গোপালগঞ্জে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের জমিতে গড়া যুবলীগ নেতার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন সওজ'র কর্মকর্তারা। এ সময় সওজ-এর ৪কর্মকর্তাসহ
৬ জন আহত হয়েছেন। অভিযানে থাকা সরকারি গাড়ি ভাংচুর করেছে হামলাকারীরা।
গত বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) দুপুরে জেলা শহরের ঢাকা—খুলনা মহাসড়কের বেদগ্রাম গোলচত্ত্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কুমারেশ বিশ্বাস বৃহস্পতিবার রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানায় বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। অভিযানে নেতৃত্বে দেওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অনিন্দিতা রায় বলেন, গোপালগঞ্জ জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শেখ সাহাবুদ্দিনের স্থাপনা উচ্ছেদের সময় এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।
হামলায় আহত অন্য ব্যক্তিরা হলেন গোপালগঞ্জ সওজের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কুমারেশ বিশ্বাস, উপ-সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান, বিল্লাল হোসেন, মো. আনোয়ার, সার্ভেয়ার সোহাগ ও এস্কেভেটর চালক। আহত ব্যক্তিদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ সময় অভিযানে নেতৃত্বে দেওয়া সওজ খুলনা জোনের এষ্টেট ও আইন কর্মকর্তা অনিন্দিতা রায়ের গাড়িতেও হামলা চালানো হয়।
গোপালগঞ্জ সওজ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, টেকেরহাট—গোপালগঞ্জ—ঘোনাপাড়া এবং গোপালগঞ্জ—কোটালীপাড়া—পয়সারহাট সড়ক নির্মাণ ও প্রশস্তকরণের লক্ষ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নোটিশ, মাইকিং ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ঘোষিত তারিখ গত ২৯—৩১ মার্চ টেকেরহাট—গোপালগঞ্জ সড়কে উচ্ছেদ অভিযান চালায় সওজ।
৩১ মার্চ সকাল ১০টার দিকে গোপালগঞ্জ—কোটালীপাড়া—পয়সারহাট সড়ক—সংলগ্ন বেদগ্রাম গোলচত্ত্বর এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি কাঁচা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। পরে দুপুরের দিকে স্থানীয় যুবলীগ নেতা শেখ সাহাবুদ্দিনের দখলে থাকা সওজের প্রায় ৩০ শতক জমিতে অবৈধভাবে গড়ে তোলা স্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করা হয়।
এ সময় ২০—২৫ জন যুবক সওজের কর্মকর্তা ও উচ্ছেদ অভিযানে ব্যবহৃত এস্কেভেটর উদ্দেশ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। ইটের আঘাতে সওজের কর্মকর্তারা ও এস্কেভেটর চালক আহত হন। এছাড়া সওজের তিনটি গাড়ি ভাংচুর করে হামলাকারীরা। পরে খবর পেয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশের একটি দল এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অনিন্দিতা রায় বলেন, ৩১ মার্চ গোপালগঞ্জ সদরের বেদগ্রামে অভিযান পরিচালনা করা হয়। বেশ কিছু স্থাপনা উচ্ছেদের পর স্থানীয় যুবলীগ নেতা শেখ সাহাবুদ্দিনের ভবন ভাঙা শুরু করি। কিছু সময় পর সাহাবুদ্দিন এসে আমাকে বলেন আরও দুই দিন সময় দিতে। অথচ তাঁকে আমরা বারবার নোটিশ দিয়েছি।
এমনকি ওই সকালে গিয়ে আমি আমাদের এক কর্মকর্থাকে দিয়ে তাঁকে বলিয়েছি। এতে তিনি কর্ণপাত করেননি। অনিন্দিতা রায় আরও বলেন, ‘তার ভবন ভাঙার সময় আমি কিছু সময়ের জন্য গাড়িতে গিয়ে বসি। একপর্যায়ে দেখতে পেলাম কয়েকজন যুবক এলাপাতাড়িভাবে ইট—পাটকেল ছুড়ছে। এতে সওজের পাঁচ কর্মকর্তা ও এস্কেভেটর চালক আহত হন। সওজের তিনটি গাড়ি ভাংচুর করে তারা। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাই। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
যুবললীগ নেতা শেখ সাহাবুদ্দিন এ বিষয়ে আমাদের প্রতিবেদককে বলেন, ‘টেকেরহাট—গোপালগঞ্জ—ঘোনাপাড়া এবং গোপালগঞ্জ—কোটালীপাড়া—পয়সারহাট সড়কের দুই পাশের দোকান মালিকদের নোটিশ করলেও আমাদের কোনো নোটিশ করেনি। হুট করেই ভাঙতে চলে এসেছে। আমি তাঁদের অনুরোধ করেছিলাম দুই দিন সময় দিতে।
তাঁরা আমাদের সময় না দিয়ে স্থাপনাগুলো ভেঙে দিয়েছেন। ওই সময় যাদের দোকান ভেঙেছেন, তাদের দোকানের কর্মচারীরা হয়তো সড়ক বিভাগের গাড়িতে ইটপাটকেল ছুড়েছেন। এর বেশি কিছু জানি না।’
গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. খায়রুল আলম এ প্রতিবেদনে বলেন, সওজ-এর পক্ষে অভিযোগের ভিত্তিতে ওই রাতেই মামলা করা হয়েছে। মামলায় আসামিরা অজ্ঞাতনামা। এটিকে বিভিন্নভাবে যাচাই—বাছাই করে আসামিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
সম্পাদক
এড. গৌরাঙ্গ বসু (ট্রিপল এম.এ)
প্রকাশক
সবুজ বালা
© ২০২৫ আলোকিত জনপদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত