শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৮ অপরাহ্ন

সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বিক্রি কম, শঙ্কায় তরমুজ ও বাঙ্গি চাষিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : রবিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২১
  • ২২৯ Time View

চৈত্রের শুরুতেই নাটোরের বাজারে উঠেছে গ্রীষ্মকালীন ফল তরমুজ। তবে শুরুর আকাশচুম্বী দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে। করোনা সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় কমেছে তরমুজের কেনাবেচা। তাই এবার বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন তরমুজ চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তাদের উদ্বেগ, করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে ক্রেতার অভাবে ক্ষেতেই পচবে তরমুজ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানা যায়, চলতি বছর জেলার সাতটি উপজেলায় ৫৯৯ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে চলনবিল অধ্যুষিত গুরুদাসপুর, সিংড়া ও সদর উপজেলায় আবাদ বেশি হয়েছে। জেলায় এবার তরমুজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪০ মেট্রিক টন। শিলাবৃষ্টি না হলে তরমুজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তরমুজ চাষিরা বলছেন, তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে এবার করোনা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। অন্য বছরগুলোতে চৈত্রের শুরু থেকে মাঝামাঝি কয়েক দফা কালবৈশাখী ঝড় বা শিলাবৃষ্টি হলেও এবার তা হয়নি। তাই তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে। ফলে কৃষক চৈত্রের শুরু থেকেই তরমুজ বিক্রি শুরু করেছেন। প্রথম সপ্তাহে বাজার ভালো থাকলেও করোনার প্রকোপ বাড়ায় হঠাৎ দাম অর্ধেক পড়ে গেছে তরমুজের। এতে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা তরমুজ কেনা সীমিত করেছেন। দাম কমার কারণে ক্ষেতে থাকা বাকি তরমুজের বিক্রি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

অপরদিকে, তরমুজ পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরাও সমান উদ্বিগ্ন করোনা সংক্রমণ নিয়ে। তারা বলছেন, বৈশাখ শুরুর এক মাস আগে থেকে ভোক্তারা তরমুজ কেনা শুরু করেন। শুরুর দিকে অবস্থাসম্পন্ন ভোক্তারা বেশি দামে হলেও তরমুজ কেনায় চাষিদের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক উৎপাদনে যান অনেক পাইকার। এবারও তার ব্যত্যয় হয়নি। ভালো দামের আশায় কোনো কোনো পাইকার বাজারে তরমুজ সরবরাহ শুরু করেছেন। বিক্রি বাড়ার আশায় অস্থায়ী মোকামগুলোতে তরমুজ মজুদ করা হচ্ছে। কিন্তু সপ্তাহখানেক চড়া দামে বিক্রি হওয়ার পরই কমতে শুরু করেছে তরমুজের দাম।

তারা আরও বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কায় তরমুজের টাকায় সেসব পণ্য কিনছেন ভোক্তারা। এতে মোকামগুলোতে শুরুতেই বিপুল পরিমাণ তরমুজ অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। পাশাপাশি, করোনা পরিস্থিতিতে ব্যয় কমাতে অন্য জেলার ব্যবসায়ীরা নিজ জেলায় উৎপাদিত তরমুজে ঝুঁকছেন। রফতানির পরিসর সংকুচিত হওয়ায় এবার তরমুজে লোকসান অনেকটাই নিশ্চিত।

শীর্ষ তরমুজ উৎপাদনকারী উপজেলা গুরুদাসপুর, সিংড়া ও নাটোর সদর ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে তরমুজ আসা শুরু হয়েছে। গ্রীষ্মের ফল তরমুজের পসরা সাজিয়ে অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী সড়ক-মহাসড়কের ধারে বসেছেন। গ্রামীণ হাট-বাজারসহ প্রায় সব এলাকার বাজারেই কমবেশি তরমুজ সরবরাহ থাকায় চাষি বা পাইকাররা এলাকার বাইরে তরমুজ নিচ্ছেন না।

jagonews24

গুরুদাসপুরের নাজিরপুর এলাকার তরমুজ চাষি আলতাব হোসেন বলেন, করোনার কারণে গতবার বিক্রির অভাবে ক্ষেতেই পচেছে তরমুজ। গত বছরের শেষ দিকে করোনার প্রকোপ কমায় এবার পাঁচ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ করেছি। কিন্তু এবারও বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় আছি।

তরমুজের পাইকারি ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, চৈত্রের শুরুর দিকে ময়মনসিংহ, গাজীপুর, কুষ্টিয়া থেকে বড় ব্যবসায়ীরা এসে তরমুজ নিয়েছেন। বৈশাখ শুরুর আগের সপ্তাহে আরও বেশি বাইরের ব্যবসায়ীদের আসার কথা। কিন্ত সে তুলনায় এবার বিক্রি অনেক কম।

নাটোর শহরের তরমুজ বিক্রেতা সেলিম রেজা বলেন, এক সপ্তাহ আগে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি তরমুজ। এখন ২০ টাকা কেজিতেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। আমার মতো আরও ছোট ব্যবসায়ী আছেন যারা চাষিদের আগাম টাকা দিয়ে তরমুজের কিনে রেখেছেন। আমরা এখন বিক্রি নিয়ে চিন্তায় আছি।

চলনবিলের তরমুজ ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলাম বলেন, এই মুহূর্তে করোনা না বাড়লে তরমুজের বিক্রি বাড়তো। ক্ষেতগুলোতে এখনো প্রচুর তরমুজ আছে। আবার বাজারেও বিক্রি কম। বাজারের অবিক্রিত তরমুজের সঙ্গে ক্ষেতের তরমুজ যোগ হলে দাম আরও কমে যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার সাহা বলেন, তরমুজের ফলন এ বছর আশাব্যঞ্জক। কিন্ত কাঙ্ক্ষিত বিক্রি নির্ভর করছে ভোক্তার ক্রয় আচরণের ওপর। ভোক্তা কিনলে তরমুজ অবিক্রিত থাকবে না। তাছাড়া পরিস্থিতি বিবেচনায় গ্রীষ্মের শুরুতে চাহিদা কমলেও পরে বিক্রি বাড়তে পারে।

সূএ : জাগো নিউজ ২৪

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category