষায় একসঙ্গে কাজ করে যাবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : সবুজ বালা
স্বত্ব © আলোকিত জনপদ মিডিয়া ২০২৪