
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবকিছু এতদিন কেন্দ্রীভূতভাবে ঢাকায় নিয়ন্ত্রিত হতো। সব সিদ্ধান্ত, সব পরিকল্পনা—রাজধানীর চারপাশেই সীমাবদ্ধ থাকত। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি আমিনুল ইসলাম এবার সেই ধারা ভাঙার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তার ভাষ্য, “ঢাকা এখন শুধু হেডকোয়ার্টার।”
দুই দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট কনফারেন্স’-এর সমাপনীতে এই ঘোষণা যেন নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা। দেশের ৬৪ জেলা ও ৮ বিভাগ থেকে আগত প্রতিনিধিরা রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে এই কর্মশালায় অংশ নেন। উদ্দেশ্য স্পষ্ট—ক্রিকেটকে ঢাকার সীমার বাইরে ছড়িয়ে দিয়ে গোটা দেশে বিস্তৃত করা।
আমিনুলের বক্তব্যে স্পষ্ট ছিল বিকেন্দ্রীকরণের মনোভাব—“বাংলাদেশের বিভাগীয় দলগুলো এখন নিজ দায়িত্বে পরিচালিত হবে। তারা নিজেদের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করবে, অবকাঠামো উন্নয়ন করবে। আজ থেকে এই দায়িত্ব আমরা আপনাদের হাতে তুলে দিচ্ছি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল ‘কানেক্ট অ্যান্ড গ্রো’। আমরা কানেক্ট করতে পেরেছি, এখন সময় এসেছে এগিয়ে যেতে।”
এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দেশের আটটি বিভাগে ছোট ছোট ক্রিকেট হেডকোয়ার্টার গড়ে তোলা হবে। স্থানীয় পর্যায়ে ক্রিকেট উন্নয়ন, খেলোয়াড় তৈরি এবং অবকাঠামোগত উন্নতি—সব দায়িত্ব সেসব অঞ্চলের হাতে থাকবে।
কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তিনি বিসিবির উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, “আমরা ক্রিকেটে বিকেন্দ্রীকরণ চাই। ক্রিকেট যেন শহর, গ্রাম ও প্রত্যন্ত এলাকার অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে—যাতে দেশের যেকোনো কোণ থেকে প্রতিভা উঠে আসে জাতীয় দলে।”
তিনি আরও জানান, সরকার ইতোমধ্যে দেশের অন্তত ১৫০টি মাঠে সিনথেটিক টার্ফ বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে আরও বেশি খেলোয়াড় নিয়মিত অনুশীলনের সুযোগ পান।
বিসিবি সভাপতি আমিনুলও অনুরোধ করেছেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মাঠ সংস্কার এবং সিনথেটিক টার্ফ বসানোর কাজ যেন দ্রুত সম্পন্ন হয়।
দুই দিনের কনফারেন্সে দেশের কোচ, নারী ক্রিকেট উদ্যোক্তা, ক্রীড়া কর্মকর্তা ও জেলা কাউন্সিলরদের মতামত সরাসরি শোনা হয়েছে। মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা থেকে উঠে আসা এই মতামতগুলো বিসিবিকে নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
ঢাকায় বসে ক্রিকেট চালানোর যুগ শেষ। এখন নতুন যাত্রা শুরু হচ্ছে মাঠ থেকে, বিভাগ থেকে, জনগণের কাছ থেকে।