মাদারীপুরে আলোচিত মাদ্রাসা ছাত্রী দীপ্তিকে (১৫) ধর্ষণ ও হত্যা মামলার একমাত্র আসামি ইজিবাইক চালক মো. সাজ্জাদ হোসেন খানকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে মামলার আসামিকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানার আদেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন মাদারীপুর আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শরীফ এ এম রেজা জাকের। এসময় মামলার সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট শরীফ সাইফুল কবীর উপস্থিত ছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাজ্জাদ মাদারীপুর সদর উপজেলার পূর্ব খাগদী এলাকার মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে। তিনি পূর্বেও শিশু হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা খেটে ২০১১ সালে মুক্তি পান।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৩ জুলাই মাদারীপুর শহরের পূর্ব খাগদী এলাকার একটি পরিত্যক্ত পুকুর থেকে অজ্ঞাত এক কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন নিহতের বাবা মজিবর ফকির লাশটি শনাক্ত করেন এবং তার মেয়ে দীপ্তির লাশ বলে জানান। পরে মজিবর ফকির বাদি হয়ে মাদারীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনাটি নিয়ে তদন্তে নামে র্যাব-৮ বাহিনীর সদস্যরা। তাদের তদন্তে বেরিয়ে আসে যে, ইজিবাইক চালক সাজ্জাদ হোসেন খান দীপ্তিকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে।
নিহত দীপ্তি মাদারীপুর সদর উপজেলার চরনচনা গ্রামের মজিবর ফকিরের মেয়ে। তিনি বলাইরচর শামসুন্নাহার বালিকা মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।
র্যাবের তদন্তে জানা যায়, সাজ্জাদ হোসেন পূর্বে শিশু হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন এবং ২০১১ সালে মুক্তি পান। ২০১৯ সালের ১১ জুলাই বৃষ্টির দিনে জেলা শহরের ইটেরপুল থেকে চরমুগরিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে দীপ্তি তার ইজিবাইকে ওঠেন। এসময় অন্য কোনো যাত্রী না থাকার সুযোগে দীপ্তিকে জোর করে পূর্ব খাগদি এলাকায় সাজ্জাদের নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ ও হত্যা করেন। পরে মরদেহ বিদ্যুতের তার দিয়ে বেধে কয়েকটি ইটসহ পুকুরে ফেলে দেন। দুইদিন পর লাশটি ভেসে উঠলে এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও দ্রুত বিচারের দাবিতে ফেটে পড়ে স্থানীয়রা।
দীপ্তির বাবা মজিবর ফকির রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমার মেয়ের হত্যাকারী আজ আইনের কাছে জবাবদিহি করেছে। আমরা এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পেয়েছি।
মামলার পিপি শরীফ সাইফুল কবীর বলেন, মামলায় একমাত্র আসামী সাজ্জাদ হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড এবং দশ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। দীর্ঘ ছয় বছর বিচারিক কার্যক্রম শেষে আদালত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন। এটি ছিল অত্যন্ত নৃশংস একটি হত্যা ও ধর্ষণ মামলা। আমরা রায়ে সন্তুষ্ট।