প্রিন্ট এর তারিখঃ অক্টোবর ৩, ২০২৫, ৭:৫৭ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ৮, ২০২৪, ১২:৪৩ পি.এম
মায়ের গান শুনতে শুনতে পৃথিবীতে আসছে সন্তান !

ওটিতে এমন অভিজ্ঞতা আমার প্রথম। মায়ের গান শুনতে শুনতে পৃথিবীর আলো দেখছে তার সন্তানও। সুরশ্রীর কলমে ধরা পড়লো সেই গল্প।
ডেলিভারি জার্নি
ভগবানের অশেষ কৃপায় এবং গুরুজনদের আশীর্বাদে ও আমার কাছের সব মানুষের সাপোর্টে 25 ফেব্রুয়ারি আমি একটি সুস্থ মেয়ে সন্তানের জন্ম দিই। মেয়ের নাম আহিরি রায়। আহিরি হওয়ার কিছুক্ষণ আগের এই ভিডিও। সেই ডেলিভারি নিয়েই কিছু কথা শেয়ার করছি।
[embed]https://youtu.be/71C9me5PIyc?si=zx0bOmY0ytSd88_X[/embed]
25 ফেব্রুয়ারি আমি প্রসব ব্যথা নিয়ে ভর্তি হই। তারপর আমাকে লেবার রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার কিছু সমস্যা ছিল বলে সিজারিয়ান সেকশনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। একজন মিউজিক থেরাপি প্র্যাকটিসনার হিসেবে বেশ কিছু রোগীর সঙ্গে মিউজিক থেরাপি করার অভিজ্ঞতা ছিল আমার। যেদিন মেয়ে হল সেদিন আমি নিজেই রোগী হয়ে নিজের ওপর মিউজিক থেরাপি করি। OT রুমে কষ্ট, ভয় সব মিলিয়ে একটা অদ্ভুত সিচুয়েশন ছিল তার মধ্যে ছিল আনন্দ ও।
কারণ আর কিছুক্ষণ পরেই আমার সন্তান জন্ম নেবে। খুব ইচ্ছে হচ্ছিল গান গেয়ে তাকে স্বাগত জানানোর। তাই ডাক্তার বাবুদের অনুমতি নিয়ে গান শুরু করলাম। যতক্ষণ অপারেশন হয়েছে আমি গান করে গেছি। আমাকে দেখগে প্রায় সবাই বলত, আমার নাকি ছেলে হবে। আমি চাইতাম, একটা সুস্থ বাচ্চা হোক আর মেয়ে হলে তো খুবই ভাল। ডেলিভারির পর যখন ডাক্তার বললেন আমার মেয়ে হয়েছে তখন আনন্দে চোখ থেকে জল এসে গিয়েছিল।
আরো ভিডিওতে দেখুন:
আমার গায়নিকোলোজিস্ট ছিলেন ডা: ইন্দ্রনীল সাহা। এমন মানবিক ডাক্তার আমি জীবনে খুব কম দেখেছি। প্রথম দিন চেক আপে গিয়েই ওনার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছিল আমরা ডাক্তার বাবুর খুব কাছের মানুষ। খুব পজিটিভ ভাইব পেতাম ওনার কাছে গিয়ে। কখনও কোনো অহেতুক টেস্ট করাতেন না। আমাদের ইচ্ছে ছিল নরমাল ডেলিভারি হোক। উনিও সেটাই চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার কিছু সমস্যা হওয়ায় আর তা করা সম্ভব হয়নি।
কলকাতায় খুব কম ডাক্তারই চান, নরমাল ডেলিভারি করাতে। উনি কিন্তু চেয়েছিলেন। আমার আনেস্থেশিওলজিস্ট ছিলেন ডা: আনন্দ শর্মা, খুব ভাল মনের মানুষ। ওনার কাজের সময়ও মিউজিক থেরাপি করেন। যেমন প্রথম যখন এপিডিউরাল দিতে আসেন তখন ভজন চালিয়ে সঙ্গে গাইতে গাইতে কথা বলতে বলতে ইনজেকশন দেন। রোগী হিসেবে আমার মিউজিক থেরাপির অভিজ্ঞতা হয়। তখন কষ্ট হলেও মনটা ডাইভার্ট হয়ে যাচ্ছিল। পিডিয়াট্রিশিয়ান ছিলেন ডা: লোকেশ পান্ডে। ইনিও একজন খুব অভিজ্ঞ ডাক্তার।
আমি একটা কথা বলতে চাই যেহেতু নরমাল ডেলিভারির ব্যথা অনেক কাছ থেকে দেখেছি তাই বলতে পারি নরমাল আর সিজারিয়ান সেকশন দুটো আলাদা পদ্ধতি। একটার সঙ্গে অন্য টার তুলনা হয় না। নরমাল হলে আগে কষ্ট হয় ডেলিভারির পর তেমন কষ্ট হয়না।
আর সিজারিয়ান সেকশনে বাচ্চা হওয়ার পর যেন নতুন করে হাঁটতে শিখেছি, সোজা হয়ে শিখেছি বেশ কিছুটা সময় লেগেছিল। বসে থাকতেও কষ্ট হত। বাচ্চা কাঁদলেও বেশিক্ষণ কোলে নিয়ে রাখতে পারতাম না যেন। তাই আমার মনে হয়েছে ডেলিভারির পদ্ধতি কোনোটাই পেনলেস নয়।
ঘটনাস্থল- পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।
সম্পাদক
এড. গৌরাঙ্গ বসু (ট্রিপল এম.এ)
প্রকাশক
সবুজ বালা
© ২০২৫ আলোকিত জনপদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত