কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের দিঘলকান্দি গ্রামে গতকাল রবিবার(৩ ডিসেম্বর) ভোর রাতে জামাল মোল্লা (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জামাল মোল্লা দিঘলকান্দি গ্রামের মৃত আজগর মোল্লার ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক বিভিন্ন রোগে অসুস্থ ছিলেন। জামাল মোল্লার স্পাইনাল কর্ডে জটিলতার কারণে ঠিক মতো হাঁটাচলা করতে পারতেন না। আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় উন্নত চিকিৎসাও করাতে পারেননি। এছাড়াও তার হার্টের সমস্যা ছিলো বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রবিবার দিঘলকান্দি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দিঘলকান্দি গ্রামের মোল্লা ও সরদার গোষ্ঠী একটি প্যানেল ঘোষণা করে। তাদের বিপক্ষে মন্ডল গোষ্ঠী অপর একটি প্যানেল ঘোষণা করে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘোষিত দুই প্যানেলের মধ্যে কয়েকদিন ধরেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
গত শনিবার(২ ডিসেম্বর) বিকেলে দিঘলকান্দি ইজ্জত মোড়ে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র দুই পক্ষের কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মোল্লা গোষ্ঠীর লোকজন কাদের মোল্লা নামে এক ব্যক্তির নির্দেশে রাত ১১ টার দিকে মন্ডল গোষ্ঠীর লোকজনের উপর হামলা করে। এসময় আবারও দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। তাৎক্ষনিকভাবে পুলিশের উপস্থিতির কারণে বড় ধরনের কোন সংঘর্ষের আগেই দুই পক্ষ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
এদিকে গতকাল রবিবার ভোর রাতে জামাল মোল্লার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মোল্লা গোষ্ঠীর লোকজন প্রচার করতে থাকে গতকাল রাতে সংঘর্ষের ঘটনায় সে মৃত্যুবরন করেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জামাল মোল্লা সোজা হয়ে হাঁটাচলা করতে পারেন না। সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার মতো শারীরিকভাবে তিনি অক্ষম। রবিবার ভোর রাতে জামাল মোল্লা তার নিজ বাড়িতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার পরিবারের সদস্যরা মাথায় পানি দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করে। এসময় হাসপাতালে নেওয়ার আগেই বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। জামাল মোল্লার স্বাভাবিক মৃত্যুকে হত্যা বলে প্রচার করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মোল্লা গোষ্ঠীর লোকজন জামাল মোল্লার স্বাভাবিক মৃত্যুকে হত্যাকান্ড বলে প্রচার করে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার পাশাপাশি এলাকায় লুটপাট চালানোর পায়তারা করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ শনিবার বিকেল থেকে মোল্লা গোষ্ঠীর লোকজন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে উস্কানি দিয়ে আসছিল।
এবিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। গতকাল সন্ধ্যা থেকে ঐ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ভোররাতে জামাল মোল্লা নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে। বর্তমানে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ রবিবার সন্ধ্যায় দিঘলকান্দি গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
মারা যাওয়া জামাল মোল্লার লাশ পোষ্ট মর্টেম রিপোর্টের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসা হলে সুরতাহাল প্রতিবেদনে প্রাথমিকভাবে মারা যাওয়া ব্যক্তির শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। দৌলতপুর থানা পুলিশ মারা যাওয়া ব্যক্তির বাড়ি থেকে লাশ উদ্ধারের সময় প্রাথমিকভাবে যে প্রতিবেদন তৈরী করে সেখানেও মারা যাওয়া ব্যক্তির গায়ে কোন ধরনের আঘাতের চিহ্ন নেই বলেও উল্লেখ রয়েছে।
মারা যাওয়া ব্যক্তি জামাল মোল্লার লাশ নিয়ে দিঘলকান্দি গ্রামের একটি সংঘবদ্ধ চক্র নোংরা রাজনীতি করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। চক্রটি জামাল মোল্লার স্বাভাবিক মৃত্যুকে হত্যাকান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে। সুযোগ সন্ধানী চক্রটি এর আগেও মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ নিয়ে দিঘলকান্দি গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে থেকে চাঁদা আদায়সহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত ছিলো বলেও অভিযোগ আছে। এসব ঘটনায় এলাকাবাসী জোটবদ্ধ হয়ে চক্রটিকে গনধোলাই দিয়ে এলাকা ছাড়া করে।
সম্পাদক
এড. গৌরাঙ্গ বসু (ট্রিপল এম.এ)
প্রকাশক
সবুজ বালা
© ২০২৫ আলোকিত জনপদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত