লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা ২০ নং চররমনী মোহন ইউনিয়ন ৪ নং ওয়ার্ডে জেলে আবদুস শহিদকে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে ষড়যন্ত্রের জালে ছৈয়াল পরিবারকে জড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেন এলাকাবাসী।
হত্যার অভিযোগে স্থানীয় চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল ও তার দুই ছেলে আবু সুফিয়ান ও ইয়াকুব ছৈয়াল সহ ১৩ জনকে আসামী করে মামলা করেছেন নিহতের স্ত্রী কুলছুম বেগম।আরো১০/ ১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার পশ্চিম চররমনী এলাকার জেলে আবদুস শহিদ (১৪ জুন) সোমবার রাত ১০টার দিকে শশুরবাড়ি থেকে নিজ বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন।
ওই এলাকার খাল পাড়ে সে পৌঁছলে আবদুল হক লাড়ীর ঘরে চুরির অভিযোগে আবদুস শহিদকে গনধোলাই দেয় স্থানীয়রা। এতে গুরুতর আহত অবস্থায় খালপাড়ে মৃতভেবে ফেলে যায়। এরপর সে বাড়িতে না যাওয়ায় খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে পরেরদিন সকালে সুপারী বাগানে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পরিবার।
পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করার পর বুধবার বিকেলে মারা যায় আবদু শহিদ। রাতে সদর থানায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন আবদুস শহিদের স্ত্রী কুলছুম বেগম। নিহত আবদুস শহিদের মা ছকিনা বেগম ও ভাই নাছির উদ্দিন জানান, আবদুস শহিদকে চুরির অপবাধ দিয়ে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
আবদুস শহিদ চুরি করেনি। তাকে মিথ্যা অপবাধ দিয়ে স্থানীয় আব্দুল রারী পুত্র শাকিল রারী, আক্কাস রারীর পুত্র দাদন রারী, নান্নু রারী, রশিদ রারীর পুত্র শরীফ, কালা ডালী, ইলিয়াস গাজী, সুমন বয়াতী সহ অজ্ঞাত কয়েকজন তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। আবদুস শহীদের ভাই নাসির উদ্দিনকে আবু ইউসুফ ছৈয়াল, আবু সুফিয়ান, ইয়াকুব ছৈয়াল সহ ছৈয়াল পরিবারের লোকজনের উপস্থিতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমরা চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল ও তার পরিবারের লোকজনদের নাম মামলায় দেখে অবাক হয়ে গেলাম।
আমি এই নামগুলো কেটে দেওয়ার জন্য বলাতে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিল আমার ভাবির সাথে যাওয়া কয়েকজন লোক।পরিশেষে আমি কুলছুম ভাবীকে বললাম চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের নাম দিলেন কেন।কুলসুমা ভাবি প্রতি উত্তরে বলেছিলেন আমি কিছু জানিনা আমার মাথা ঠিক নেই, ওদেরকে দায়িত্ব দিয়েছি ওরা যেভাবেই দেয় এভাবেই চলুক।তার পরেও আমি তাদেরকে বারণ করেছি যেন চেয়ারম্যানসহ তার পরিবারে নিরাপরাধ লোকদের নাম গুলো বাতিল করার জন্য।
কিন্তু তারা তা না করে আমাকে উল্টো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়।নাসির গণমাধ্যমকর্মীদের আরও বলেন এটা ষড়যন্ত্রমূলক ছৈয়াল পরিবারকে ফাঁসানো হয়েছে। নিহত আবদুস শহীদের বোন রোজিনা আক্তার বলেন,আমার ভাইকে কে বা কাহারা মেরেছে আমরা জানিনা তবে ছৈয়াল পরিবারের সাথে আমাদের কোন বাক-বিতণ্ডা নেই।রোজিনা আরো বলেন, যারা আমার ভাবি কুলছুমকে দিয়ে ছৈয়াল পরিবারকে মামলায় জড়ালেন আমি তাদের বিচার চাই।
যারা আমার ভাইকে মেরেছে আমি তাদের বিচার চাই। নিরাপরাধী কাউকে এখানে জড়ানো ঠিক হয়নি। একটা গোষ্ঠী আমাদের সাথে ছৈয়াল পরিবারের দ্বন্দ্ব এবং দূরত্ব হোক এটা চাই।তিনি আরো গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে প্রশাসনের প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করেন যেন কোন নিরপরাধী ব্যক্তির এই মামলায় ফেঁসে না যান।যারা প্রকৃতপক্ষে আব্দুস সহিদ কে মেরেছে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন মৃত আব্দুস শহীদের বোন রোজিনা আক্তার।
আবদুস শহীদের নিকটাত্মীয় পিয়ারা বেগম গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন,আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।আবদুস শহিদ কোন অপরাধ করে থাকলে তাকে আইনের কাছে সোপর্দ করতো কিন্তু এভাবে আইনকে নিজ হাতে নিয়ে তাকে মেরে ফেলা ঠিক হয়নি।অন্যদিকে ছৈয়াল পরিবার সম্পর্কে তিনি বলেন, ছৈয়াল পরিবারের বাড়ি থেকে ঘটনাস্থল পর্যন্ত প্রায় ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার দূরত্ব।
তাছাড়া আবদুস শহীদের পরিবারের সাথে ছৈয়াল পরিবারের সাথে পূর্বে কোন দ্বন্দ্ব ছিল না। আবদুস শহীদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কিছু কুচক্রী মহল চেয়ারম্যান পরিবারকে হেনস্ত করার পায়তারা চালাচ্ছে। আমরা আবদুস শহীদকে যারা মেরেছে তাদের বিচার চাই এবং কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন এই মামলায় হয়রানি না হয় সে জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করি।
এলাকাবাসী ও স্থানীয়দের দাবি,আব্দুস শহীদ ও তার স্ত্রী প্রকৃতপক্ষে চুরিদারি করতেন।আব্দুস শহীদ ও তার স্ত্রী কুলসুমা বেগমের নামে লক্ষ্মীপুর মডেল থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।বর্তমানে ও তার স্ত্রী কুলসুমা বেগম চুরির মামলায় জামিনে আছেন। তবে আইনকে যারা হাতে তুলে নিয়ে শহীদকে মেরেছে আমরা তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করি।
পাশাপাশি নিরাপরাধ চেয়ারম্যান পরিবারকে এখানে জড়িয়ে আসল খুনিদের বাহিরে রেখেছে এজন্য আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।পাশাপাশি মৃত আব্দুস শহীদের স্ত্রী কুলসুমা বেগম কে দিয়ে চেয়ারম্যান পরিবারকে যাহারা এই মামলায় জড়িয়ে ছিল তাদের মুখোশ উন্মোচন করা হোক এটাই আমাদের সকলের দাবি।
লক্ষ্মীপুর মডেল থানার ওসি জসিম উদ্দিন জানান, আবদুস শহিদ হত্যাকান্ডের ঘটনায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ২৭জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে পরিকল্পিত হত্যা না চুরির করার ঘটনায় গনপিটুনিতে মারা গেছে এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।তবে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানি হবেনা।
আলোকিত জনপদ ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
https://www.facebook.com/alokitojanapad
দেশ বিদেশের সব খবর সবার আগে জানতে আলোকিত জনপদ ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন।
ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই আলোকিত জনপদ এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন।
বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
আলোকিত জনপদ এর ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন
সম্পাদক
এড. গৌরাঙ্গ বসু (ট্রিপল এম.এ)
প্রকাশক
সবুজ বালা
© ২০২৫ আলোকিত জনপদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত