সাভার উপজেলার সদর ইউনিয়নে ইয়াবা ও গাঁজাসহ ইসরাফিল অপুকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। একই সাথে গ্রেপ্তার হয়েছে তার প্রেমিকা ও কথিত স্ত্রী লিজা আক্তার। তাদের উভয়ের কাছ থেকে মোট ২ কেজি গাঁজা ও ২০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার গোয়েন্দা পুলিশ।
২৫ শে মে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অফিসার ইনচার্জ রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব। এর আগে গতকাল বুধবার গভীররাতে সাভার পৌর এলাকার মজিদপুর মহল্লা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত ইসরাফিল অপু সাভার সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কর্মী সে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সোহেল রানার হাত ছাত্রলীগে যোগ দেন।
সে ভোলা জেলার সদর উপজেলার মাঝিরহাট গ্রামের মৃত ইউনুছ আলীর ছেলে। সে বর্তমানে সাভার পৌরসভার মজিদপুর এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১ কেজি গাঁজা ও ১২০ পিস ইয়াবা। অপরজন তার মাদক ব্যবসার সহযোগী প্রেমিকা ও কথিত স্ত্রী লিজা আক্তার (২৬)।
তিনি বি-বাড়ীয়া জেলার কসবা থানার ফুল মিয়া ওরফে আলমগীর কবিরের মেয়ে। তার কাছ থেকে ১ কেজি গাঁজা ও ৮০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। ইসরাফিলের বিরুদ্ধে এর আগেরও মাদক চাঁদাবাজিসহ ৩টি মামলা ও লিজার বিরুদ্ধে রয়েছে ৪টি মামলা। ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। গত ৬ মার্চ রাতে ১০ কেজি গাঁজাসহ গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিনে বেরিয়ে আবারও মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছিল ইসরাফিল।
পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার রাতে মাদক ব্যবসায়ী ইসরাফিল ও তার মাদক কারবারের সহযোগী লিজাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসময় তাদের কাছ থেকে মোট ২ কেজি গাঁজা ও ২০০ পিজ ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা পুলিশ জানান।
ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অফিসার ইনচার্জ রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব বলেন, ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোবাশ্শিরা হাবিব খান এর নির্দেশ ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। নিয়মিত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। যত বড় শক্তিশালী ব্যক্তিই হোক না কেনো মাদকের সাথে জড়িত থাকলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
মাদক নিমূলে সকলকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতারও আহ্বান জানান তিনি। এবিষয়ে সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক বলেন, ইসরাফিলের সাথে ছাত্রলীগের সম্পর্ক নেই। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে অপরাধে জড়িত থাকার বিষয়টিও তিনি অবগত নন বলেও জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানায়, সাভার সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সোহেল রানার সহযোগিতায় মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে ইসরাফিল। মাদক বিক্রির সুবাদে গাঁজা বিক্রেতা লীনা বেগমের মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জাড়িয়ে এখন স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বেড়ান তারা।
সাভারের মজিদপুর মহল্লায় সাভার সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নামে অস্থায়ী কার্যালয় খুলে সেখানে বসে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক সরবারহ করত ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মীরা। সেই কার্যালয়ের পার্শ্ববর্তী বিরুলিয়া সড়কে বিভিন্ন পরিবহন থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করত তারা।
পরে এক কিশোরীকে ধর্ষণের দায়ে সাভার সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের পর সেই কার্যালয় ছেড়ে দিলেও বিভিন্ন ডিলারের মাধ্যমে মাদক বিক্রি করে আসছে তারা। এখন পর্যন্ত সাভার সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজারুল ইসলাম রুবেলের সান্নিধ্যে থাকায় বহাল তবিয়তে রয়েছে এই চক্রটি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রুবেলের সাথে নিজেদের ছবি পোস্ট করে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে থাকেন অপরাধীরা। রুবেল সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম রাজীবের স্ত্রীর বড় ভাই। তিনি সদ্য আওয়ামীলীগে যোগদান করে বাগিয়ে নিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ।
তবে এসব ছবি নিয়ে এখন চলছে আলোচনা ও সমালোচনা। এ ব্যাপারে জানতে সাভার সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম রুবেলের মুঠোফোনে একাধিক বার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য গত ৬ মার্চ রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাভারের রেডিও কলোনির নয়াবাড়ি মহল্লা থেকে ১০ কেজি গাঁজাসহ গ্রেপ্তার হয় ইসরাফিল। পরে জামিনে এসে আবারও মাদক ব্যবসা পরিচালনাকালে বুধবার রাতে আবারও তাকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
সম্পাদক ও প্রকাশক : সবুজ বালা
© 2024 - Alokitojanapad.com. প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত