বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫৬ অপরাহ্ন

মনিরামপুরে করোনাভাইরাসে মৃত্যু হলে মৃতদেহ দাফন ও সৎকার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন

নূরুল হক, মণিরামপুর প্রতিনিধি
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৯ জুন, ২০২১
  • ৩৯০ Time View

মনিরামপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে কেউ মৃত্যুবরন করলে আতংকে যখন স্বজনরাও মৃতদেহ দাফন বা সৎকার করতে ভয় পান-তখন বিনাখরচে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্য সম্মতভাবে মৃতদেহ দাফন ও সৎকার করে চলেছে তাকওয়া ফাউন্ডেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ২ নারীসহ ১৬ জন সদস্য। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব যুবক-যুবতীরা একের পর এক করোনা আক্রান্ত অথবা উপসর্গে মৃত্যুবরন করা মৃতদেহ সৎকার ও দাফন করে গণমানুষের মন জয় করেছেন। জানাযায়, মনিরামপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এবং উপসর্গে এপর্যন্ত প্রায় দেড় শতাধিক নারী-পুরুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃতদেহের সৎকার নিয়ে স্বজনদের মধ্যে দেখা দেয় করোনা আতংক। ফলে মৃতদেহ সৎকার নিয়ে দ্বি-ধায় পড়েন পরিবারের লোকজনসহ স্বজনরা। আর এ সময় মানবতার সেবায় এগিয়ে আসেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাকওয়া ফাউন্ডেশনের সদস্যরা। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মৃতদেহ সৎকার করেন। মল্লিকপুর গ্রামের মোবারক মোড়লের মেয়ে আছিরোন বেগম করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরনের পর তার পরিবারের লোকজন মৃতদেহ দাফন নিয়ে চরম আতংকে পড়েন। আর এ খবর পেয়ে তাকওয়া ফাউন্ডেশনের প্রধান সমন্বয়কারী নাসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে সাইয়েদাতুন নেছা নজু, মুক্তা খাতুন, মাওলানা ইয়াছিন আশরাফ, মাওলানা হাসান আল মামুনসহ ১০ সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বাস্থ্য সম্মতভাবে মৃতদেহ গোসলের পর দাফনের ব্যবস্থা করেন। শুধু তাই নয়, উপজেলার ঘুঘুদাহ গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবেন্দ্র নাথের করোনায় মৃত্যু হলে তার মৃতদেহ সৎকারে পরিবারের লোকজনসহ এলাকার কোন ব্যক্তি এগিয়ে না আসলেও খবর পেয়ে তাকওয়ার এই যুবকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সৎকার করেন। স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী নাসিম উদ্দিন খান এবং আশরাফ ইয়াছিন জানান, তারা বিনা খরচে মানবতার সেবাই নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছেন। করোনা আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর পর মৃতদেহ সৎকার করতে তারা কারোর কাছ থেকে কোন অর্থকড়ি গ্রহন করেননা। এক্ষেত্রে যদি কোন হৃদয়বান ব্যক্তিবর্গ পিপিইসহ করোনা সরঞ্জামাদী দিয়ে সহযোগীতার হাত প্রসারিত করেন তবে সেটা তারা গ্রহন করেন। আশরাফ ইয়াছিন জানান, এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করায় সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, বিএসএমএমইউ (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) এর হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: এমএ ওয়াহাব. বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বাবু, লতিফুর রহমান বাবলু, হাসমত আলী, মৎস্য ব্যবসায়ী হাশেম আলী, গৃহবধু আছিরোন বেগম, জেসমিন আরা বেগম, দেবেন্দ্র নাথ ঘোষালসহ অন্তত: ২০ জন এবং উপসর্গে মৃত্যুবরন করা প্রায় শতাধীক মৃতদেহ বিনা খরচে সৎকার করেছেন। নাছিম উদ্দিন খান জানান, মাঝেমধ্যে তাদের করোনা সুরক্ষা সরঞ্জামাদীর সংকট দেখা দেয়। অবশ্য ইতিমধ্যে যশোর সিটিপ্লাজার চেয়ারম্যান এসএম ইয়াকুব আলী, বিএসএমএমইউএর মেডিকেল অফিসার ডা: মেহেদী হাসানসহ বিভিন্ন হৃদয়বান ব্যক্তিরা তাদেরকে করোনা সুরক্ষা সরঞ্জামাদী সরবরাহ করেন। তাকওয়া ফাউন্ডেশনের সদস্যদের নান্দনিক এ কার্যক্রমকে অভিনন্দন জানিয়ে সিটিপ্লাজার চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী জানান, তাদের এ মানবিক কার্যক্রমকে উৎসাহ দিতে তিনি আরো করোনা সরাঞ্জামাদী সরবরাহের কথা ব্যক্ত করেন। উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তুলসি বসু জানান, তাকওয়া ফাউন্ডেশনের সদস্যদের মানবিক কার্যক্রম চির স্মরনীয় হয়ে থাকবে। তাকওয়া ফাউন্ডেশনের সদস্যদের এ উদ্যোগ অত্যন্ত প্রসংশনীয় উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান জানান, চেষ্টা চলছে তাদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগীতার।

আলোকিত জনপদ .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category