হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে এক সময়ের খরস্রোতা ঐতিহ্যবাহী করাঙ্গী নদী। সম্প্রতি এই নদীর খনন কাজে উঠেছে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।
দখল আর দূষণে একসময়ের খরস্রোতা করাঙ্গী নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে এবং সেটি এখন ছোট্ট একটি নালায় পরিণত হয়েছে। যে কারণে শুষ্ক মৌসুমে হাওর, খাল-বিল ও নালা শুকনো থাকায় বোরো চাষাবাদে পানির জন্য হাহাকার করেতে হয় হাজার হাজার কৃষকদের।
বোরো চাষাবাদের সময়ে হাওরে গেলে কিংবা নদীগুলো পরিদর্শন করলে এমন দৃশ্য দেখা মিলবে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার নদী ও কৃষিক্ষেতের। এরই প্রেক্ষিতে সরকারি উদ্যোগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে করাঙ্গী নদী খনন করার বরাদ্দ হয়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নদীপারের বাসিন্দাদের দাবি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৯কোটি ১৭লাখ ৩৮হাজার ২শ ৩৬ টাকা খনন কাজের সিংহভাগই লুটপাট হয়েছে। অন্যদিকে খনন কাজ যথাযথ না হওয়ায় নদী তীরবর্তী মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। এই খনন কাজে চলছে নানা অনিয়ম।
সরজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েক জন জানান, বাহুবল উপজেলায় নদীর দুই তীরে রয়েছে অসংখ্য বাড়িঘর ও দোকানপাট। এসব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেয়ার হুমকি দিয়ে খননের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের দায়িত্বে থাকা লোকদের সাথে স্থানীয় কতিপয় লোক মিলে চলছে চাঁদাবাজি।
এদিকে নদীর তলদেশ খনন না করে নদীর তীরের পাশে সামান্য দায়সারা মাটি কাটা হচ্ছে। নদীর মূল অংশতে কোন মাটি কাটা হচ্ছে না। এলাকার মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের গরীব লোকজন টাকা দিতে না পারায় তাদের ভাঙ্গনকৃত নদীর তীরও খনন করে ফেলা হয়েছে। যেকোন সময় নদীতে পানি আসলে উপজেলার শতাধিক ঘর-বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে বাহুবলে ১৯কোটি ১৭লাখ ৩৮হাজার ২শ ৩৬ টাকার নদী খনন প্রকল্পে চরম অনিয়মের অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, দরপত্রের শর্ত মানছে না সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনমনে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও উত্তেজনা। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি নদী নাম 'করাঙ্গী '।
কথিত আছে, এক সময় এ নদী দিয়ে বড় বড় মালবাহী নৌকা চলাচল করত। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল এটি। কালের বিবর্তনে নদীটি দীর্ঘদিন আগে থেকেই প্রায় যেন মৃত অবস্থায় রয়েছে।
সম্প্রতি জাতীয়ভাবে নদী পুনঃখনন প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এরই অংশ হিসাবে ‘করাঙ্গী’ নদী খননে ১৯কোটি ১৭লাখ ৩৮হাজার ২শ ৩৬ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। দরপত্রের মাধ্যমে কাজের দায়িত্ব পায় কক্সবাজারের উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী আগামী মে মাসের মধ্যেই বাস্তবায়ন হওয়ার কথা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পের কাজে চরম অনিয়ম করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। খননের গভীরতা ও প্রস্থে হচ্ছে দরপত্রের শর্ত লঙ্ঘন। কোথাও গভীরতা হচ্ছে বেশি, কোথাও কম। কোথাও প্রস্থ হচ্ছে সরু, আবার কোথাও প্রশস্থ। ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা খালের মধ্যে চলে যাওয়ার অভিযোগও করছেন কেউ কেউ।
অন্যদিকে, অনেক প্রভাবশালীর অবৈধ স্থাপনা কৌশলে বাঁচিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় স্থানীয় জনমনে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও উত্তেজনা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল আহমেদ কুটি বলেন, খননকাজে ঠিকাদার চরম অনিয়ম করেছেন। নদী খনন করে মাটি নদীর তীরে এলোমেলো ভাবে ফেলে রাখেন এবং নদীর মাটি নদী তীরের রাস্তায় না দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছেট বিক্রিও করেছেন। কোথাও কোথাও রাস্তার পাশ খাড়াভাবে খনন করায় রাস্তায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। খননকৃত মাটি নদী তীর বর্তী বাসিন্দাদের বসতবাড়ির সম্মুখে ড্রেসিং না করে উঁচু টিলার মতো করে রাখেন। চলাচলের স্বার্থে স্থানীয় বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে নিজস্ব অর্থায়নে তা ড্রেসিং করতে হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান জানান, ঠিকাদার নদীর চর খনন করে নদীর তীরে মাটি দিচ্ছে না। ঠিকাদার সিডিউল মোতাবেক কাজ না করে ব্যাপক ভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে । তবে ঠিকাদারকে সিডিউল মোতাবেক কাজ করার জন্য কঠোর নিদের্শনা প্রদান করা হলে ঠিকাদারতা মানছে না!
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহুয়া শারমিন ফাতেমা বলেন, এ বিষয় নিয়ে আমি গতকাল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি, তিনি এখনো আমাকে কিছু জানাই নাই । এছাড়া এইটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ ওরাই ভালো বলতে পারবে ।
এছাড়া আমি করাঙ্গী নদী খননে অনিয়ম সম্পর্কে বিভিন্ন মহল হতে জেনেছি তবে এলাকার পক্ষে কোন লিখিত অভিযোগ আসে নাই।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, কয়েক দিন আগেও আমি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছি। এতে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।
কাজ শেষ হওয়ার পর ‘লেভেল মেশিন’ দিয়ে মাপা হবে। যতটুকু কাজ হবে ততটুকুরই বিল পাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বেশি কম কাটলে জরিমানা করা হবে । মাটি গুলো একটু শুকিয়ে গেলে ডেসিং করা হবে । ডেসিং যদি সে না করে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।এছাড়া আমরা নিয়মিত ভিজিট করতেছি।
সম্পাদক
এড. গৌরাঙ্গ বসু (ট্রিপল এম.এ)
প্রকাশক
সবুজ বালা
© ২০২৫ আলোকিত জনপদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত