বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৫০ অপরাহ্ন

বিশেষ প্রিজন ভ্যানে ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হলো ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৩৩ Time View

ভোরের আলো তখনও ফুটেনি। যানজটে অভ্যস্ত রাজধানী তখনও তুলনামূলক নিরব। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণজুড়ে টানটান নিরাপত্তা। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ছিলেন বাড়তি সতর্কতায়; পথে পথে ছিল তল্লাশি চৌকি। এমন কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেই সকাল সওয়া ৭টার দিকে ‘বাংলাদেশ জেল-প্রিজন ভ্যান’ লেখা সবুজ রঙের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িটি ট্রাইব্যুনালের ফটকে প্রবেশ করে। এ গাড়িতেই আনা হয় হেফাজতে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে।

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে টিএফআই ও জেআইসি সেলে সংঘটিত গুম-খুন এবং জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলার ৩২ আসামিকে বুধবার ট্রাইব্যুনালে হাজিরের দিন নির্ধারিত ছিল। সে অনুযায়ী হেফাজতে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের আনা হয় ট্রাইব্যুনালে।

সকাল সাড়ে ৭টার দিকে প্রিজনভ্যান থেকে একে একে তাদের নামিয়ে হাজতখানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে তাদের এজলাসে তোলা হয়। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শুরু হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত বিচারিক প্যানেলে।

ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়া সেনা কর্মকর্তারা হলেন—
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, মেজর জেনারেল মোস্তফা সরোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম, কর্নেল মশিউল রহমান জুয়েল, লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল কবির আহম্মেদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী এবং লে. কর্নেল মখচুরুল হক (অব.)।

সেনা কর্মকর্তাদের হাজিরাকে ঘিরে কাকরাইল, মৎস্য ভবন, পল্টনসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে মোতায়েন ছিল বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। ভোর থেকেই ট্রাইব্যুনাল ও হাইকোর্ট মাজারগেট এলাকায় ছিল কঠোর নিরাপত্তা। সেখানে পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও দেখা যায়।

মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম জানান, হেফাজতে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের হাজিরের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। কেউ হাজির না হলে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। আর হাজির হলে ট্রাইব্যুনাল যদি জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন, তবে কোন কারাগারে রাখা হবে তা নির্ধারণ করবে কারা কর্তৃপক্ষ।

এর আগে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় টিএফআই সেলে বিরোধী রাজনীতিক ও ব্যক্তিদের গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয় প্রসিকিউশন। গত ৮ অক্টোবর অভিযোগ দাখিলের পর শুনানি শেষে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আজকের মধ্যে হাজিরের নির্দেশ দেন।

একই দিনে জেআইসি বা ‘আয়নাঘর’ সেলে গুমের অভিযোগে শেখ হাসিনা ও তারেক রহমানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধেও আরেকটি মামলা দায়ের হয়। পাশাপাশি জুলাই-আগস্টের আন্দোলনকালে রাজধানীর রামপুরায় ২৮ জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিজিবি কর্মকর্তা লে. কর্নেল রেদোয়ানুল ইসলামসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়। সব মিলিয়ে তিন মামলায় সেনা কর্মকর্তার সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫।

৯ অক্টোবর সেনা সদর জানায়, ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ দাখিলের পর ট্রাইব্যুনালে শুনানি শুরু হলে প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচারের মুখোমুখি করার আবেদন করেন। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিসহ আজকের মধ্যে হাজিরের নির্দেশ দেন।

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

More News Of This Category